শিশু-কিশোরদের শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে পাঠানো নিয়ে অভিভাবকদের দুশ্চিন্তা দূর করতে চট্টগ্রাম জেলা প্রশাসনের ব্যবস্থাপনায় স্মার্ট স্কুলবাসের আনুষ্ঠানিক যাত্রা শুরু হয়েছে।
সোমবার (২৭ নভেম্বর) দুপুরে নগরীর আউটডোর স্টেডিয়াম চত্বরে আয়োজিত বর্ণাঢ্য অনুষ্ঠানের মাধ্যমে এই স্কুলবাসের আনুষ্ঠানিক যাত্রা সূচনা করেন চট্টগ্রামের বিভাগীয় কমিশনার মো. তোফায়েল ইসলাম।
দেশের প্রথম স্মার্ট জেলা গড়ার প্রত্যয়ে মাননীয় প্রধানমন্ত্রী কর্তৃক উদ্বোধনকৃত স্কুলবাসে প্রেজেন্সলেস, পেপারলেস ও ক্যাশলেস প্রযুক্তিসহ সকল ডিভাইস সংযুক্ত করে আজ থেকে যাত্রা শুরু করলো স্মার্ট স্কুলবাস। শিক্ষার্থীরা বাসে উঠে বা নামার সময় হাজিরা যন্ত্রের সামনে স্মার্ট কার্ড চাপ দিলেই খুঁদে বার্তা পেয়ে যাবেন অভিভাবক।
এছাড়াও ঘরে বসেই জিপিএস ট্র্যাকিং ও সিসিটিভি ক্যামেরার মাধ্যমে বাস ও শিক্ষার্থীর অবস্থান দেখতে পারবেন তারা। চট্টগ্রাম নগরের বিভিন্ন শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের শিক্ষার্থীদের নিরাপদ যাতায়াত, অভিভাবকদের ভোগান্তি, যানজট ও জ্বালানি খরচ কমানোর জন্য এই স্মার্ট বাস প্রকল্পটি বাস্তবায়ন করেছে চট্টগ্রাম জেলা প্রশাসন।
এ প্রসঙ্গে চট্টগ্রামের জেলা প্রশাসক বলেন, ‘নগরের ১০টি স্কুলবাসে জিপিএস ট্র্যাকার, জিআইএস প্রযুক্তি, ডিজিটাল হাজিরা ডিভাইস ও আইপি ক্যামেরা স্থাপন করে এই বাসগুলোকে স্মার্ট করা হয়েছে।’
গত অক্টোবর মাসে স্মার্ট জেলা উদ্ভাবন চ্যালেঞ্জ-২০২৩ এর আওতায় প্রথম পুরস্কার পায় এই প্রকল্পটি। প্রাথমিকভাবে সোমবার একটি বাস উদ্বোধন করা হয়েছে। জানুয়ারি মাস থেকে পুরোদমে ১০টি স্কুল বাস সড়কে চলবে।
আজ এম এ আজিজ স্টেডিয়ামের জিমনেসিয়াম মাঠ থেকে আনুষ্ঠানিক যাত্রা শুরু করে একটি 'স্মার্ট স্কুল বাস'। এসময় বাসে চট্টগ্রাম নগরের ১২টি শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের প্রায় ৭০ জন শিক্ষার্থী ছিল। তাদের প্রত্যেকেই স্মার্ট কার্ড চেপে বাসে ওঠে। আগামীকাল মঙ্গলবার সকালে শিক্ষার্থীদের নিয়ে এটি সড়কে চলবে। চলতি বছরের জন্য বাসগুলোতে প্রতিজন শিক্ষার্থী ৫টাকা মূল্যে যাতায়াত সুবিধা পাবে।
সোমবার দুপুরে ডিজিটাল হাজিরা যন্ত্রের সামনে স্মার্ট কার্ড ব্যবহার করে স্মার্ট বাসের আনুষ্ঠানিক যাত্রা শুরু করেন চট্টগ্রামের বিভাগীয় কমিশনার মো. তোফায়েল ইসলাম। এর আগে স্মার্ট স্কুল বাসের আনুষ্ঠানিক যাত্রা উপলক্ষে আয়োজিত অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথির বক্তব্যে তিনি বলেন, এই উদ্যোগের মাধ্যমে শিক্ষার্থীদের অভিভাবকেরা দুশ্চিন্তা মুক্ত হতে পারবেন। এছাড়া সড়কে যানজটও অনেক কমে যাবে।
বিশেষ অতিথির বক্তব্যে শিক্ষাবিদ আবুল মোমেন বলেন, ‘প্রকল্পটি চালু করেছে চট্টগ্রাম জেলা প্রশাসন, তবে এটি রক্ষণাবেক্ষণের দায়িত্ব শিক্ষার্থীদের। সঠিক রক্ষণাবেক্ষণে এই প্রকল্প দীর্ঘস্থায়ী হবে এবং শিক্ষার্থীরা আরও বেশি লাভবান হবে।’
অনুষ্ঠানে আরও উপস্থিত ছিলেন চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রকৌশল অনুষদের ডিন রাশেদ মোস্তফা, জিপিএইচ ইস্পাতের অতিরিক্ত ব্যবস্থাপনা পরিচালক আলমাস শিমুল, চট্টগ্রামের অতিরিক্ত জেলা প্রশাসক (রাজস্ব) মো. আবদুল মালেক, অতিরিক্ত জেলা প্রশাসক (শিক্ষা ও আইসিটি) মো. সাদি উর রহিম, চট্টগ্রাম নগরের ১০টি শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের প্রধান শিক্ষক, শিক্ষার্থী ও তাদের অভিভাবকবৃন্দ।
জেলা প্রশাসক আবুল বাসার মোহাম্মদ ফখরুজ্জামান আরও বলেন, আশা করছি এটিকে একটি টেকসই প্রকল্প হিসেবে গড়ে তোলা সম্ভব হবে। নগরের পতেঙ্গা-হালিশহর এলাকার শিক্ষার্থীদের কথা মাথায় রেখে আরও ১০টি বাস নামানোর পরিকল্পনা রয়েছে। আশা করছি স্মার্ট স্কুলবাস উদ্যোগটি একটি টেকসই প্রকল্প হিসেবে গড়ে তোলা সম্ভব হবে। স্মার্ট স্কুল বাস চট্টগ্রাম নগরের বিভিন্ন স্কুলগামী শিক্ষার্থীদের যাতায়াতের ক্ষেত্রে অসহনীয় যানজট, অভিভাবকদের ভোগান্তি, অধিক যাতায়াত খরচ, জ্বালানি অপচয়, সড়ক দুর্ঘটনা, অনিরাপদ স্কুল যাত্রাসহ অভিভাবকদের কর্মঘণ্টা নষ্ট হওয়ার মতো সমস্যার সমাধান হবে।