সারা বাংলা

সাতক্ষীরার মাটির টালি যাচ্ছে ইউরোপ-আমেরিকায় 

সাতক্ষীরার কলারোয়া উপজেলার মুরারিকাটি গ্রামে উৎপাদিত মাটির তৈরি দৃষ্টিনন্দন টালি যাচ্ছে ইউরোপ আমেরিকায়।  বছরে ১৫ থেকে ২০ কোটি টালি রপ্তানি হচ্ছে। যার মূল্য অন্তত দেড়শ কোটি টাকার বেশি। 

মুরারিকাটিতে উৎপাদিত টালির মধ্যে ফেক্স এ্যাংগুলার, হেড ড্রাগুলার, স্কাটিং, স্টেম্প, স্কয়ার, রুপ, ব্রিকস্ ও ফ্লোর টালি রপ্তানি হচ্ছে। 

খুলনার রপ্তানিকারক প্রতিষ্ঠান নিকিতা ইন্টারন্যাশনাল, মা-কটোস্ ইন্টারন্যাশনাল, কুমিল্লার আর নো এক্সপোর্ট-ইম্পোর্ট ও কলারোয়া টালি ইন্টারন্যাশনালসহ ১০ থেকে ১২টি রপ্তানিকারক প্রতিষ্ঠান মুরারিকাটিতে উৎপাদিত টালি ইউরোপ-আমেরিকায় রপ্তানি করছে। সংশ্লিষ্টরা জানান,  আধুনিক প্রযুক্তির পাশাপাশি সরকারের পৃষ্ঠপোষকতা পেলে দেশের রপ্তানিতে অনেক বড় ভূমিকা রাখতে পারে মুরারিকাটির টালি।

টালি উৎপাদনকারী প্রতিষ্ঠান মেসার্স কলারোয়া টালি ঘরের পরিচালক মোহাম্মদ আবুল হোসেন জানান, ২০০৫ সাল থেকে তারা টালি উৎপাদন করে আসছেন। প্রতি মৌসুমে ৮-১০ লাখ টালি উৎপাদন হয় তার কারখানায়। উৎপাদিত এসব টালি বিভিন্ন রপ্তানিকারক প্রতিষ্ঠানের কাছে বিক্রি করেন। 

তিনি দাবি করেন, যারা দিন-রাত পরিশ্রম করে দৃষ্টিনন্দন মাটির টালি উৎপাদন করেন, তারা সরকারের প্রণোদনা পান না। প্রণোদনা দেওয়া হয় প্রভাবশালী রপ্তানিকারকদের। 

মোহাম্মদ আবুল হোসেন বলেন, মুরারিকাটি গ্রামে অন্তত ৪০-৪৫টি কারখানায় তৈরি হয় এ টালি। এসব কারখানা থেকে বছরে ১৫-২০ কোটি টালি উৎপাদন হয়, যার রপ্তানি মূল্য ১৫০ কোটি টাকার ওপরে। তবে করোনার সময়ে কয়েকটি কারখানা বন্ধ হয়ে যায়। এ শিল্পকে টিকিয়ে রাখতে স্বল্প সুদে ঋণ সহায়তার পাশাপাশি সরকারি ভর্তুকিতে আধুনিক প্রযুক্তি সুবিধা নিশ্চিত করতে হবে।

উৎপাদনকারী প্রতিষ্ঠান দীপা টালির পরিচালক বাদল চন্দ্র পাল জানান, ২০০৫ সালের দিকে প্রথম টালি উৎপাদন শুরু হয়। এরপর ২০০৬-০৭ পর্যন্ত খুব ভালো ব্যবসা হয়। তারপর কারখানা যত বাড়তে থাকে ততই শুরু হয় প্রতিযোগিতা। রপ্তানির পরিমাণ বাড়লেও আগের মতো মুনাফা হচ্ছে না। এটির বাজার ব্যবস্থার জন্য সরকারকে উদ্যোগ নিতে হবে। তা না হলে রপ্তানিজাত এ টালি শিল্পকে টিকিয়ে রাখা মুশকিল হবে।

তিনি আরও জানান, ১৬-১৭ বছর আগেও প্রকার ভেদে একেকটি টালিতে উৎপাদন খরচ বাদে যে মুনাফা থাকত, বর্তমানে প্রায় একই রয়ে গেছে। অথচ এখন শ্রমিকের বেতন-ভাতা প্রায় দ্বিগুণ বেড়েছে। মাটি ও জ্বালানির দামও অস্বাভাবিক। ফলে কোনো রকম টিকে রয়েছে এখানকার কারখানাগুলো।

রপ্তানিকারক প্রতিষ্ঠান নিকিতা ইন্টারন্যাশনালের ব্যবস্থাপক সুলতান আহমেদ জানান, ইউরোপ ও আমেরিকার ছয়-সাতটি দেশে মুরারিকাটির টালি রপ্তানি হচ্ছে। বিশেষ করে জার্মানি, ইতালি, স্পেন, নেদারল্যান্ডস, যুক্তরাজ্য, যুক্তরাষ্ট্র ও কানাডায় প্রতি বছর ৪৫-৫০টি কনটেইনার টালি পাঠানো হয়। তবে এখন এর চাহিদা বেড়েছে।

তিনি জানান, মোট রপ্তানির ২৫ শতাংশ টালি তারা নিজেরাই উৎপাদন করেন এবং বাকি ৭৫ শতাংশ বিভিন্ন কারখানা থেকে সংগ্রহ করে রপ্তানি করা হয়।

বাংলাদেশ ক্ষুদ্র ও কুটির শিল্প করপোরেশন (বিসিক) উপ-ব্যবস্থাপক গোলাম সাকলাইন জানান, মুরারিকাটি মাটির টালি সাতক্ষীরার জন্য অনেক বড় সুনামের। এ শিল্পের প্রসার বাড়াতে বিসিকের পক্ষ থেকে সব ধরনের সহযোগিতা দেওয়া হবে।

সাতক্ষীরার কলারোয়া উপজেলা পরিষদের চেয়ারম্যান আমিনুল ইসলাম লালটু জানান, দৃষ্টিনন্দন টালি সাতক্ষীরা তথা কলারোয়া উপজেলাকে বেশি পরিচিত করেছেন মুরারিকাটি গ্রামের মৃৎশিল্পীরা। এখান থেকে বছরে উল্লেখযোগ্য পরিমাণে বৈদেশিক মুদ্রা অর্জন করে সরকার। এ শিল্পকে আরও সম্ভাবনাময় করতে সরকারের পক্ষ থেকে স্বল্প সুদে ঋণসহ অন্যান্য সহযোগিতা করা হবে।