ঢাকার তেজগাঁও এলাকায় ট্রেনে দুর্বৃত্তদের দেওয়া আগুনে মা-ছেলের মৃত্যুর ঘটনায় নেত্রকোনার গ্রামের বাড়িতে চলছে শোকের মাতম। মঙ্গলবার (১৯ ডিসেম্বর) ভোরের দিকে ‘মোহনগঞ্জ এক্সপ্রেস’ ট্রেনের তিনটি বগিতে দেওয়া আগুনে মারা যান নাদিরা আক্তার পপি ও তার তিন বছরের ছেলে ইয়াসিন। তাদের মৃত্যুর খবর বাড়িতে এসে পৌঁছালে কান্নায় ভেঙে পড়েন স্বজনরা।
নিহতদের পরিবার ও স্থানীয়রা জানান, নেত্রকোনা সদর উপজেলার বরুনা গ্রামের আবদুল মজিদের ছেলে মিজানুর রহমান ঢাকার কাওরান বাজারে হার্ডওয়ারের ব্যবসা করেন। স্ত্রী নাদিরা আক্তার পপি ও দুই সন্তান ফাহিম ও ইয়াসিন আরাফাতকে নিয়ে আবদুল মজিদ কাওরান বাজারে বাসা ভাড়া করে থাকেন।
গত ১১ ডিসেম্বর স্বামীর গ্রামের বাড়িতে সন্তানদের নিয়ে বেড়াতে আসেন নাদিরা আক্তার পপি। গত রোববার নেত্রকোনা জেলা শহরের কুরপাড়ে ভাশুর আবদুল কাদিরের বাসায় মিলাদ মাহফিলে সন্তানদের নিয়ে যান নাদিরা আক্তার পপি। বেড়ানো শেষে গতকাল সোমবার রাতে ‘মোহনগঞ্জ এক্সপ্রেস’ ট্রেনে করে সন্তানদের নিয়ে ঢাকায় স্বামীর কাছে ফিরছিলেন তিনি। কিন্তু তার আর ফেরা হলো না। আদরের সন্তানসহ দুর্বৃত্তদের দেওয়া আগুনে পুড়ে মারা গেছেন নাদিরা আক্তার পপি।
মঙ্গলবার ভোরে ঢাকার তেজগাঁও এলাকায় ‘মোহনগঞ্জ এক্সপ্রেসে’ আগুন ধরিয়ে দেয় দৃর্বৃত্তরা। এসময় নাদিরা আক্তার পপি তার তিন বছরের ছেলে ইয়াসিনকে কোলে নিয়ে বসেছিলেন। আগুন ট্রেনের বগিতে ছড়িয়ে পড়লে নাদিরা আক্তার পপির ভাই হাবিবুর রহমান ভাগ্নে ফাহিমকে নিয়ে ট্রেন থেকে বাইরে লাফিয়ে পড়ে রক্ষা পান।
মা-ছেলের মৃত্যুর খবর নেত্রকোনায় বরুনা গ্রামে পৌঁছলে পরিবার এবং এলাকায় শোক দেখা দেয়। নিহত নাদিরা আক্তার পপির বাবা ফজলুল হক, শ্বশুর আবদুল মজিদসহ আত্মীয় স্বজনরা শোকে কাতর হয়ে পড়েন।
নিহত নাদিরা আক্তার পপির শ্বাশুড়ি শহর বানু বলেন, ‘কি দোষ করেছিল আমার বৌমা ও নাতি। কেন তাদের আগুনে পুড়ে মরতে হলো? আমি আর আমার দাদা ভাইয়ের মুখ দেখতে পাইতাম না। দাদা ভাই যাওনের সময় আমাকে বলে গিছিল- দাদু যাই। আবার আইবামনে।’
তিনি আরও বলেন, ‘বৌমা বলেছিল- মা শরীরের খেয়াল রাইখেন। আর কোনো দিন তাদের ফিরে পাইতাম না। আগুন যরাই দিয়া থাকুক আমি তাদের বিচার চাই।’
নাদিরা আক্তার পপির বাবা নেত্রকোনার পূর্বধলার আলমপুর গ্রামের ফজলুল হক বলেন, ‘আমি কি অপরাধ করেছিলাম। কি দোষে আমার নাতি ও মেয়েকে আগুন দিয়ে পুড়িয়ে মারতে হলো। আমি আমার মেয়ে ও নাতিকে আর ফিরে পাবো না। যারা আগুন দিছে তাদের বিচার চাই।’
প্রসঙ্গত, মঙ্গলবার ভোরে রাজধানীর তেজগাঁও রেলস্টেশনে মোহনগঞ্জ এক্সপ্রেস ট্রেনের তিনটি বগিতে আগুন ধরিয়ে দেয় দুর্বৃত্তরা। এতে মা ও ছেলেসহ চার জন মারা যান।