সারা বাংলা

ফেনীতে ভারতীয় বানরের আক্রমণে ফসলের ব্যাপক ক্ষতি

ফেনীর সীমান্তবর্তী উপজেলা ফুলগাজীতে ভারতের সীমান্ত এলাকা অতিক্রম করে বাংলাদেশে ঢুকে পড়ছে শত শত বানর। খাবারের সন্ধানে সীমান্ত এলাকায় এসে এসব বানর নষ্ট করছে কৃষকের ক্ষেত ও ফলের বাগান।

গত প্রায় ১ মাস ধরে বানরের উৎপাতে দিশেহারা হয়ে পড়েছেন ৫ গ্রামের প্রায় আড়াই শতাধিক কৃষক। এলাকায় বানরের উৎপাত বেড়ে যাওয়ায় দিশেহারা হয়ে পড়েছেন কৃষকরা। ফসল উৎপাদন করে লাভের পরিবর্তে পুঁজি তুলতে না পারার শঙ্কায় দিন কাটছে তাদের। দিনের বিভিন্ন সময় এসব বানর দলবেঁধে আলু, বেগুন, বরবটি, সিমসহ বিভিন্ন সবজির ক্ষেতে হানা দিয়ে ফসল নষ্ট করছে। বাড়িতে ঢুকে খেয়ে ফেলছে রান্না করা খাবার। সীমান্তবর্তী এলাকার প্রান্তিক কৃষকরা বানরের যন্ত্রণা থেকে মুক্তি পেতে বন বিভাগের সহযোগিতা কামনা করেছেন।

স্থানীয়রা বলছেন, ভারতের অন্য রাজ্যে বানরের উৎপাত বেড়ে যাওয়ায়, দেশটির সীমান্তরক্ষী বিএসএফ কয়েক হাজার বানর এনে ত্রিপুরা রাজ্যের বনাঞ্চলে অবমুক্ত করে। সেই বানরগুলোই বনাঞ্চলে খাবার না পেয়ে দলে দলে কাঁটাতার পেরিয়ে ছুটে আসছে বাংলাদেশের সীমান্তবর্তী এলাকার লোকালয়ে। আগে শীতকালে এসব এলাকায় ৫/১০টা বানর দেখা গেলেও এবারই এত সংখ্যক বানর একসাথে ফসলের মাঠে হানা দিচ্ছে। স্থানীয়দের দাবি একসাথে প্রায় হাজারখানেক বানর দলবদ্ধ হয়ে ফসলের ক্ষেতে আক্রমণ চালায়। এসময় মাঠে থাকা ৪/৫ জন কৃষক লাঠি-সোঠা নিয়ে তাড়ালেও তারা ভয় পায় না।

ফকিরের খিল এলাকার কৃষক ওমর ফারুক বলেন, আমরা দুই ভাই একসাথে প্রায় ৪৪ শতাংশ জমিতে লাউ, বেগুন, আলু ও মরিচ চাষ করেছি৷ গত এক মাস ধরে বানরের উৎপাতে আমাদের অনেক ফসল নষ্ট হয়েছে। বানরের দল আমার লাউ ও বেগুন ক্ষেতে ঢুকে অনেক লাউ ও বেগুন খেয়েছে এবং ছিঁড়ে ফেলেছে৷ কয়েকটি আলু ক্ষেতের গাছ উপড়ে ফেলেছে। এতে করে এবছর লাভ তো দূরের কথা প্রায় ১ লাখ টাকা লস হওয়ার আশংকা করছি।

করিম উল্লাহ নামে আরেক কৃষক বলেন, একটা দুইটা বানর হলে কৃষকরা তাড়াতে পারতো। একসাথে দু-চার পাঁচশ বানর তাড়ানো সম্ভব নয়। কৃষকের অনুপস্থিতি বুঝেই বানরের দল ফসলের মাঠে ঢুকে পড়ে। কোনোভাবেই বানরের উৎপাত ঠেকানো যাচ্ছে না।

আবুল খায়ের নামে পৈথারা এলাকার এক কৃষক বলেন, বানরের দল ধানের চারা নষ্ট করে ফেলছে। শীতকালীন সবজি খেতের ফসল খেয়ে ফেলে। এজন্য অনেক কৃষক এবার চাষাবাদও করতে চাচ্ছে না।

শাহাবুদ্দিন নামে এক কৃষক বলেন, বানরের দল ফল ও সবজি বাগানে ঢুকে মুহুর্তে সব তছনছ করে ফেলে। এত বানরের উৎপাত ঠেকানো আমাদের পক্ষে সম্ভব নয়। বন বিভাগ কিংবা কৃষি বিভাগ থেকে বানরের উৎপাত ঠেকাতে ব্যবস্থা নেওয়ার জোর দাবি জানাচ্ছি।

মুন্সিরহাট ইউনিয়নের ৪নং ওয়ার্ডের ইউপি সদস্য শাহাদাত হোসেন বলেন, কয়েকমাস ধরে ভারত থেকে ঝাঁকে ঝাঁকে নেমে আসা বানর ফল ও ফসল নষ্ট করায় অতিষ্ঠ স্থানীয় বাসিন্দারা। ফসল রক্ষায় বানর তাড়ানোর জন্য বন বিভাগের দ্রুত উদ্যোগ নেওয়া প্রয়োজন।

ফেনীর কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের উপ-পরিচালক মো.একরাম উদ্দিন বলেন, দেশের বিভিন্ন স্থানে সীমান্ত এলাকায় হাতি ও বানরের উৎপাতের সংবাদ পাওয়া যায়। তবে ফেনীতে হাতির উৎপাত নেই। ফুলগাজী উপজেলার কয়েকটি এলাকায় বানরের উৎপাতের বিষয়টি জেনেছি। যেহেতু এগুলো বন্যপ্রাণী এদের না খেপিয়ে কৌশলে ভয়ভীতি দেখিয়ে তাড়াতে হবে।

এ বিষয়ে জানতে চাইলে সামাজিক বন বিভাগ ফেনীর রেঞ্জ কর্মকর্তা বাবুল চন্দ্র ভৌমিক বলেন, বানরগুলো বনাঞ্চলে খাবার সংকটের কারণে মূলত লোকালয়ে নেমে এসেছে। বানর নিরীহ প্রাণী, এদের মারা যাবে না। আগুন জ্বালিয়ে ধোঁয়া দেখিয়ে ভয়ভীতি প্রদর্শন করে বানরগুলোকে তাড়াতে হবে। এ বিষয়ে কৃষকদের সচেতন করতে সীমান্তবর্তী এলাকায় বন বিভাগের লোকবল পাঠানো হবে।