বগুড়া-৭ (শাজাহানপুর-গাবতলী) আসনের সংসদ সদস্য রেজাউল করিম বাবলুর গত ৫ বছরে আয় বেড়েছে অন্তত ৭শ গুণ। একাদশ ও দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে দাখিলকৃত হলফনামা থেকে এই তথ্য পাওয়া গেছে।
একাদশ জাতীয় নির্বাচনের হলফনামায় বাবলু তার বার্ষিক আয় উল্লেখ করেছিলেন মাত্র ৫ হাজার টাকা। জমানো ছিল ৩০ হাজার টাকা। আর চলাফেরার জন্য ব্যবহার করতেন পুরোনো একটি মোটরসাইকেল। আর বর্তমানে তিনি চলাফেরার জন্য দুটি বিলাসবহুল গাড়ি ব্যবহার করেন। যার দাম ১ কোটি ৪ লাখ ৪৫ হাজার। সব মিলিয়ে বর্তমানে তার সম্পদের পরিমাণ ১ কোটি ৬৪ লাখ ৩৯ হাজার ৩৩৫ টাকা।
একাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে কমিশনে দেয়া হলফনামায় বাবলু উল্লেখ করেছিলেন, তার পেশা ব্যবসা ও সাংবাদিকতা। আয়ের উৎস কৃষি ও ব্যবসা। এর মধ্যে, কৃষি খাত থেকে ৩ হাজার টাকা আর ব্যবসা থেকে ২ হাজার টাকা বার্ষিক আয়। অর্থাৎ ওই সময় তার মাসিক আয় ছিল ৪১৭ টাকা। নগদ টাকা ছিল ৩০ হাজার টাকা। ব্যাংকে জমার পরিমাণও ছিল ৩০ হাজার টাকা। ৫০ হাজার টাকা মূল্যের একটি মোটরসাইকেল ছিল তার।
এছাড়া, বাবলুর কাছে স্বর্ণ ছিল ৬ ভরি। ইলেকট্রনিক্স সামগ্রী ছিল ১ লাখ ৩০ হাজার টাকার। আসবাবপত্র ছিল দেড় লাখ টাকার। অন্যান্য খাতে ছিল ৩০ হাজার টাকা। স্থাবর সম্পত্তির ক্ষেত্রে তার কৃষি জমির পরিমাণ ছিল ৪৫ শতক। তিনি অকৃষি জমির আর্থিক মূল্য উল্লেখ করেছিলেন ৪৫ লাখ টাকা। বাবলুর নিজের নামে ৫ লাখ টাকার দালান ছিল। তার কোনো এপার্টমেন্ট ছিল না। এমনকি, ওই সময় স্ত্রীর নামে কোনো সম্পদও ছিল না।
দ্বাদশ জাতীয় নির্বাচনে কমিশনে দেওয়া হলফনামায় বাবলু পেশা ইট, বালু, সিমেন্টসহ অনলাইন ব্যবসা উল্লেখ করেছেন। বার্ষিক আয় ৩৬ লাখ ২৪ হাজার ৩৩৫ টাকা। অর্থাৎ এখন তার মাসে আয় তিন লাখ ২ হাজার ২৮ টাকা। সেই হিসেবে তার আয় বেড়েছে ৭২৪ গুণের বেশি। এবার কৃষি খাতে তিনি কোনো আয় দেখাননি। বাড়ি ভাড়া থেকে পান ১ লাখ ৮০ হাজার। ইট, বালু, সিমেন্ট ও অনলাইন ব্যবসা থেকে বছরে আয় ১১ লাখ ১৫ হাজার টাক। এমপি হিসেবে প্রাপ্ত আয় ও আনুতোষিক ২৩ লাখ ২৪ হাজার ২২৫ টাকা। তার নিজ নামে নগদ রয়েছে সাড়ে ৫ লাখ টাকা। তবে, ব্যাংকে তার কোনো টাকা নেই বলে উল্লেখ করেছেন।
হলফনামায় তিনি আরও উল্লেখ করেছেন, ১ কোটি ৪ লাখ ৪৫ হাজার টাকা দামের দুটি গাড়ি ব্যবহার করেন তিনি। ৩৫ হাজার টাকা মূল্যের অকৃষি জমি রয়েছে। তার নামে ১৫ লাখ টাকার একটি এপার্টমেন্ট রয়েছে। বিগত নির্বাচনে দেয়া হলফনামায় তার স্ত্রীর নামে কোন সম্পদের কথা উল্লেখ না করলেও এবার স্ত্রীর নামে ১ কোটি ১ লাখ ৫০ হাজার টাকার আবাসিক ভবন থাকার কথা বলেছেন।
এছাড়া, স্ত্রীর কাছে নগদ আড়াই লাখ টাকা আছে। রয়েছে তিন লাখ টাকার মূল্যের একটি মোটরসাইকেল। স্ত্রী বৈবাহিক সূত্রে ১০ ভরি স্বর্ণ পেয়েছেন বলে উল্লেখ করেছেন। তবে, পাঁচ বছর আগে স্ত্রীর নামে এই স্বর্ণের কোনো তথ্য তিনি হলফনামায় উল্লেখ করেননি। বাবলুর ইলেকট্রনিক্স সামগ্রী ও আসবাবপত্রের মূল্যমান একই উল্লেখ করা হয়েছে। এছাড়া, অন্যান্য খাত ও স্থাবর সম্পত্তির ক্ষেত্রে কৃষি জমির কথা উল্লেখ করেননি।
এ বিষয়ে জানতে চাইলে রেজাউল করিম বাবলু বলেন, আমার আয়-ব্যয়ের সব হিসেবের ব্যাখ্যা মনোনয়নপত্রের ফাইলে দেয়া আছে। আপনারা সব সেখানেই পাবেন। এ বিষয়ে আমার কিছু বলার নেই।
উল্লেখ্য, বগুড়া-৭ (গাবতলী-শাজাহানপুর) আসনটি ‘জিয়া পরিবারের আসন’ হিসেবে পরিচিত। সাজাপ্রাপ্ত আসামি হওয়ায় ২০১৮ সালের একাদশ জাতীয় নির্বাচনে অংশ নিতে পারেননি খালেদা জিয়া। এখানে বিএনপির মনোনয়ন পান দলের গাবতলী উপজেলা শাখার নেতা মোরশেদ মিলটন। তখন উপজেলা পরিষদের চেয়ারম্যান পদ থেকে পদত্যাগপত্র গৃহীত না হওয়ায় তার মনোনয়নপত্র বাতিল হয়ে যায়। আসনটি বিএনপিশূন্য হয়ে যায়। আসনটিতে আওয়ামী লীগেরও প্রার্থী ছিল না। মহাজোটের শরিক জাতীয় পার্টিকে আসনটি ছেড়ে দেয় আওয়ামী লীগ। তবে আওয়ামী লীগের নেতাকর্মীদের বড় অংশ ছিল স্বতন্ত্র প্রার্থী ফেরদৌস আরা খানের পক্ষে। তিনি গাবতলী উপজেলা আওয়ামী লীগের সাবেক সভাপতি আজম খানের স্ত্রী এবং শহর আওয়ামী লীগের আহ্বায়ক রফি নেওয়াজ খানের শাশুড়ি। এই অবস্থায় ভোটের একদিন আগে স্বতন্ত্র প্রার্থী রেজাউল করিমকে সমর্থন দেয় স্থানীয় বিএনপি। ফলে এক রাতের ব্যবধানে এমপি হন বাবলু।