দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে খুলনার ছয়টি আসনে জাতীয় পার্টির (জাপা) ছয় প্রার্থী চূড়ান্ত প্রতিদ্বন্দ্বিতায় কাগজে-কলমে থাকলেও তারা ভোটের মাঠে নেই। প্রতীক বরাদ্দের পর নির্বাচনি প্রচারণা চালানোর আর দুই দিন বাকি থাকলেও দৃশ্যমান তেমন কোনো প্রচারে নামেননি এই ছয় প্রার্থী। বিষয়টি নিয়ে দলের মধ্যেই তৈরি হয়েছে প্রশ্ন।
এদিকে, খুলনা-৬ আসনে জাপা প্রার্থী এসএম শফিকুল ইসলাম মধু গতকাল মঙ্গলবার প্রথমবারের মতো কয়রা-পাইকগাছায় নামমাত্র গণসংযোগ করেন। যদিও তার পোস্টার দেখা যায়নি কোথাও। নেই কোনো নির্বাচনি কার্যালয়ও।
জাতীয় পার্টির নেতাকর্মীরা জানিয়েছেন, মূলত খুলনার একটি আসনেও আওয়ামী লীগ জাতীয় পার্টিকে ছাড় না দেওয়ায় নেতাকর্মীরা ক্ষুব্ধ ও হতাশ। তাদের ধারণা ছিল, খুলনা-৬ আসনটি আওয়ামী লীগ জাতীয় পার্টিকে ছেড়ে দেবে, কিন্তু তা হয়নি।
এর আগে গত ২১ ডিসেম্বর খুলনা নগরীর ডাকবাংলো মোড়ে জাতীয় পার্টির কার্যালয়ে অনুষ্ঠিত সভায় দলের একাধিক নেতা জানান, খুলনা-৩ আসনের প্রার্থী মো. আব্দুল্লাহ আল মামুন, খুলনা-৫ আসনের প্রার্থী মো. শাহীদ আলম ও খুলনা-৬ আসনের প্রার্থী শফিকুল ইসলাম মধু নির্বাচন থেকে এখনই সরে যাওয়ার পক্ষে মত দেন। তবে, অন্য তিন প্রার্থী দলের নেতাদের মনোভাবের বিষয়টি কেন্দ্রীয় কমিটিকে জানিয়ে তাদের সিদ্ধান্ত অনুযায়ী পরবর্তী পদক্ষেপ নেওয়ার পক্ষে মত দেন। তবে, সর্বশেষ কেউ সরে না গেলেও মাঠের পরিবর্তে ‘কাগুজে বাঘ’ হয়ে রয়েছেন তারা।
খুলনা-৩ আসনের প্রার্থী ও মহানগর জাতীয় পার্টির সাধারণ সম্পাদক মো. আব্দুল্লাহ আল মামুন বলেন, ‘আসন ভাগাভাগি নিয়েই মূলত নেতাকর্মীদের মধ্যে ক্ষোভ। আওয়ামী লীগ জাতীয় পার্টিকে ২৬টি আসন দেওয়ার বিষয়টি প্রকাশ করায় জটিলতা তৈরি হয়েছে। ওই আসনগুলোর বাইরে আমরা যাতে ভোট না পাই সেই ধরনের একটা কাজ হয়ে গেছে। এখন তো মানুষ আমাদের দালাল বলছে। আমরা ভোটারদের কাছে গিয়ে কী বলব?’
