মাত্র ৮৭ দিনে পবিত্র কোরআনের ৩০ পারা মুখস্ত করার গৌরব অর্জন করেছে ১৩ বছর বয়সী সুমাইয়া খাতুন।
সুমাইয়া পাবনার দরসে জামী ন্যাশনাল একাডেমি মাদ্রাসার ছাত্রী।মেয়ের এ সাফল্যে খুশি তার বাবা-মাসহ শিক্ষক সহপাঠি। তারা বলছেন, এটি আল্লাহ প্রদত্ত বিরল প্রতিভা। আল্লাহ তাকে সম্মানিত করেছেন। ভবিষ্যতে একজন দ্বীনদার আলেম ও মুহাদ্দিস হওয়ার ইচ্ছা সুমাইয়ার।
পাবনার সীমান্তবর্তী কুষ্টিয়ার কুমারখালী উপজেলার সাদিপুর ইউনিয়নের চরঘোষপুর গ্রামের কৃষক উজ্জল হোসেন ও শামসুন্নাহার দম্পতির সন্তান সুমাইয়া খাতুন। তিন মেয়ে ও এক ছেলের মধ্যে সুমাইয়া সবার বড়। ছোটবেলা থেকেই অত্যন্ত মেধাবী ছাত্রী সুমাইয়ার স্বপ্ন ছিলো পবিত্র কোরআনের হাফেজ হওয়ার।
সুমাইয়া খাতুনের মা শামসুন্নাহার বলেন, মেয়েকে চার বছর বয়স থেকে লেখাপড়া শুরু করানো হয়। তখন থেকেই সে খুব মেধাবী। চরঘোষপুর নিম্ন মাধ্যমিক বিদ্যালয় থেকে প্রাথমিক সমাপনীতে জিপিএ-৫ পেয়ে উত্তীর্ণ হয় সে। ৬ষ্ঠ শ্রেণিতে পড়া অবস্থায় স্কুল থেকে ভর্তি হয় পাবনার রাধানগরে মাদানিয়া মাদ্রাসায়। এরপর কুষ্টিয়ার ভেড়ামারা উপজেলার বাইতুন নুর আদর্শ মহিলা মাদ্রাসায় ভর্তি হয়। সেখানে কিছুদিন পাঠগ্রহণ শেষে দূরবর্তী হওয়ায় আবার সে ভর্তি হয় পাবনার উম্মে হাবিবা মাদ্রাসায়।
সর্বশেষ কোরআন হেফজ করতে ভর্তি হয় দরসে জামী ন্যাশনাল একাডেমি মাদ্রাসায়। ১৩ বছর বয়সী প্রখর মেধার অধিকারী সুমাইয়া অল্পদিনেই আয়ত্ব করেন পবিত্র কোরআন। মাত্র ৮৭ দিনে সে পবিত্র কোরআনের ৩০ পারা মুখস্ত করে হাফেজ হওয়ার কৃতিত্ব অর্জন করে। সুমাইয়া এবার খোদাইপুর মদিনাতুল উলুম দাখিল মাদ্রাসার অষ্টম শ্রেণীর পরীক্ষার্থী।
সুমাইয়ার বাবা উজ্জল হোসেন বলেন, ‘আজ আমার স্বপ্ন পূরণ হয়েছে। মেয়েটার ইচ্ছা আল্লাহ পূরণ করেছেন। এজন্য আল্লাহর শুকরিয়া আদায় করছি। মেয়েটাকে ভাল কিছু দিতে পারিনি, খুব কষ্ট করেছে সে। দোয়া করি সে আরো অনেকদূর এগিয়ে যাক।’
দরসে জামী ন্যাশনাল একাডেমীর শিক্ষিকা হাফেজা ফাতেমা জান্নাত তমা বলেন, ‘সুমাইয়া পড়াশোনায় খুব ভালো। আদব-কায়দায়ও ভালো সে। আমরা চেষ্টা করেছি তাকে সঠিকভাবে গাইডলাইন দিতে। কিন্তু আসল কাজটি করেছে সুমাইয়া। অনেক পরিশ্রম করেছে সে। এজন্য তাকে সাধুবাদ জানাই এত অল্প সময়ে পবিত্র কোরআন মুখস্ত করতে পারায়।’
মাদ্রাসাটির হেফজখানার প্রধান হাফেজ আলী হাসান ইয়াসা বলেন, ‘কোরআনের মু’জেযা দৃষ্টান্ত সুমাইয়া। সবাই হাফেজ হতে পারেনা। আল্লাহ সবাইকে হাফেজ হিসেবে কবুল করেন না। কোরআনের সাথে সম্পর্কের কারণে আল্লাহ যেকোনো বস্তুকে দামি করে দিতে পারেন। সুমাইয়ার বাবা মাকেও আল্লাহ সম্মান দিয়েছেন। এটি আল্লাহর নেয়ামত।’
দরসে জামী ন্যাশনাল একাডেমির পরিচালক হাফেজ আবু তালহা বলেন বলেন, ‘মাদ্রাসায় ভর্তির পর থেকে প্রচণ্ড পরিশ্রম করেছে সুমাইয়ার। শিক্ষকদের দেওয়া নিয়ম-কানুন সবসময় মেনে চলেছে সে। যার ফলে এমন বিরল কৃতিত্ব অর্জন করেছে। আরো অনেকদূর যাবার প্রত্যাশা করি। দেশ ও দ্বীনের কল্যাণে সে যেন কাজ করতে পারে সেই দোয়া করি।’
জামিয়া আশরাফিয়া মাদ্রাসার মুহতামীম মুফতী নাজমুল হাসান বলেন, ‘আল্লাহ প্রদত্ত বিরল প্রতিভা হলো সুমাইয়া। আল্লাহ তাকে সম্মানিত করেছেন। সবাই এই সুযোগ পায় না। তাকে দেখে অন্য মেয়েরা অনুপ্রাণিত হবে বলে আশা করি। কোরআনের সাথে যিনি থাকবেন, তার সম্মান বাড়িয়ে দেন আল্লাহ।’
মাত্র ১৩ বছর বয়সে ৮৭ দিনে একজন মেয়ের কোরআনের হাফেজ হওয়ার দৃষ্টান্ত বাংলাদেশে নজিরবিহীন। সুমাইয়ার এই কৃতিত্ব অর্জনে বৃহস্পতিবার (৯ নভেম্বর) দুপুরে দোয়া মাহফিলের আয়োজন করে মাদ্রাসা কর্তৃপক্ষ।