সংস্কারের অভাবে বেহাল অবস্থায় রয়েছে বাংলার মুঘল সুবেদার শাহ সুজার আমলে নির্মিত মল্লিকপুর জামে মসজিদ। ঝালকাঠি জেলার নলছিটি পৌরসভার ৫ নম্বর ওয়ার্ডের নলছিটি-বরিশাল সড়কসংলগ্ন মল্লিকপুর এলাকায় প্রাচীন এই মসজিদের অবস্থান। এক মিনারবিশিষ্ট এই মসজিদটি সপ্তদশ শতকের মাঝামাঝি সময়ে তৈরি বলে ধারণা করা হয়।
মসজিদটির নির্মাতা কে, তা নিশ্চিতভাবে জানা না গেলেও জনশ্রুতি রয়েছে, শাহ সুজা এর প্রতিষ্ঠাতা। সুজার সময়কালেই ঝালকাঠি অঞ্চলে সুজাবাদ নামে একটি গ্রামের পত্তন করা হয়। সেখানে দুটি কেল্লা নির্মাণ করা হয়েছিল। বলা হয়ে থাকে, জলদস্যুদের শায়েস্তা করার উদ্দেশ্যে শাহ সুজাই দুর্গগুলো নির্মাণ করেন।
এক গম্বুজবিশিষ্ট মসজিদটি মুঘল আমলের অনন্য স্থাপত্যকীর্তি। ৩০ ফুট লম্বা ও ১৭ ফুট চওড়া প্রাচীন এই মসজিদটি নলছিটি উপজেলার গুরুত্বপূর্ণ প্রত্ন নিদর্শন হিসেবে পরিচিত। এই প্রাচীন পুরাকীর্তিটি দেখতে অনেক পর্যটক ভিড় করেন মল্লিকপুর এলাকায়। তবে সঠিক নজরদারি ও সংস্কারের অভাবে এর সৌন্দর্য বিনষ্ট হওয়ার পথে।
শাহ সুজা মুঘল সম্রাট শাহজাহান এবং তার স্ত্রী মমতাজ মহলের দ্বিতীয় ছেলে। ১৬১৬ খ্রিস্টাব্দের ২৩ জুন তার জন্ম। সম্রাট শাহজাহান তার ছেলে শাহ সুজাকে ১৬৩৯ খ্রিস্টাব্দে বাংলার সুবেদার নিযুক্ত করেন। ১৬৪২ খ্রিস্টাব্দে তাকে ওড়িশা প্রদেশের দায়িত্বও অর্পণ করা হয়। ১৬৩৯ থেকে ১৬৬০ খ্রিস্টাব্দ পর্যন্ত ২০ বছরের কিছু বেশিকাল ধরে তিনি প্রদেশ দুটি শাসন করেন।
মসজিদটি দেখতে আসা বরিশালের বাসিন্দা মঈনুদ্দিন আহম্মেদ বলেন, ‘মসজিদটি দেখতে যেমন সুন্দর, তেমনি অনন্য এর নির্মাণশৈলী। ঐতিহাসিক এই নিদর্শনগুলো সরকারের সংরক্ষণ করা প্রয়োজন।’
মসজিদ কমিটির সভাপতি মো. হাবিবুর রহমান মল্লিক বলেন, ‘শাহ সুজার আমলে নির্মিত এই মসজিদটি নলছিটি উপজেলার অতীত ঐতিহ্য ও গৌরব বহন করে। বাংলাদেশ প্রত্নতত্ত্ব অধিদপ্তরের উদ্যোগে এই মসজিদটিকে সংরক্ষিত প্রাচীন পুরাকীর্তি হিসেবে ঘোষণা করা একান্ত প্রয়োজন।’
নলছিটি পৌরসভার মেয়র বীর মুক্তিযোদ্ধা আব্দুল ওয়াহেদ খান বলেন, ‘আমাদের মুরব্বিরা এই মসজিদে নামাজ পড়তেন। তখন শহরে তেমন কোনো মসজিদ ছিল না। সংরক্ষণের অভাবে মসজিদটি হারিয়ে যেতে বসেছে। মসজিদটি রক্ষা করা প্রয়োজন।’
নলছিটি উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) নজরুল ইসলাম বলেন, ‘প্রাচীন নিদর্শনগুলো বাংলাদেশ প্রত্নতত্ত্ব অধিদপ্তর রক্ষণাবেক্ষণ করে থাকে। নির্ধারিত ফরম পূরণ করে আবেদন করা হলে সংস্কারের জন্য সুপারিশ করব।’
বাংলার সুবেদার শাহ সুজার আমলে ঢাকার প্রাচীন মুঘল দালানগুলো মূলত নির্মিত হয়। দালানগুলো হলো- বড় কাটরা, ঈদগাহ, হোসেনি দালান এবং চুড়িহাট্টা মসজিদ। চকবাজারের একটু দক্ষিণে বুড়িগঙ্গার তীরে বড় কাটরা তৈরি করা হয়। মনোমুগ্ধকর স্থাপনাটি মূলত মুঘল যুবরাজ শাহ সুজার বসবাসের জন্য নির্মাণ করা হয়।