সারা বাংলা

নদী দূষণ ও দখল নিয়ে নাগরিক ভাবনা’র আয়োজন

নারায়ণগঞ্জে নদী দূষণ ও দখল নিয়ে নাগরিক ভাবনা শীর্ষক আলোচনা সভা করেছে পরিবেশ রক্ষা ও উন্নয়ন সোসাইটি।

রোববার (২১ জানুয়ারি) বিকেলে নারায়ণগঞ্জ শহরের চাষাড়া কেন্দ্রীয় শহীদ মিনারে এ আলোচনা সভা অনুষ্ঠিত হয়েছে।

শীতলক্ষ্যা নদীসহ বিভিন্ন নদী দূষণ মুক্ত করে নারায়ণগঞ্জকে সুন্দর করে গড়ে তোলার লক্ষ্যে পরিবেশ রক্ষা ও উন্নয়ন সোসাইটির চেয়ারম্যান মোহাম্মদ হোসাইনের সভাপতিত্বে অনুষ্ঠিত নাগরিক ভাবনায় উম্মুক্ত আলোচনা করেন মানব কল্যাণ পরিষদের চেয়ারম্যান এম এ মান্নান ভূঁইয়া, এশিয়ান নারী ও শিশু অধিকার ফাউন্ডেশনের নারায়ণগঞ্জ সভাপতি এম এ মুহিন, সাধারণ পাঠাগারের সাধারণ সম্পাদক নাজমুল হাসান রুমি, পরিবেশ গবেষক খালেদ সাইফুল্লাহ, পরিবেশ রক্ষা ও উন্নয়ন সোসাইটির কর্মকর্তা জহিরুল ইসলাম খোকন, নদী খাল ও পরিবেশ রক্ষা কমিটির প্রতিনিধি শফিকুল ইসলাম ঢালী, নারায়ণগঞ্জ সাংবাদিক ফোরামের সভাপতি আবদুল্লাহ আল মামুন, নারী উদ্যোক্তা বুবলী আক্তার, ইয়ুথ এন্ডিং হাঙ্গার প্রজেক্টের জেলার যুগ্ম সমন্বয়কারী রাকিবুল ইসলাম ইফতিসহ পরিবেশ আন্দোলনের স্বেচ্ছাসেবী মো. আলী, ফজলুল হক ভূঁইয়া, জহিরুল ইসলাম, মোশাররফ হোসেন, মো. সিরাজ ও গণমাধ্যমকর্মী মোক্তার হোসেন। 

