দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে মানিকগঞ্জ-২ আসনে অভ্যন্তরীণ কোন্দলকে আলিঙ্গন করে নির্বাচনি প্রচারণার মাঠে নৌকার মাঝি মমতাজ বেগম। কোনো ধরনের নিষেধাজ্ঞা না থাকায় দলীয় প্রার্থীর পক্ষে কাজ না করে স্বতন্ত্র প্রার্থীর পক্ষে একাধিক নেতাকর্মী নির্বাচনি মাঠে নেমেছেন।
তেমন কোনো দলীয় হেভিওয়েট নেতাকর্মী না থাকলেও সাধারণ ভোটার নিয়ে বর্তমান সংসদ সদস্য মমতাজ বেগম তার নির্বাচনি প্রচার-প্রচারণায় ব্যস্ত সময় পার করছেন। প্রবীণ আওয়ামী লীগ নেতাকর্মীদের নিয়ে মাঠে রয়েছেন দলটির কেন্দ্রীয় কমিটির সাবেক যুব ও ক্রীড়া বিষয়ক সম্পাদক দেওয়ান সফিউল আরেফিন টুটুল। অন্য দিকে জেলার শীর্ষ নেতাদের আশীর্বাদ নিয়ে স্বতন্ত্র প্রার্থী জাহিদ আহমেদ টুলু তার প্রচারণায় এগিয়ে রয়েছেন।
সিংগাইর -হরিরামপুর ও মানিকগঞ্জ সদর উপজেলার তিনটি ইউনিয়ন নিয়ে মানিকগঞ্জ-২ আসন গঠিত। দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে এই আসনে দলীয়সহ মোট ১০ জন প্রার্থী নির্বাচনে অংশ নিচ্ছেন। এখানে পুরুষ ভোটার ২ লাখ ৩৪ হাজার ৮৭৩ ও নারী ভোটার ২ লাখ ৩২ হাজার ১১৩ জন। তৃতীয় লিঙ্গের ভোটার রয়েছেন ৩ জন। মানিকগঞ্জ-২ আসনে মোট ভোটার সংখ্যা ৪ লাখ ৬৬ হাজার ৮৯৮ জন।
খোঁজ নিয়ে জানা যায়, মানিকগঞ্জ-২ আসনে ক্ষমতাসীন দলের বর্তমান সংসদ সদস্য মমতাজ বেগমের প্রতিদ্বন্দ্বী হিসেবে মাঠে আছেন ২০০৮ সালের নির্বাচনে নৌকা মার্কার প্রার্থী কেন্দ্রীয় আওয়ামী লীগের সাবেক যুব ও ক্রিয়া বিষয়ক সম্পাদক দেওয়ান সফিউল আরেফিন টুটুল। ২০০৮ সালে জোটগত সিদ্ধান্তের কারণে লাঙ্গল প্রতীকের জন্য এই আসন দলীয় সিদ্ধান্তে ছেড়ে দেন এই বর্ষীয়ান নেতা। আওয়ামী লীগের প্রবীণ নেতাকর্মীরা এবারের সংসদ সদস্য হিসেবে দেখতে চান তাকে। অপরদিকে, এই নেতার আপন চাচাতো ভাই জেলা আওয়ামী লীগের কোষাধ্যক্ষ দেওয়ান জাহিদ আহমেদ টুলুও নিজে স্বতন্ত্র প্রার্থী হিসেবে শক্ত অবস্থান তৈরি করেছেন। এই স্বতন্ত্র প্রার্থীর কব্জায় রয়েছে প্রায় অধিকাংশ ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যানসহ সাধারণ ভোটার।
সাধারণ ভোটারদের ধারণা, মমতাজ বেগমের সঙ্গে তার দলীয় আরো দুই স্বতন্ত্র প্রার্থীর ত্রিমুখী লড়াই হবে নির্বাচনি মাঠে। অন্যদিকে, সিংগাইর উপজেলা পরিষদের চেয়ারম্যান ও আওয়ামী লীগের নেতা বীর মুক্তিযোদ্ধা মুশফিকুর রহমান হান্নান সেচ্ছায় পদত্যাগ করে নৌকা মাঝি মমতাজ বেগমের সঙ্গে নির্বাচনি মাঠে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করছেন। এই আসনের হরিরামপুর অংশের উপজেলা পরিষদের চেয়ারম্যান দেওয়ান সাইদুর রহমানের সঙ্গে আওয়ামী লীগের কমিটি ও বালু মহল নিয়ে দ্বন্দের জেরে প্রকাশ্যে নৌকার মাঝির বিরুদ্ধে অবস্থান নিয়েছেন এই উপজেলা চেয়ারম্যান।
