সারা বাংলা

নিষেধ সত্ত্বেও সমুদ্রে নামছেন পর্যটকরা

কক্সবাজার সমুদ্রসৈকতের লাবণী পয়েন্ট থেকে সুগন্ধা পর্যন্ত দেড় কিলোমিটার জায়গায় প্রায় ৪০ গজ অন্তর ঝুঁকি সম্বলিত সাইনবোর্ড দিয়েছে জেলা প্রশাসন। এতে লেখা রয়েছে ‘এই স্থানে মৃত্যুঝুঁকি আছে, সমুদ্রে নামা সম্পূর্ণ নিষেধ।’

নিষেধাজ্ঞা দেওয়ার পরও অনেক পর্যটক ঝুঁকি নিয়ে সাগরে নামছেন। ইচ্ছেমতো পানিতে ঝাঁপ-লাফালাফি করছেন। ট্যুরিস্ট পুলিশ, লাইফগার্ড এবং সৈকতের নিরাপত্তাকর্মীরা মাইকিং ও বাঁশি বাজিয়ে তাদের সতর্ক করলেও অনেক পর্যটক তা আমলে নেননি। টিউবে ভেসে ভেসে গভীর পানিতেও চলে গেছে বেশ কয়েকজন।

মানিকগঞ্জের শিবালয় থেকে আসা মধ্যবয়সী আরিফুল ইসলাম তার স্ত্রীকে জোর করে টেনে পানিতে নিয়ে যাচ্ছেন। ঝুঁকি লেখা সাইনবোর্ডের দিকে নজর নেই তার। স্ত্রীর ভয়-ভীতিরও তোয়াক্কা করছেন না তিনি। অঘটনের ব্যাপারে তার কাছ থেকে জানতে চাইলে তিনি বলেন, ‘সাঁতার জানি, কিচ্ছু হবে না। টাকা-পয়সা খরচ করে কক্সবাজার আসছি মজা করতে। মিনিট দশেক গোসল করে পানি থেকে উঠে পড়ব।’

আরিফুলের মতো ভয় না পাওয়া ঢাকা ডেমরার আলিফ বলেন, ‘এই প্রথম কক্সবাজার এসেছি। সাগরের পানি দেখে অবাক হয়ে গেছি। কিন্তু সাইনবোর্ড খেয়াল না করে পানিতে নেমে পড়েছি। লাইফগার্ডের এক ভাই এসে সতর্ক করেছেন। এক্ষুণিই উঠে যাচ্ছি।’

সমুদ্রে নেমে বিপদে পড়া মানুষকে উদ্ধার করে সি সেইফ লাইফ গার্ডের সদস্যরা। ওই সংগঠনের তথ্যমতে, চলতি বছর এই সংগঠনের আওতায় ৮৭ জনের বেশি লোককে উদ্ধার করা হয়, এর মধ্যে ১১ জন হাসপাতালে মারা যায় ও মৃত ভেসে আসে।

সি সেইফ লাইফ গার্ডের সুপার ভাইজার সাইফুল্লাহ সিফাত রাইজিংবিডিকে বলেন, ‘সমুদ্রে নেমে বিপদে পড়া লোকদের রক্ষার দায়িত্ব পালন করি আমরা। এছাড়াও সমুদ্রে নামার আগে প্রশাসন থেকে কোনো নির্দেশনা থাকলে আমরা পর্যটকদের জানিয়ে দেই। লাল পতাকা দেখিয়ে কিংবা বাঁশি বাজিয়ে তাদের সতর্ক করার পরও কেউ মানে, আবার কেউ মানে না।’ 

তিনি জানান, ২০১৪ সালে তাদের কার্যক্রম শুরুর পর থেকে এ পর্যন্ত ৪১ জন মৃতসহ ৫৮৭ জনকে উদ্ধার করেছে তারা। তারা সবসময় পর্যকদের প্রতি সজাগ থাকেন। এবং বিপদে পড়লে রক্ষা করেন।

কক্সবাজার জেলা প্রশাসনের পর্যটন সেলের নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেট মাসুদ রানা বলেন, ‘পর্যকদের নিরাপত্তা নিয়ে আমাদের বিচকর্মীরা কাজ করছেন। তারা সমুদ্রে নামা পর্যটকদের জোয়ার-ভাটার সময়সূচিসহ জেলা প্রশাসনের বিভিন্ন নির্দেশনার ব্যাপারে অবগত করছেন। সমুদ্রসৈকতের ঝুঁকিপূর্ণ পয়েন্ট চিহ্নিত করে মৃত্যঝুঁকি লেখা যে সাইনবোর্ডগুলো দেওয়া হয়েছে, তা উপেক্ষা করে যে সমস্ত পর্যটক ওই জায়গায় পানিতে নামছেন, তাদের তুলে দিচ্ছি। যদি না উঠে তবে বাধ্য করছি।’

