সারা বাংলা

অতিরিক্ত শীতে পর্যটক কমেছে কক্সবাজারে

অন্যান্য সময়ে কক্সবাজারে থাকে পর্যটকদের সরব উপস্থিতি। দেশ-বিদেশের বিভিন্ন প্রান্ত থেকে আসেন বিপুল পরিমাণ মানুষ। সমুদ্র সৈকত ও অন্যান্য পর্যটন স্পটে তিল ধারণের ঠাঁই থাকে না। কিন্তু, বর্তমানে তুলনামূলক কম পর্যটকের পদচারণা রয়েছে এখানে। অতিরিক্ত শীতের কারণে কক্সবাজারে পর্যটক কম আসছেন বলে জানিয়েছেন পর্যটন সংশ্লিষ্টরা। 

সাধারণত, শীতকালে বেড়ানোর জন্য পর্যটকদের অন্যতম গন্তব্য হয় কক্সবাজার। কিন্তু, দেশের উত্তরাঞ্চলসহ অন্যান্য এলাকায় শৈত্যপ্রবাহ বা অতিরিক্ত শীতের কারণে লোকজন তুলনামূলক বেশি ঘরমুখী হয়েছেন। ঘরের বাইরে বের হওয়া বা ঘুরতে যাওয়ার আগ্রহ নেই বেশিরভাগ মানুষের। ফলে, কক্সবাজারসহ বিভিন্ন পর্যটন স্পটে এর বিরূপ প্রভাব পড়েছে। 

কক্সবাজারের কলাতলী সৈকত এলাকার পুরনো ব্যবসায়ী রাশেদ-উন-নবী বলেছেন, ‘৩০ বছর ধরে ঝিনুকের জুয়েলারি বিক্রি করি। সারা বছর নানা সঙ্কটে গেলেও শীতের মৌসুমে ভালো ব্যবসার আশা নিয়ে থাকি। কিন্তু, এবারের শীত মৌসুমে এ পর্যন্ত সেই আশা পূরণ হয়নি। আগের বছরগুলোতে শীতের মৌসুমে পা ফেলার মতো জায়গা থাকে না কক্সবাজারে। কিন্তু, এবার পর্যটক কম। ফলে, আমাদের ব্যবসাও তেমন ভালো যাচ্ছে না। তবে, আশা ছাড়ছি না। শীত কমলে পর্যটক আসবে। আমাদের ব্যবসা ভালো হবে, এই প্রত্যাশায় আছি।’

সেন্টমার্টিন বিচ ইকো রিসোর্টের মালিক জসিম উদ্দিন শুভ বলেছেন, ‘সেন্টমার্টিনে চট্টগ্রাম থেকে দুটি, কক্সবাজার শহর থেকে একটি এবং টেকনাফ ঘাট থেকে সাতটি পর্যটকবাহী জাহাজে পর্যটক আসে। আগে এসব জাহাজে ৫০০ জন করে আসলেও ৫ হাজার পর্যটক হতো সেন্টমার্টিন দ্বীপে। কিন্তু, বর্তমানে দ্বীপে প্রতিদিন ১০টি জাহাজ এলেও আগের তুলনায় পর্যটক কম। আগের মতো ব্যবসা এখন নেই সেন্টমার্টিন দ্বীপে। আশানুরূপ পর্যটক না থাকায় ব্যবসায় ভাটা পড়েছে। আশা করছি, দ্রুত এই সঙ্কট কাটিয়ে ঘুরে দাঁড়াবে পর্যটন খাত।’

সমুদ্র সৈকতে ভ্রাম্যমাণ দোকানি মো. আসিফ বলেছেন, ‘আগে শুধু সুগন্ধা পয়েন্টেই বেচাকেনা শেষ করে বাড়ি চলে যেতে পারতাম। কিন্তু, এখন কলাতলী, সুগন্ধা ও লাবণী পয়েন্টে ঘোরাঘুরি করেও আগের মতো বেচা-বিক্রি নেই।’

কক্সবাজার হোটেল-মোটেল-গেস্ট হাউস মালিক সমিতির সভাপতি আবুল কাশেম সিকদার বলেছেন, ‘কক্সবাজারের পাঁচ শতাধিক হোটেল-মোটেলে প্রায় ৮৫ শতাংশ কক্ষ বুকিং হয়েছে। বর্তমানে জেলায় লক্ষাধিক পর্যটক অবস্থান করছে। উত্তরের জেলাগুলোতে শীতের কারণে পর্যটকরা ঘর থেকে বের হচ্ছেন না। এছাড়া, নির্বাচন-পরবর্তী সময়ে লোকজন একটু বিশ্রামে আছে। শীত কমলে অনেক পর্যটক কক্সবাজারে আসবে। তাদের জন্য নানা ধরনের সুযোগ-সুবিধা আছে।’

কক্সবাজার জেলা প্রশাসনের পর্যটন সেলের নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেট মোহাম্মদ মাসুদ রানা বলেছেন, ‘কক্সবাজারে আগের মতো পর্যটকের চাপ নেই। তুলনামূলকভাবে পর্যটক কম রয়েছে। হোটেল-মোটেলগুলোতে ৭০ থেকে ৮০ শতাংশ কক্ষ বুকিং আছে। তবে, পর্যটকের সংখ্যা সামনে বাড়তে পারে। যেসব পর্যটক কক্সবাজারে বেড়াতে এসেছেন, জেলা প্রশাসনের পক্ষ থেকে তাদের জন্য নানা সুযোগ-সুবিধা আছে। প্রতিটি পয়েন্টে আমাদের মোবাইল নম্বর দেওয়া আছে। কোনো পর্যটক বা দর্শনার্থী হয়রানির শিকার হলে আমাদের অভিযোগ করলে যথাযথ ব্যবস্থা নেওয়া হবে। বিচে আমাদের কর্মী আছে। সমুদ্রের জোয়ার-ভাটার সময় পর্যটকদের বিভিন্ন নির্দেশনা, তথ্যসহ সেবা দিয়ে যাচ্ছে তারা।’

গেল কয়েকদিনে দেশের কয়েকটি জেলায় শৈত্যপ্রবাহ ও বৃষ্টিপাত হয়েছে। কক্সবাজারে বৃষ্টিপাতের সম্ভাবনা থাকলেও বৃষ্টিপাত হয়নি। পরে আবহাওয়া অনুকূলে ফিরেছে বলে জানিয়েছে কক্সবাজার আবহাওয়া অফিস। 

কক্সবাজার আবহাওয়া অফিসের সহকারী আবহাওয়াবিদ আবদুল হান্নান বলেছেন, ‘শুক্রবার (১৯ জানুয়ারি) থেকে কক্সবাজারে শীতের তীব্রতা তেমন একটা নেই। গতকাল থেকে তাপমাত্রা সাড়ে ১৫ ডিগ্রির ওপরে আছে। সারা দেশে বিচ্ছিন্নভাবে বৃষ্টিপাত হয়েছিল। কক্সবাজারে বৃষ্টির সম্ভাবনা থাকলেও আবহাওয়া অনুকূলে আসায় বৃষ্টি হয়নি। তবে, আগামী কয়েকদিনে বৃষ্টির সম্ভাবনা না থাকলেও তাপমাত্রা কমে শীতের তীব্রতা বাড়ার সম্ভাবনা বেশি আছে।’