সারা বাংলা

আগৈলঝাড়ায় আড়াইশ বছরের ঐতিহ্যবাহী মার্বেল মেলা

বরিশালের আগৈলঝাড়ায় প্রায় আড়াইশ বছরের ঐতিহ্যবাহী মার্বেল মেলা অনুষ্ঠিত হয়েছে। উপজেলার রাজিহার ইউনিয়নের রামানন্দের আঁক গ্রামে পৌষ সংক্রান্তি উপলক্ষে গ্রামীণ সংস্কৃতি ও ঐতিহ্যের ধারক হিসেবে সোমবার (১৫ জানুয়ারি) এই মেলার আয়োজন করা হয়।

মেলা কমিটির সভাপতি রাম কৃষ্ণ হালদার বলেন, রামানন্দের আঁক গ্রামে ২৪৪ বছর আগে আউলিয়া মা সোনাই চাঁদের ৬ বছর বয়সে বিয়ে হয়। ৭ বছর বয়সে স্বামী মারা গেলে নিঃসন্তান অবস্থায় শ্বশুর বাড়িতে একটি নীম গাছের গোড়ায় শিবের আরাধনা ও পূজা-অর্চনা শুরু করেন তিনি। ক্রমশ তার অলৌকিক কর্মকাণ্ড ছড়িয়ে পড়তে শুরু করে। এরপর থেকে ওই স্থানে বাৎসরিক পূজার আয়োজন করা হয়। 

তিনি আরও বলেন, মা সোনাই চাঁদ আউলিয়ার জীবদ্দশায় আনুমানিক ১৭৮০ সাল থেকে শুরু হয়ে অদ্যাবধি প্রতিবছর পৌষ সংক্রান্তির দিনে নবান্নের অয়োজনের মাধ্যমে মেলা অনুষ্ঠিত হয়ে আসছে। তার মৃত্যুর পরে ওই বাড়িটি সোনাই আউলিয়ার বাড়ি হিসেবে এলাকায় পরিচিতি লাভ করে। প্রতিবছর এ দিনটি উপলক্ষে বৈষ্ণব সেবা, নাম সংকীর্ত্তন, কবিগান শেষে মেলায় আসা দর্শনার্থীদের প্রসাদ বিতরণ করা হয়। সনাতন ধর্মাবলম্বীদের অন্যতম আকর্ষণ পৌষ সংক্রান্তিতে বাস্তুপূজা উপলক্ষে ২৪৩ বছর ধরে এই গ্রামে মার্বেল মেলা অনুষ্ঠিত হয়ে আসছে।

মার্বেল খেলার মূল রহস্য সম্পর্কে স্থানীয় প্রবীর বিশ্বাস বলেন, আমাদের পূর্বপুরুষরা এ খেলার মাধ্যমে মেলার প্রচলন করেছিলেন। যা আজও অব্যাহত আছে। তাদের উত্তরসূরি হিসেবে আমরা সেই প্রাচীন ঐতিহ্য ধরে রাখার চেষ্টা চালাচ্ছি। দিনটি ঘিরে রামানন্দের আঁক গ্রামে মহোৎসবের আমেজ বিরাজ করছে। স্থানীয় অধিবাসীরা তাদের মেয়ে জামাইসহ আত্মীয়-স্বজনদের এ মার্বেল মেলায় আমন্ত্রণ জানান।

তিনি আরও বলেন, রামানন্দের আঁক মাধ্যমিক বিদ্যালয় ও কয়েক কিলোমিটার এলাকাজুড়ে মার্বেল খেলা চলে। রাস্তার ওপর, বাড়ির আঙিনা, অনাবাদী জমি ও বাগানসহ সর্বত্রই মার্বেল খেলার আসর বসে। বিদ্যালয় মাঠে বসে বাঁশ-বেত শিল্প সামগ্রী, মনিহারী, খেলনা, মিষ্টি, ফলসহ বিভিন্ন ধরনের দোকান। মেলায় শুধু আগৈলঝাড়া উপজেলাই নয়, পার্শ্ববর্তী কোটালীপাড়া, উজিরপুর, ডাসার, মাদারীপুর, কালকিনি, গৌরনদী, বানারীপাড়া, বাকেরগঞ্জসহ বিভিন্ন এলাকার হাজার হাজার নারী-পুরুষ অংশগ্রহণ করেন।

আগৈলঝাড়া থানার পরিদর্শক (তদন্ত) মো. জহিরুল ইসলাম জানান, গ্রামবাংলার ঐতিহ্যবাহী মার্বেল মেলায় অংশ নিতে আসা দর্শনার্থীদের জন্য কঠোর নিরাপত্তা ব্যবস্থা নেওয়া হয়েছে।