সারা বাংলা

রূপপুর এনপিপি: রেকর্ড সময়ে স্বয়ংক্রিয় তাপ নিঃসরণ ব্যবস্থা সম্পন্ন

পাবনার রূপপুর পারমাণবিক বিদ্যুৎ প্রকল্পের দ্বিতীয় ইউনিটে ডিফ্লেকটরের অভ্যন্তরীণ ও বহিঃস্থ স্টিল কাঠামো স্থাপনের কাজ দুদিনেই শেষ হয়েছে, যা এ-সংশ্লিষ্ট কার্যক্রমে রেকর্ড। ডিফ্লেকটর, স্বয়ংক্রিয় তাপ নিঃসরণ ব্যবস্থার অন্তর্ভুক্ত; যা মানুষের হস্তক্ষেপ ও পাওয়ার সোর্স ছাড়া নিজ থেকেই কার্য সম্পন্ন করতে সক্ষম। 

রূপপুর এনপিপি নির্মাণ প্রকল্পের পরিচালক আলেক্সি দেইরী জানান, নির্ধারিত স্থানে ২ দিনেই ডিফ্লেকটর স্থাপন সত্যিই একটি রেকর্ড। দুজন জিওডেটিক প্রকৌশলী, ৫ জন উচ্চ দক্ষ ওয়েল্ডার (ঢালাইকারী) ও ৪২ জন অন্যান্য বিশেষজ্ঞ এ কাজে অংশ নেন। পরবর্তী ধাপে ডিফ্লেকটরের সার্ভিস প্ল্যাটফর্ম ও স্বয়ংক্রিয় তাপ নিঃসরণ ব্যবস্থার এয়ারডাক্ট (বায়ু নালী) বসানো হবে।

ডিফ্লেকটর কী 

ডিফ্লেকটর হচ্ছে স্টেইনলেস স্টিলের তৈরি সিলিন্ডার আকৃতির একটি কাঠামো। ডিফ্লেকটরের ওজন হয় ২১৫ টন, আর ব্যস প্রায় ২৫.৫ মিটার। এটির স্থাপন প্রক্রিয়া জটিল হওয়ায়, কাজটি দুই ধাপে সম্পন্ন করা হয়। 

স্বয়ংক্রিয় তাপ নিঃসরণ ব্যবস্থায় ডিফ্লেকটর হচ্ছে বায়ুগতির একটি কাঠামো, যা ভেন্টিলেশন চ্যানেলে অতিরিক্ত চাপ সৃষ্টির মাধ্যমে বায়ু চলাচলে দক্ষতা বাড়ানোর কাজ করে। পুরো ব্যবস্থাটি ‘প্রাকৃতিক সার্কুলেশন’ নিয়মে কাজ করে। বায়ুমণ্ডল থেকে বাতাস হিট এক্সচেঞ্জারে আসার পর উত্তপ্ত হয়। এরপর এয়ারডাক্টের মাধ্যমে রিয়্যাক্টর (চুল্লী) ভবনের ডোম’র (ডকুমেন্ট অবজেক্ট মডেল) শীর্ষে অবস্থিত আউটলেট হেডারের মধ্য দিয়ে বায়ুমণ্ডলে ফিরে যায়। এর ফলে, রিয়্যাক্টর কম্পার্টমেন্টের শীতলীকরণ ঘটে।

হিট এক্সচেঞ্জার

হিট এক্সচেঞ্জার এক ধরনের তাপ পরিবাহক। যেখানে পাশাপাশি দুটি প্লেট থাকে। এক প্লেটে গরম পানি প্রবাহিত করা হয়। আর অন্যটিতে ঠান্ডা পানি। গরম প্লেট থেকে ঠান্ডা প্লেটে তাপ স্থানান্তর হয়। এভাবে একাধিক প্লেট সমান্তরালভাবে সাজানো থাকে। 

রূপপুর এনপিপি নির্মাণ প্রকল্প সূত্রে জানা যায়, পারমাণবিক চুল্লীর ভবনের গম্বুজে ১৩৫ টন ও ৮০ টনের দুটি কাঠামো অংশের সর্বোচ্চ বিচ্যুতি ১০ মিলিমিটার। ডিফ্লেকটরের অভ্যন্তরীণ ও বহিঃস্থ অংশ দুটি +৬৪.৫ মিটার উচ্চতায় বসানো হয়েছে। ফলে, বর্তমানে চুল্লী ভবনের উচ্চতা দাঁড়িয়েছে ৭৪.৮৫ মিটার। 

উল্লেখ্য, রূপপুর পারমাণবিক বিদ্যুৎ প্রকল্পের দুটি ইউনিটে স্থাপিত হচ্ছে ‘থ্রি প্লাম প্রজন্মের’ রুশ ১২০০ ডব্লিউডব্লিউভিইআর (ওয়াটার-ওয়াটার পাওয়ার রিঅ্যাক্টর)। প্রকল্পটির মোট উৎপাদন ক্ষমতা হবে ২ হাজার ৪০০ মেগাওয়াট বিদ্যুৎ। এই রিয়্যাক্টরগুলো সব আন্তর্জাতিক নিরাপত্তা চাহিদা সম্পূর্ণভাবে পূরণ করতে সক্ষম। ২০১৫ সালের ২৫ ডিসেম্বর স্বাক্ষরিত জেনারেল কন্ট্রাকটের অধীনে রসাটমের প্রকৌশল শাখা প্রকল্পটি বাস্তবায়নের দায়িত্ব পালন করছে।