বক্তারা তাদের বক্তব্যে বলেন, বাঙালির সভ্যতা-সংস্কৃতি গড়ে উঠেছে নদীকে কেন্দ্র করেই। মিশরকে নীল নদের দান বলা হয়; তেমনি নদীমাতৃক বাংলাদেশকে গঙ্গা, ব্রহ্মপুত্র, যমুনা নদ-নদীর দান বলা যায়। বাংলাদেশের ওপর দিয়ে বয়ে গেছে অভিন্ন ৫৭টি নদী। নদী বিধৌত এদেশে ছোট-বড় মোট ২৩০টি নদী আছে আর শাখা-প্রশাখাসহ নদীর সংখ্যা প্রায় ৮০০টি। এ নদীগুলো সারাদেশে রক্তের শিরা-উপশিরার মতো বহমান। মেঘনা, ব্রহ্মপুত্র, শীতলক্ষ্যা, ধলেশ্বরী, বুড়িগঙ্গা এবং বালু নদী পরিবেষ্টিত নারায়ণগঞ্জ জেলা। এই নদীগুলো নারায়ণগঞ্জের পরিবেশের বিচিত্র অনুষঙ্গ। আমাদের দেশের একটি বৃহৎ জনগোষ্ঠীর জীবন ও জীবিকার সম্পর্ক রয়েছে নদীর সাথে। খরস্রোতা নদীগুলোতে জেলেরা মাছ ধরত, নৌকাবাইচ হতো, উৎসবের আমেজে মেতে উঠতো নদী পাড়ের মানুষগুলো। কৃষি, মৎস্য, জেলেদের পেশা এবং সংস্কৃতির পাশাপাশি মানুষের নিত্যদিনের কাজের জন্য প্রয়োজনীয় প্রাকৃতিক সম্পদ সবকিছুর একমাত্র উৎস ছিল এই নদীগুলো। বাংলাদেশের নদীগুলো মিঠা পানির প্রধান উৎস এবং দেশের প্রাকৃতিক সম্পদ। কিন্তু আমাদের দায়িত্বহীনতায় নদীগুলো দখল ও দূষণের শিকার। গ্রাম থেকে শহর পর্যন্ত সর্বত্রই ময়লা আবর্জনা নদীতে ফেলছি।  কিন্তু সেই নদী আজ দখল, দূষণ আর ভরাটের প্রতিযোগিতায় বিপন্ন; অনেকাংশে বিলুপ্ত। নদীগুলোর নাব্যতা হারানোর নানাবিধ কারণের মধ্যে অবৈধ দখলদারিত্ব, অপরিকল্পিত নদীশাসন, দূষণ, ভরাট, অপরিকল্পিত ড্রেজিং, ইচ্ছামতো বাঁধ নির্মাণ ইত্যাদি অন্যতম। সব নিয়মনীতি উপেক্ষা করে নদীর তীর ঘেঁষে গড়ে উঠেছে বড় বড় কলকারখানা, শত শত বাঁধ। দূষণ-দখলের কবল থেকে কিছুতেই বাঁচানো যাচ্ছে না ব্রহ্মপুত্র, মেঘনা আর শীতলক্ষ্যা নদীকে। প্রতিদিনই বাড়ছে দূষণ; বাড়ছে দখলদারদের সংখ্যাও। প্রভাবশালীরা নদী ভরাট করে দখলের উৎসবে মেতেছে। নদীগুলোকে গিলে খাচ্ছে পলিথিনসহ শিল্প-কারখানার বিষাক্ত কেমিক্যাল ও বর্জ্য, হাসপাতাল-ক্লিনিকের পরিত্যক্ত কেমিক্যাল, লঞ্চ-জাহাজের পোড়া তেল, মবিল, ওয়াসার পয়ঃবর্জ্য, গৃহস্থালি বর্জ্য প্রভৃতি। নদীর মিঠা পানির মাছ বিলুপ্ত হয়েছে বহু আগে। জীব বৈচিত্র্যও নেই। এ নদীর পানিতে দ্রবীভূত অক্সিজেন প্রায় শূন্যের কোঠায়। আদালতের রায় অনুযায়ী নদীগুলো এখন 'জুরিসটিক পারসন' বা 'লিগ্যাল পারসন'। এর মধ্য দিয়ে মানুষের মতো নদীরও মৌলিক অধিকার স্বীকৃত হয়েছে। সুতরাং নদীকে হত্যা করার অর্থ হলো বর্তমান ও ভবিষ্যৎ প্রজন্মকে হত্যা করা।

আদালত স্পষ্ট করে বলেছেন, বাংলাদেশের সব নদীই মূল্যবান এবং সংবিধান, বিধিবদ্ধ আইন ও পাবলিক ট্রাস্ট মতবাদ দ্বারা সংরক্ষিত।বাংলাদেশকে 'নদীমাতৃক' বলা হয়। নদী মায়ের মতো; নদী মা হিসেবে স্বীকৃত। তেমনি নদী দূষণ মাকে হত্যা করার সামিল। এই নদী দূষণ ও দখলে যারা জড়িত; তাদের সহযোগিতা করছেন সংশ্লিষ্ট মন্ত্রণালয়গুলোর অসাধু কিছু কর্মকর্তা ও কর্মচারী। এ সকল অসৎ কর্মকর্তা-কর্মচারীকে চিহ্নিত করে তাদেরকে শাস্তির আওতায় আনতে হবে। যে সকল শিল্প প্রতিষ্ঠান নদী দূষণে ওতপ্রোতভাবে জড়িত সেগুলো প্রয়োজনে বন্ধ করে দিতে হবে।

নদী দখল দূষণকারী প্রতিষ্ঠানগুলো ১৮ কোটি মানুষের জীবনের হুমকি। তাই উন্নয়নের নামে অসাধু শিল্প প্রতিষ্ঠান অপ্রয়োজনীয় বলেও বক্তারা উল্লেখ করেন।

যারা নদী দখল করে নদীর নাব্যতা ধ্বংস করছে তাদের শাস্তির আওতায় আনার জন্য উক্ত আলোচনা সভায় বক্তারা দাবি জানান।