অপরদিকে, জেলা আওয়ামী লীগের বর্ষীয়ান দুই নেতাকে নিয়ে কুরুচি পূর্ণ মন্তব্য করায় ক্ষুব্ধ প্রবীণ নেতারা। ওই ঘটনার পর থেকেই নৌকার মাঝি মমতাজ বেগমের নির্বাচনি প্রচার-প্রচারণায় তেমন কোনো প্রবীন আওয়ামী লীগ নেতাকর্মীকে দেখা যায়নি।
সিংগাইর উপজেলা আওয়ামী লীগ নেতারা বলেন, নৌকার টিকিট পেয়ে মমতাজ বেগম দুইবার সংসদ সদস্য নির্বাচিত হয়েছেন। নির্বাচিত হওয়ার পর থেকেই প্রবীণ আওয়ামী লীগ নেতাদের অবমূল্যায়ন শুরু হয় এবং পরিবার কেন্দ্রিক কমিটি রাজনৈতিক সুযোগ-সুবিধা দিতে শুরু করেন মমতাজ বেগম। এই বলয় থেকে বেড় না হওয়ায় আমরা এবার সংসদ সদস্য হিসেবে অন্য কাউকে দেখতে চাই।
হরিরামপুর উপজেলার সাধারণ ভোটারা বলেন, আমাদের পুরো উপজেলাটাই পদ্মা নদীর কড়াল গ্রাসে দিন দিন ছোট হয়ে আসছে। নদী ভাঙন রোধ নামমাত্র জিও ব্যাগ ফেলে সান্তনা দেন বর্তমান সংসদ সদস্য মমতাজ বেগম। প্রকল্পে তার অনুসারীরা নিজেদের পকেট ভারি করে পুরো উপজেলার ক্ষতি করছে। মমতাজ বেগম আওয়ামী লীগের নৌকার মাঝি ও যারা স্বতন্ত্র প্রার্থী হিসেবে নির্বাচন করছেন তারাও আওয়ামী লীগের নেতা। আমরা এবার এমন প্রার্থীকে ভোট দিয়ে জয়ী করবো যে আমাদের হরিরামপুরের উন্নয়ন করবে।
স্বতন্ত্র প্রার্থী জেলা আওয়ামী লীগের কোষাধ্যক্ষ দেওয়ান জাহিদ আহমেদ টুলু বলেন, ‘আমি সাধারণ মানুষের নেতা হতে চাই। তাদের প্রতিনিধি হয়ে তাদের পাশে দাঁড়িয়ে সুখ-দুঃখের সঙ্গেী হতেই আমি নির্বাচনে অংশ নিচ্ছি। আমার বিশ্বাস মানিকগঞ্জ-২ আসনের সব ভোটারদের ভালোবাসা নিয়ে আমি জয়ী হবো ইনশাআল্লাহ।’
আওয়ামী লীগের কেন্দ্রীয় কমিটির সাবেক যুব ও ক্রিয়া বিষয়ক সম্পাদক ও স্বতন্ত্র প্রার্থী দেওয়ান সফিউল আরেফিন টুটুল বলেন, ‘২০০৮ সালে নৌকার মাঝি হিসেবে দলীয় মনোনয়ন পেয়েছিলাম। কিন্তু জোটগত সিদ্ধান্তের কারণে আমি নির্বাচনে অংশ গ্রহণ করিনি। আমার নির্বাচনি এলাকার মানুষের ভালোবাসার জন্যই এবার স্বতন্ত্র প্রার্থী হিসেবে নির্বাচন করছি। আশা রাখি, জনগণের ভালোবাসায় তাদের প্রতিনিধি হিসেবে এবার আমি বিপুল ভোটে জয়ী হবো ইনশাল্লাহ।’
মানিকগঞ্জ-২ আসনের নৌকা প্রতীকের প্রার্থী মমতাজ বেগম বলেন, ‘আমাকে আওয়ামী লীগ সভাপতি ও প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা নৌকার মাঝি হিসেবে মনোনীত করে যে দ্বায়িত্ব অর্পণ করেছেন আমার বিশ্বাস জনগণ ভোটের মাধ্যমে তার প্রমাণ দেবে। আমি আমার সংসদীয় আসনে যে কাজ করেছি তাতে আল্লাহ রহমতে সাধারণ ভোটার ও দলীয় নেতাকর্মীরা তাদের আমানত (ভোট) দিয়ে পুনরায় নৌকাকে বিজয়ী করবেন।
জেলা নির্বাচন কর্মকর্তা মুহাম্মদ আমিনুর রহমান মিঞা বলেন, এই আসনে মোট ১০ জন প্রার্থী নির্বাচনে অংশগ্রহণ করেছেন। নিজ নিজ প্রতীক পাওয়ার পর থেকেই প্রার্থীরা প্রচার প্রচারণা চালিয়ে যাচ্ছেন।