মানিকগঞ্জের হরিরামপুর উপজেলার গালা ইউনিয়নের রাজার কলতা এলাকার প্রতিটি ঘরে এক সময় তাঁতের খটাখট শব্দে মুখরিত থাকতো। মেয়েরা হাতে হাত মিলিয়ে বুনতেন শাড়ি ও লুঙ্গি। প্রায় ৮০-৯০টি পরিবার তাঁতের কাজ করতো। আর এখন পুরো এলাকায় তাঁতের কাজ করে মাত্র দুটি পরিবার। ওই এলাকায় এ পেশা ছাড়ার হিড়িক পড়েছে।
তাঁতের কাজের করেন এমন দুই পরিবারের সদস্যরা জানান, সময় গড়ানোর সঙ্গে সঙ্গে সুতার দাম বৃদ্ধি, চাহিদা কমে যাওয়াসহ প্রশিক্ষিত শ্রমিকের মজুরি বৃদ্ধির কারণে এখন আর নেই রমরমা অবস্থা। যে কারণে ভালো নেই ঐতিহ্যবাহী এই শিল্পের সঙ্গে জড়িত মানুষগুলো। তাঁতের প্রধান উপকরণ সুতার দাম বেড়ে যাওয়ায় লুঙ্গি বিক্রি করে এখন উৎপাদন খরচ উঠাতেই হিমসিম খেতে হচ্ছে।
রাজার কলতা গ্রামের ইসমাইল হোসেন জানান, তার বাবা ও দাদা তাঁতের কাজ করতেন। তাদের গ্রাম ও আশপাশের ৮০-৯০টি পরিবার একসময় তাঁতের কাজ করতো, আর এখন মাত্র দুটি পরিবার কাজ করছে। তিনি ও তার স্ত্রী মিলে ২দিনে ছয়টি লুঙ্গি তৈরি করেন। খুচরা একেকটি লুঙ্গি বিক্রি করেন ৯০০ টাকা করে।
তিনি বলেন, হাতে তৈরি এসব লুঙ্গি পরতে আরামদায়ক হওয়ায় প্রচুর চাহিদা ছিল। এখন সুতার দাম ও শ্রমিকের মজুরি বেড়ে যাওয়ায় দামও বেশি, তাই চাহিদা কমে গেছে। আগে যেই সুতা ১৬-২০ টাকা ছিল, এখন সেটা ৮০-৮৫ টাকা মোড়া কিনতে হয়।
ইসমাইলের স্ত্রী মমতাজ বেগম বলেন, সুতার দাম যখন কম ছিল, তখন ৩৫০-৪৫০ টাকায় লুঙ্গি বিক্রি করতাম। এখন লুঙ্গির দাম ৯০০ টাকা রাখতে হচ্ছে, তাই চাহিদা কমে গেছে। আর তেমন লাভ হয় না।
একই গ্রামের তাঁতের কারিগর রহিজ উদ্দিন বলেন, ৪০-৪৫ বছর ধরে তাঁতের কাজ করছি। আমি এখন আর শাড়ি বুনি না, শুধু লুঙ্গির কাজ করি। ২ দিনে ২৪টি লুঙ্গি তৈরি করি। ২ জন করে ৮ জন লোক লাগে ২৪টি লুঙ্গি করতে। একসময় সুতার দাম কম ছিল, লুঙ্গি কম দামে বিক্রি করেও লাভ থাকতো। আর এখন এ কাম করে চালের টাকাই হয় না।
বিসিক মানিকগঞ্জ জেলা কার্যালয়ের উপ-ব্যবস্থাপক মো. মাহবুব ইসলাম বলেন, তাঁত শিল্পের কারিগরদের জন্য কোনো ঋণ বা প্রণোদনার ব্যবস্থা নেই। যদি কখনো কোনো প্রণোদনা বা ঋণের প্রকল্প আসে তখন তাদের সহায়তা করা হবে।