‘প্রার্থিতা ফিরে পেয়েছেন আ.লীগের ডামি প্রার্থী’ এমন শিরোনামে সংবাদ প্রকাশ করায় ফেনী থেকে প্রকাশিত দৈনিক ফেনীর সময়-এর পত্রিকার সম্পাদক ও প্রধান প্রতিবেদকের বিরুদ্ধে ১০ কোটি টাকার মানহানি মামলা করা হয়েছে।
গতকাল বৃহস্পতিবার (১৪ ডিসেম্বর) সিনিয়র জুডিসিয়াল ম্যাজিষ্ট্রেট আশিকুর রহমানের আদালতে মামলাটি করেন ফেনী-২ আসনে স্বতন্ত্র সংসদ সদস্য প্রার্থী এবং ফেনী জেলা আওয়ামী লীগের তথ্য ও গবেষণা সম্পাদক অ্যাডভোকেট আনোয়ারুল করিম ফারুক।
মামলার আসামিরা হলেন- দৈনিক ফেনীর সময়-এর সম্পাদক মোহাম্মদ শাহাদাত হোসেন ও প্রধান প্রতিবেদক আরিফ আজম।
মামলার এজাহারে বাদী অ্যাডভোকেট আনোয়ারুল করিম ফারুক উল্লেখ করেন, তিনি নির্বাচন কমিশনের বিধি মোতাবেক সংসদীয় আসনের মোট ভোটারের ১ শতাংশ ভোটারের সমর্থন নিয়ে সংসদ সদস্য প্রার্থী হয়েছেন। তিনি কোনো রাজনৈতিক দলের মনোনীত হয়ে সংসদ সদস্য প্রার্থী হননি। তাকে ‘ডামি প্রার্থী’ উল্লেখ করে পত্রিকায় অসত্য সংবাদ প্রচার করে সামাজিকভাবে হেয় প্রতিপন্ন করা হয়েছে। এতে তার ১০ কোটি টাকার মানহানি ও ক্ষতিসাধন হয়েছে বলেও এজাহারে উল্লেখ করেন।
এ বিষয়ে দৈনিক ফেনীর সময় পত্রিকার সম্পাদক মোহাম্মদ শাহাদাত হোসেন বলেন, ‘ডামি শব্দটি প্রচলিত একটি শব্দ। কাউকে ডামি প্রার্থী বললে তার মানহানি হওয়ার কিছু দেখছি না। মানহানির অভিযোগে মামলা করাটা মূলত আমার বিরুদ্ধে ষড়যন্ত্র এবং গণমাধ্যমের কণ্ঠরোধের অপচেষ্টার অংশ বিশেষ। মামলার বাদী অ্যাডভোকেট আনোয়ারুল করিম ফারুক জেলা আওয়ামী লীগের তথ্য ও গবেষণা সম্পাদক । তিনি বর্তমান জেলা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক ও ফেনী-২ আসনের বর্তমান সাংসদ সদস্য এবং দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে আওয়ামী লীগের মনোনীত প্রার্থী নিজাম উদ্দিন হাজারীর খুবই ঘনিষ্ঠজন। মনোনয়ন দাখিলের সময়ও তিনি নিজাম হাজারীর সঙ্গে ছিলেন। সেখানে তিনি নৌকার প্রার্থীর বিরুদ্ধে স্বতন্ত্র নির্বাচন করবেন এমনটি বিশ্বাসযোগ্য নয়।’
তিনি আরও বলেন, ‘এবারের নির্বাচনে কোনো প্রার্থী বিনা প্রতিদ্বন্দ্বিতায় এমপি হতে পারবে না মর্মে প্রধানমন্ত্রী ও আওয়ামী লীগ সভাপতি শেখ হাসিনার নির্দেশনা ছিল, দলীয় প্রার্থীদের সঙ্গে ডামি প্রার্থী রাখতে হবে। আনোয়ারুল করিম ফারুকের নির্বাচনে অংশ নেওয়াটা অনেকটা সেই রকমই। সে হিসেবেই তাকে সংবাদে ডামি প্রার্থী লেখা হয়েছে।’
এদিকে, একই দিন ফেনীর আদালত প্রাঙ্গণে দৈনিক ফেনীর সময় পত্রিকার নিবন্ধন বাতিলের দাবিতে প্রতিবাদ সভা অনুষ্ঠিত হয়। জেলা আওয়ামী লীগের বন ও পরিবেশ সম্পাদক সৈয়দ আবুল হোসেনের পরিচালনায় অনুষ্ঠিত সভায় সভাপতিত্ব করেন অ্যাডভোকেট কামরুল হাসান। সভায় এমপি প্রার্থী আনোয়ারুল করিম ফারুক ছাড়াও বক্তব্য রাখেন- জেলা আওয়ামী লীগের আইন সম্পাদক এম. শাহজাহান সাজু, সোনাগাজী উপজেলা আওয়ামী লীগের সিনিয়র সহ-সভাপতি নাছির উদ্দিন বাহার, দিলীপ কুমার সাহা, আহসান কবির বেঙ্গল, রসিক শেখর ভৌমিক ও গাজী তারেক আজিজ প্রমুখ।
এ প্রসঙ্গে ফেনী জেলা আওয়ামী লীগের আইন বিষয়ক সম্পাদক অ্যাডভোকেট এম. শাহজাহান সাজু বলেন, আইনজীবী সমিতির সাবেক সভাপতি আনোয়ারুল করিম ফারুককে ডামি প্রার্থী উল্লেখ করে সংবাদ প্রকাশ করায় দৈনিক ফেনীর সময় পত্রিকার সম্পাদক ও প্রধান প্রতিবেদকের বিরুদ্ধে আদালতে ১০ কোটি টাকার মানহানি মামলা হয়েছে। তবে, এ বিষয়ে আদালত বৃহস্পতিবার কোনো আদেশ দেননি। আগামী রোববার আদালত মামলাটি আমলে নিয়ে একটি আদেশ দিতে পারেন এমন সম্ভাবনা রয়েছে।
প্রসঙ্গত, গত ৩ ডিসেম্বর জেলা রিটার্নিং কর্মকর্তার কার্যালয়ে আওয়ামী লীগ নেতা অ্যাডভোকেট আনোয়ারুল করিম ফারুকের মনোনয়নপত্র যাচাই-বাছাইয়ে প্রার্থিতা বাতিল হয়। পরে নির্বাচন কমিশনে আপিল করে প্রার্থিতা ফিরে পেয়েছেন তিনি। এ নিয়ে গত বুধবার দৈনিক ফেনীর সময় পত্রিকায় ডামি প্রার্থী উল্লেখ করে সংবাদ প্রকাশ হয়।