খুলনা-২ আসনের প্রার্থী মো. গাউসুল আজম বলেন, ‘দলের নেতাকর্মীর মধ্যে ক্ষোভ ও অসন্তোষ বিরাজ করায় আমরা প্রচার শুরু করিনি।’
খুলনা-১ আসনের প্রার্থী কাজী হাসানুর রশীদ বলেন, ‘কিছু বিষয়ে সিদ্ধান্তহীনতার কারণে এখনো নির্বাচনি প্রচারে নামিনি। আমরা ঢাকায় গিয়ে কেন্দ্রীয় নেতাদের সঙ্গে কথা বলে পরবর্তী সিদ্ধান্ত নেব।’
খুলনা-৫ আসনের প্রার্থী মো. শাহীদ আলম বলেন, ‘খুলনায় জাতীয় পার্টিকে একটি আসনেও ছাড় দেয়নি আওয়ামী লীগ। সে কারণে দলের নেতাকর্মীর মধ্যে ক্ষোভ রয়েছে। সভায় দলের নেতারা আমাদের নির্বাচনে প্রতিদ্বন্দ্বিতা না করার জন্য বলেছেন।’
এদিকে, নির্বাচনের কয়েক দিন বাকি থাকতে খুলনা-৬ আসনে জাতীয় পার্টির ‘লাঙ্গল’ প্রতীকের মাইক প্রচারের শব্দ শোনা গেছে। তবে কোথাও কোনো পোষ্টার চোখে পড়েনি, এখনো নেই কোনো গণসংযোগ। (কয়রা-পাইকগাছা) উপজেলা নিয়ে সংসদীয় আসন খুলনা-৬। এই আসনে নির্বাচনে ৭জন প্রার্থী অংশ নিয়েছে।
জাতীয় পাটির শফিকুল ইসলাম মধু বাদে অন্য ৬ জন প্রার্থীর পোষ্টার সাটানো, লিফলেট বিতরণ, গণসংযোগসহ মাইকে প্রচার শুরু করেছেন ১৮ ডিসেম্বর থেকে। অথচ জাতীয় পার্টীর শফিকুল ইসলাম মধু নির্বাচনি এলাকায় এসেছেন কিনা তা কেউ বলতে পারেন না। নির্বাচনি এলাকায় জনপ্রিয় ব্যক্তি এলাকার সন্তান জাতীয় পার্টির কেন্দ্রীয় সদস্য মোস্তফা কামাল জাহাঙ্গীরকে মনোনয়ন না দেওয়ায় বহিরাগত শফিকুল ইসলাম মধুকে মনোনয়ন দেওয়ায় নেতাকর্মীরা হতাশ ও ক্ষুব্দ।
নেতাকর্মীদের তোপের মুখে পড়ার ভয়ে এতদিন শফিকুল ইসলাম মধু এলাকায় আসেননি বলে অনেকেই ধারণা করছেন। লাঙ্গল এর দুর্গ বলে পরিচিত (কয়রা-পাইকগাছায়) এবার জাতীয় পার্টির ভরাডুবি হবে বলে রাজনৈতিক বিশেষজ্ঞরা মনে করছেন। দুই উপজেলা ও একটি পৌরসভা মিলে লাঙ্গলের প্রার্থী হাজার খানেক ভোট পাবেন কিনা তা নিয়ে অনেকেই সন্দেহ পোষণ করছেন। নির্বাচনের মাত্র চার দিন বাকি থাকতে শফিকুল ইসলাম মধুর খুলনা থেকে হটাৎ করে (কয়রা-পাইকগাছায়) আগমন ও মাইক প্রচার অন্য রহস্যের গন্ধ ছড়াচ্ছেন। অনেকেই মনে করছেন তিনি নির্বাচনের পূর্বে একটি নাটক মঞ্চস্থ করে নির্বাচন থেকে সরে দাঁড়াতে পারেন।
এ ব্যাপারে জাতীয় পার্টির কেন্দ্রীয় সদস্য ও কয়রা উপজেলা প্রেসক্লাবের সভাপতি মোস্তফা শফিকুল ইসলাম ঢালী বলেন, নির্বাচনের আর মাত্র চার দিন বাকি। লাঙ্গল এর প্রার্থী শফিকুল ইসলাম মধু নির্বাচনি এলাকায় এসেছেন বলে শুনেছি। এতদিন তার কোনো হদিস না থাকায় নেতাকর্মীরা হতাশ ও ক্ষুব্ধ। তার সঙ্গে তৃণমূল পর্যায়ের কোনো নেতাকর্মী নেই। তার এই ব্যর্থতার কারণে এবারের নির্বাচনে লাঙ্গলের ভরাডুবি হবে বলেও জাতীয় পার্টির নেতাকর্মীরা মনে করছেন।
নেতাকর্মীরা (কয়রা-পাইকগাছায়) জাতীয় পার্টীর এই দূরাবস্থার জন্য (বহিরাগত) জেলার সভাপতি শফিকুল ইসলাম মধুকেই দায়ী করেন।
খুলনা-৬ আসনের প্রার্থী ও জেলা জাতীয় পার্টির সভাপতি শফিকুল ইসলাম মধু বলেন, কেন্দ্রীয় নেতাদের সঙ্গে সার্বিক পরিস্থিতি নিয়ে আলোচনার পর গতকাল মঙ্গলবার নির্বাচনি এলাকায় গণসংযোগ ও ভোটারদের সঙ্গে মতবিনিময় করেছেন তিনি।
জাপা মনোনীত খুলনা-৪ আসনের প্রার্থী মো. ফরহাদ আহমেদ দাবি করেন, তিনি এলাকায় গণসংযোগে আছেন। তবে তার কয়েকটি পোস্টার ছাড়া দৃশ্যমান কোন তৎপরতা ভোটাররা দেখেননি।