সারা বাংলা

সীমানুর চাকরি পাওয়ায় নারী শিক্ষায় দৃষ্টিভঙ্গি বদলেছে তার পরিবারের

প্রধানমন্ত্রীর কাছ থেকে চাকরি পাওয়ার পর নারী শিক্ষার প্রতি দৃষ্টিভঙ্গি বদলে গেছে বগুড়ার রিকশাচালক ফেরদৌস মন্ডলের পরিবার এবং প্রতিবেশিদের। তারাও চাচ্ছেন মেয়ে হোক বা গৃহবধূ। সবাইকে শিক্ষিত করতে। স্ত্রীকে সুশিক্ষিত করার সংকল্পে সফল হয়ে গর্বিত স্বামী ফেরদৌস মণ্ডলও।

বৃহস্পতিবার (১৯ জানুয়ারি) সন্ধ্যায় বগুড়ার গাবতলীর নশিপুর গ্রামের বাড়িতে কথা হয় ফেরদৌস-সীমানুর দম্পতির সঙ্গে।

এর আগে গাবতলীর নশিপুর ইউনিয়নের ঠিকাদারপাড়া এলাকার রিকশাচালক ফেরদৌস ও তার স্ত্রী সীমানুরের জীবনযাপন নিয়ে সংবাদমাধ্যমে প্রতিবেদন প্রকাশিত হয়। সেটি প্রধানমন্ত্রীর চোখে পড়ে। এরপর বিষয়টি জেনে সীমানুরকে চাকরি দিতে নির্দেশ দেন প্রধানমন্ত্রী। পরে গত ১৫ জানুয়ারি বগুড়া জেলা প্রশাসক সাইফুল ইসলাম প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার পক্ষে কালেক্টরেট পাবলিক স্কুল ও কলেজের প্রাথমিক শাখার সহকারী শিক্ষকের নিয়োগপত্র তুলে দেন সীমানুর খাতুনের হাতে।

অভাব অনটনের সংসারে প্রধানমন্ত্রীর দেওয়া চাকরিটি তাদের কষ্ট অনেকটা লাঘব করবে। তাই সীমানুরের পরিবারসহ আত্মীয়স্বজন প্রত্যেকেই খুশি। এমনটি জানিয়ে সীমানুরের চাচী শাশুড়ি মরিয়ম বেগম বলেন, সীমানুর খুবই কষ্ট করে লেখাপড়া শিখেছেন। দুটো সন্তান মানুষ করা, সংসার সামলানো। সেই সঙ্গে লেখাপড়া চালিয়ে যাওয়া অনেক কঠিন। এর মধ্যে ওদের তো অভাবের সংসার। খুব কষ্ট করে লেখাপড়া শিখে একটা চাকরি পেয়েছে। এজন্য আমরা অনেক খুশি।

সীমানুরের স্বামীর বড় ভাই ভাই লতিফ মণ্ডল বলেন, প্রধানমন্ত্রী আমাদের শিখিয়ে দিলেন, লেখাপড়া করলে চাকরি পাওয়া যায়। এটা তো আমরা জানতে পারলাম। এখন আমরা সাবধান হয়ে যাবো। যেভাবেই হোক পরিশ্রম করে ছেলেমেয়েকে, স্ত্রীকে লেখাপড়া শিখিয়ে শিক্ষিত করে তুলবো। যাতে করে তারা নিজেদের পায়ে দাঁড়াতে পারে। সীমানুর খাতুন বলেন, আমার স্বামীর প্রচণ্ড ইচ্ছা ছিল পড়ালেখা করার। কিন্তু তার বাবার আর্থিক অবস্থার কারণে সেটা করতে পারেননি। এজন্য আমাকে পড়িয়েছেন। আমি প্রাথমিকে, শিক্ষক নিবন্ধনে আবেদন করে রেখেছি। এর মধ্যে তো মাননীয় প্রধানমন্ত্রী ডিসি স্যারের মাধ্যমে চাকরির ব্যবস্থা করে দিলেন। চাকরি পেয়ে স্বামীর মনোভাব ভালো। তবে আমার স্বামীর জন্য আরও ভালো হতো যদি আমার চাকরিটা সরকারি হতো। তাহলে তাকে আর এতো কষ্ট করতে হতো না।

সীমানুরের স্বামী ফেরদৌস মণ্ডল বলেন, আমার বাবা খুব গরিব মানুষ ছিলেন। বাউল শিল্পী ছিলেন, গান-বাজনা নিয়ে থাকতেন। সংসারের কোনো আয় করতেন না। সে সময় খুব কষ্টে আমাদের দিন পার হয়েছে। এজন্য আমার পড়াশোনা আর হয়নি। আমার পুলিশ হওয়ার শখ ছিলো। সেটা করতে পারিনি। আয়-রোজগারের জন্য ব্যবসা বাণিজ্য করেছি। পরে ২০১০ সালে সীমানুরকে বিয়ে করি। তখন আমার মনে হয়েছিল আমি যদি আমার স্ত্রীকে শিক্ষিত করতে পারি তাহলে মাননীয় প্রধানমন্ত্রী তাকে একটা চাকরি দিবে। এরকম আশা নিয়েই তাকে সরকারি আজিজুল হক কলেজে মাস্টার্সে ভর্তি করাই। স্ত্রী চাকরি পাওয়াতে সবচেয়ে বেশি খুশি আমি।

তবে তিনি আশা করেন, তার স্ত্রীর জন্য সরকারি চাকরির ব্যবস্থা করবেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। তিনি প্রধানমন্ত্রীর প্রতি আবেদন জানিয়ে বলেন, আমার একটা আশা আমার স্ত্রীকে একটা সরকারি চাকরি দিতেন; তাহলে আর আমার রিকশা চালিয়ে খেতে হতো না। সন্তানদের ভালো স্কুলে পড়াতে পারতাম। নিজে ব্যবসা করতাম। ভবিষ্যত নিয়ে চিন্তা করতে হতো না।

বগুড়া কালেক্টরেট পাবলিক স্কুল ও কলেজের প্রধান শিক্ষক মো. আল মামুন সরদার বলেন, ১৫ জানুয়ারিতে সীমানুর খাতুনকে নিয়োগ দেয়া হয়। তবে তিনি একটি এনজিওতে ছোট বাচ্চাদের পড়ান। সেখানকার কাজ বুঝিয়ে দিয়ে ফেব্রুয়ারির ১ তারিখ থেকে স্কুলে পাঠদান শুরু করবেন।

তিনি আরও বলেন, সীমানুর খাতুন একজন সংগ্রামী নারী। তার স্বামীর রিকশা চালানোর অর্থ দিয়ে তিনি এমএ পাশ করেছেন। এমন একজন নারীকে আমাদের এখানে কর্মসংস্থানের ব্যবস্থা করতে পেরে আমরাও বেশ আনন্দিত। তার মতো আরও যারা সংগ্রামী নারী রয়েছে তাদের কাছে এটি একটি দৃষ্টান্ত হবে।