ট্যুরিস্ট পুলিশ কক্সবাজার রিজিয়নের অতিরিক্ত ডিআইজি আপেল মাহমুদের মুঠোফোনে কল দিয়ে সাড়া না পাওয়ায় পর্যটকদের নিরাপত্তার বিষয়ে বক্তব্য নেওয়া সম্ভব হয়নি।

এদিকে শুক্রবার (১৫ ডিসেম্বর) সপ্তাহিক ছুটির দিনে সমুদ্রসৈকতের বিভিন্ন পয়েন্টে সরেজমিন গিয়ে দেখা যায়, লক্ষাধিক পর্যটক সমুদ্রসৈকতে ঘুরাঘুরি, সমুদ্রস্নানসহ ব্যস্ত সময় পার করছেন। 

ঢাকার দোহার থেকে স্বপরিবারে আসা আয়ুব আলী খন্দকার বলেন, ‘বেশ কয়েক দিন সময় নিয়ে পরিবারের ৮ জন নিয়ে কক্সবাজারে ঘুরতে এলাম। আগামীকাল সেন্টমার্টিন যাব। শীতকালে কক্সবাজার বেড়াতে ভালো লাগে।’

কিশোরগঞ্জের কুলিয়ার চর থেকে আসা বিশ্ববিদ্যালয় শিক্ষার্থী রাফিয়াত সুবর্ণা বলেন, ‘অনেক দিন থেকে পরিকল্পনা ছিল ১৬ ডিসেম্বর বিজয় দিবসটা কক্সবাজারে উদযাপন করবো। গতকাল (বৃহস্পতিবার) চলে এলাম। এখন সৈকতে পরিবারের সঙ্গে সময়টা বেশ ভালো কাটছে।’

দু-একদিনের মধ্যে পর্যটক আরও বাড়বে বলে মনে করছেন পর্যটন সংশ্লিষ্টরা। তারা বলছেন, যেভাবে সমুদ্রশহরে পর্যটক আসতে শুরু করেছে, এতে করে বিগত বেশ কয়েক মাসের লোকসান কাটিয়ে আলোর মুখ দেখা সম্ভব হবে। 

কক্সবাজার হোটেল মোটেল গেস্টহাউস মালিক সমিতির সাধারণ সম্পাদক সেলিম নেওয়াজ বলেন, ‘গত ২৮ অক্টোবর থেকে আমরা লোকসানের মধ্যে আছি। সময়টা খুবই মন্দা গেছে। পর্যটকই ছিল না। আজ শুক্রবার থেকে হঠাৎ পর্যটক বেড়ে গেল। ১৬ ডিসেম্বর সামনে নিয়ে আরও বেশি পর্যটক আসছে। পর্যটক আসাতে কিছুটা হলেও লোকসান কাটানোর সুযোগ হয়েছে আমাদের। প্রতিটি হোটেল, মোটেল, গেস্টহাউসকে বলা আছে, অতিরিক্ত ভাড়া যেন আদায় করা না হয়। ইতোমধ্যে কোনো হোটেল অতিরিক্ত ভাড়া নিচ্ছে— এমন অভিযোগ পাইনি। এরই মধ্যে ডিসকাউন্ট চলছে। এক, দেড় কিংবা দুই হাজার টাকার মধ্যে মানসম্মত রুম পাওয়া যাচ্ছে। পর্যটকদের সর্বোচ্চ সেবা দানে আমরা আন্তরিক। সমুদ্রশহরে পর্যটকরা আসুক, নিরাপদে ঘুরে যাক এটাই কামনা করি।’

ওই সংগঠনের সভাপতি আবুল কাসেম সিকদার বলেন, ‘প্রায় ৯০ শতাংশ হোটেল কক্ষ বুকিং হয়ে গেছে। বুকিং দেওয়া পর্যটকরা কক্সবাজারে আসতে শুরু করেছে। অনেকে এসে পড়েছে। দেড় থেকে দুই হাজার টাকার মধ্যে হোটেল কক্ষ পাওয়া যাচ্ছে। আশা করি আজ (শুক্রবার) এবং আগামীকালের মধ্যে হোটেল-মোটেল শতভাগ বুকিং হয়ে যাবে।’