সারা বাংলা

ব্রাহ্মণবাড়িয়ায় স্ত্রীকে হত্যার দায়ে ১০ বছরের কারাদণ্ড

ব্রাহ্মণবাড়িয়ার বাঞ্ছারামপুর উপজেলায় তুচ্ছ ঘটনায় স্ত্রী রহিমা বেগমকে হত্যা মামলায় স্বামী আমিন মিয়াকে ১০ বছরের সশ্রম কারাদণ্ড দিয়েছেন আদালত। পাশাপাশি পাঁচ হাজার টাকা জরিমানা এবং অনাদায়ে আরও ছয় মাসের কারাদণ্ড দিয়েছেন আদালত।

বৃহস্পতিবার (২৩ নভেম্বর) দুপুরে ব্রাহ্মণবাড়িয়ার জেলা ও দায়রা জজ শারমিন নিগার এই রায় দেন।

আমিন মিয়া (৩৪) বাঞ্ছারামপুর উপজেলার দড়িকান্দি ইউনিয়নের খাল্লা নতুনপাড়ার বাসিন্দা। আমিনের স্ত্রী রহিমা বেগম উপজেলার ছয়ফুল্লাহকান্দি ইউনিয়নের মধ্যনগর গ্রামের মুন্সিবাড়ির জাকির হোসেনের মেয়ে।

রায় দেওয়ার সময় নিহতের স্বামী আসামি আমিন আদালতে উপস্থিত ছিলেন। ৩০৪ এর ১ ধারায় স্ত্রী হত্যার অভিযোগে দোষী সাব্যস্ত হওয়ায় আমিনকে কারাদণ্ড দিয়েছেন আদালত।

মামলার এজাহার সূত্রে জানা গেছে, প্রায় ১০ বছর আগে রহিমা বেগমের (২৮) সঙ্গে খাল্লা নতুনপাড়া গ্রামের মো. আমিন মিয়ার বিয়ে হয়। আমিন পেশায় অটোরিকশা চালক ছিলেন। অটোরিকশা চালিয়ে প্রতিদিন যে টাকা রোজগার করতেন তা স্ত্রী রহিমার কাছে দিতেন। বিয়ের পর নুসাইবা আক্তার (৮) নামে একটি মেয়ে সন্তানের জন্ম দেন রহিমা। তবে বিয়ের পর থেকে আমিন প্রায় তার স্ত্রীকে মারধরসহ শারীরিক ও মানসিক নির্যাতন করত। আমিন ২০২১ সালের সেপ্টেম্বর মাসে খাল্লা গ্রামের এক লোকের কাছ থেকে ৩০ হাজার টাকা ধার নেন। পরে ওই টাকা পরিশোধের জন্য স্ত্রীকে বলে আমিন। স্ত্রী সে সময় ওই টাকা পরিশোধ করতে অপারগতা প্রকাশ করেন। এ ঘটনায় ২০২১ সালের ১৪ ডিসেম্বর দিবাগত রাত দুইটার দিকে স্বামী-স্ত্রীর মধ্যে কথা কাটাকাটি হয়। কথা কাটাকাটির একপর্যায়ে আমিন তার স্ত্রীকে মারধর করে। এক পর্যায়ে ঘরে থাকা লোহার রোল (অটোরিকশার এক্সেল) দিয়ে স্ত্রী রহিমার মাথার সামনের অংশে ও কপালে আঘাত করে। এতে গুরুতর আহত রহিমার ঘটনাস্থলেই মৃত্যু হয়। পরে মৃত্যুর বিষয়টি অন্যদিকে প্রবাহিত করতে পাশের বাড়িতে যান আমিন। সেখানে গিয়ে বাড়িতে চোর এসেছে বলে সবাইকে জানায় আমিন। ঘটনার দিন রাত আড়াইটার দিকে রহিমার ভাই সাব্বির হোসেনকে ফোন করে আমিন। রহিমাকে বাসায় আসা চোরের সদস্যরা মারধর করেছে বলে জানায়। সংবাদ পেয়ে নিহতের বাবার বাড়ির লোকজন ঘটনাস্থলে পৌঁছে মেয়েকে মৃত অবস্থায় পান। স্থানীয় লোকজন আমিনকে সাথে করে থানা পুলিশকে অবগত করে। ঘটনাস্থল থেকে লোহার রোল উদ্ধার করে পুলিশ। ময়নাতদন্তের জন্য নিহতের লাশ ব্রাহ্মণবাড়িয়া জেনারেল হাসপাতালের মর্গে পাঠানো হয়।

২০২১ সালের ১৬ ডিসেম্বর আমিনকে আসামি করে থানায় একটি হত্যা মামলা দায়ের করেন জাকির হোসেন। ২০২২ সালের ২২ ফেব্রুয়ারি আমিনের বিরুদ্ধে ব্রাহ্মণবাড়িয়ার সিনিয়র জুডিসিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট আদালতে অভিযোগপত্র দায়ের করে পুলিশ।

ব্রাহ্মণবাড়িয়া জেলা জজ আদালতের রাষ্ট্রপক্ষের আইনজীবী মাহবুব আলম বলেন, এই রায়ের মাধ্যমে ন্যায়বিচার প্রতিষ্ঠা হয়েছে।