দিগন্তজোড়া ফসলের মাঠ। চারপাশে হলুদের সমারোহ। সরিষার হলুদ ফুলের সঙ্গে দুলছে কৃষকের রঙিন স্বপ্ন। চলতি মৌসুমে সরিষা আবাদ করে লাভবান হওয়ার স্বপ্ন বুনছেন মানিকগঞ্জ জেলার হরিরামপুরের চাষিরা।
ভোজ্যতেলের দাম বাড়ার ফলে দিন দিন বাড়ছে সরিষার তেলের চাহিদা। একই সঙ্গে দাম ভালো পাওয়ায় লাভের মুখ দেখছেন চাষিরা। আবহাওয়া অনুকূলে থাকায় হরিরামপুর উপজেলার বিভিন্ন গ্রামে চলতি মৌসুমে বেড়েছে সরিষার আবাদ। সরিষার ব্যাপক ফলনে গ্রামীণ অর্থনীতিতে দেখা দিতে পারে সম্ভাবনার নতুন দুয়ার।
সরেজমিনে দেখা গেছে, উপজেলার গালা, বাল্লা, চালা, গোপীনাথপুর সহ প্রায় প্রতিটি এলাকাতেই কম বেশি সরিষার আবাদ হয়েছে। উন্নত জাত ও দেশি জাতের রাই, চৈতা ও মাঘি সরিষার বীজ রোপণ করছেন চাষিরা। তবে প্রচলিত দেশি সরিষার চেয়ে উন্নত জাতের বারি-১৪ ও বারি-১৫-এর ফলন বেশি হওয়ায় এই দুই জাতের সরিষা চাষে বেশি আগ্রহী কৃষকরা।
বারি-১৪ ও বারি -১৫ জাতের সরিষা গাছের উচ্চতা হয় দেড় থেকে ২ ফুটের মতো। আগে সরিষা গাছ বড় হলেও ফলন তুলনামূলক কম হতো। নতুন জাতের ছোট আকারের এই সরিষা গাছের গোড়া থেকে মাথা পর্যন্ত ফলন আসে। বীজ রোপণের ৭০ দিনের মধ্যেই ক্ষেত থেকে সরিষা সংগ্রহ করতে পারেন চাষিরা।
গালা ইউনিয়নের শাখিনি গ্রামের কৃষক নয়ন মিয়া জানান, চলতি মৌসুমে তিনি ৩ বিঘা জমিতে বারি-১৪ জাতের সরিষার আবাদ করেছেন। গাছে ভালো ফলন দেখা গেছে। আবহাওয়া অনুকূলে থাকলে লাভবান হওয়ায় স্বপ্ন দেখছেন তিনি। এবার লাভ হলে আগামীতে আরো ব্যাপক হারে সরিষা আবাদ করবেন বলেও জানান তিনি।
বাল্লা ইউনিয়নের বৈকা গ্রামের কৃষক মো. ফারুক বলেন, আমরা কৃষক পরিবারের সন্তান। কৃষি কাজ করেই আমাদের বাবা-দাদারা চলেছেন, আমরাও চলছি। নিজেদের জমি না থাকায় অন্যদের আড়াই বিঘা জমি বর্গা নিয়ে সরিষা আবাদ করেছি। আশা করছি অন্য বছরের তুলনায় এবার ফলন ভালো হবে।
চরাঞ্চলের আজিমনগর ইউনিয়নের বসন্তপুর আদর্শ গ্রামের কৃষক মো. সাজ্জাদুর রহমান বলেন, সরিষা বিনা চাষেই উৎপাদন করা যায়। জমি সমান করা লাগে না, সেচ লাগে না। শুধু রোপণ করে দিলেই হয়। তেমন খরচ নেই। কষ্ট ছাড়াই সরিষার ভালো ফলন পাওয়া যায়। তাছাড়া সরিষার উৎপাদন বেশি হলে মানুষ সরিষার তেল কম দামে পাবে। সয়াবিন তেলের বিকল্প হয়ে উঠবে। চাহিদা কমলে সয়াবিন তেলেরও দাম কমে যাবে। সরিষা আবাদে অনেক সুবিধা আছে।
হরিরামপুর উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা মো. তৌহিদুজ্জামান খান বলেন, গত বছরের তুলনায় এবার সরিষা আবাদ প্রায় দ্বিগুণ বৃদ্ধি পেয়েছে। সরিষার চাষ আরো বৃদ্ধি করার জন্য কৃষকদের সব ধরণের সহযোগিতা দেওয়া হচ্ছে। এ বছর উপজেলার ১১ হাজার ৬৪৫ হেক্টর জমিতে সরিষা চাষের লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারণ করা হয়েছে। সরিষার আবাদ বৃদ্ধির লক্ষ্যে বিশেষ কর্মসূচির মাধ্যমে যেমন- ভুট্টার জমিতে, রাস্তার পাশে, পুকুর পাড়, ফল বাগানসহ যে কোনো পতিত জায়গায় অন্য ফসলের মধ্যে সাথী ফসল হিসেবে সরিষা চাষ করতে কৃষকদের উদ্বুদ্ধ করা হচ্ছে।
তিনি আরোও বলেন, এ ব্যাপারে কৃষকদের উৎসাহিত করার জন্য কৃষি প্রণোদনা কর্মসূচির মাধ্যমে বীজ ও সার দেওয়া হয়েছে। সরিষার আবাদ বাড়াতে উপজেলা কৃষি অফিসের পক্ষ থেকে বিভিন্ন কার্যক্রম পরিচালনাসহ কৃষকদের সর্বাত্নক সহযোগিতা করা হচ্ছে।