সারা বাংলা

গড়াই নদীর ভাঙনে দিশেহারা মালোপাড়ার বাসিন্দারা

মাগুরার শ্রীপুর উপজেলার গঙ্গারাম খালী এলাকায় গড়াই নদী থেকে বালু উত্তোলন করা হচ্ছে। ফলে নদীর তীরবর্তী মালো পাড়া এলাকায় দেখা দিয়েছে ভাঙন।

ইতোমধ্যে অসময়ের আকষ্মিক ভাঙনে মালোপাড়ার আটটি পরিবারের দশটি ঘর নদীতে বিলীন হয়ে গেছে। আরও সাতটি পরিবারের আরও বেশ কয়েকটি ঘর ঝুঁকিতে রয়েছে। বাড়িঘর  হারিয়ে  এসব পরিবার দিশেহারা হয়ে পড়েছেন।

দরিদ্র এসব পরিবারের সদস্যরা মাছ ধরে জীবিকা নির্বাহ করেন। নদী গর্ভে বসতবাড়ি ভেঙ্গে পড়ায় সর্বস্ব হারিয়ে খোলা আকাশের নিচে মানবেতর জীবনযাপন করছেন তারা। গতকাল শনিবার (২৭ জানুয়ারি) দুপুরে গিয়ে এ চিত্র দেখা গেছে।

সরেজমিনে দেখা যায়, উপজেলার গঙ্গারাম খালী মালোপাড়া থেকে দক্ষিণ দিকে প্রায় ২০০ গজ এলাকা ভাঙনের শিকার হয়েছে। মালোপাড়ার একটি বড় নদীতে বিলীন হয়ে গেছে। অন্যদিকে গড়াই নদীতে একটি খননযন্ত্র (ড্রেজার) রয়েছে। নদীর তীর সংরক্ষণের জন্য ঠিকাদার নদী থেকে বালু উত্তোলন করছেন। পাইপ দিয়ে নদীর তীরবর্তী লোকালয়ের খোলা জায়গায় বালু জমা করছেন।

এলাকাবাসীর অভিযোগ, নদী ভাঙন রোধে ঠিকাদারী প্রতিষ্ঠান মেসার্স আলিয়ার রহমান ২০২৩-২৪ অর্থ বছরে নদী শাসন প্রকল্পের আওতায় জিও ব্যাগ (বালু ভর্তি বস্তা) দিয়ে গড়াই নদীর পাড় সংরক্ষণের জন্য বালু উত্তোলন শুরু করেন। বালু স্তুপ আকারে বসত বাড়ির কাছে জমা করেন। বালুতে থাকা পানি চুইয়ে নদীর তীরবর্তী একটি বড় অংশে ধস নামে। এতে বেশ কয়েকটি ঘর নদীতে বিলীন হয়ে গেছে। আরও কিছু ঘর ভাঙনের ঝুঁকিতে আছে।

কয়েকজন বালু শ্রমিক জানান, খনন যন্ত্রের সাহায্যে নদী থেকে বালু তুলে পাইপের সাহায্যে খোলা জায়গায় নেওয়া হয়। তারা নদীর বিভিন্ন অংশ থেকে বালু তুলে বিভিন্ন ব্যবসায়ী, বাড়ি, পুকুর-ডোবা-বিল ও ঠিকাদারদের সরবরাহ করে থাকেন। শুধু তারা নয়, আরও চার-পাঁচটি খননযন্ত্র গড়াই নদী থেকে বালু উত্তোলন করছে।

বসত বাড়ি হারিয়ে কান্না জড়িত কণ্ঠে অসহায়ত্বের কথা বলছিলেন বাসন্তি মালো। তিনি জানান, বসত ঘর নদীতে ভেঙে তারা অসহায় হয়ে পড়েছেন। তাদের পক্ষে নতুন ঘর তৈরি করা সম্ভব নয়।

বসত বাড়ি হারিয়ে চোখের জল ফেলছেন ৮০ বছরের সুবীর চক্রবর্তী। তিনি জানান, একদিকে ভাঙ্গছে বসত-বাড়ি, অন্যদিকে অসহায় পরিবাগুলোর আর্তনাদ। যে ভিটে ছিল সোনার সংসার, সেটা এখন নদী গর্ভে।

মালোপাড়ার বাসিন্দা বিদ্যুৎ চক্রবর্তীসহ অন্যরা জানান, ভেঙ্গে গেছে ঘর বাড়ি। ফাটল দেখা দিয়েছে ঘরের মেঝেতে। অসময়ে গড়াই নদী ভাঙ্গনে বিলীনের পথে গঙ্গা রাম খালী মালো পাড়া। এখন থাকবো কোথায়?  সরকার আমাদের বাড়ি তুলে না দিলে গাছতলায় থাকতে হবে। ভাঙ্গন রোধে দ্রুত ব্যবস্থা না নিলে বিলীন হয়ে যাবে পুরো মালো পাড়া।

পানি উন্নয়ন বোর্ডের নির্বাহী প্রকৌশলী ঘটনাস্থল পরিদর্শন করে ক্ষতিগ্রস্থদের পুনর্বাসনের আশ্বাস দিয়েছেন। তবে এখনো কোনো কার্যকর ব্যবস্থা নেওয়া হয়নি। এ বিষয়ে ঠিকাদারী প্রতিষ্ঠানের সঙ্গে কথা হলে তারা জানান, বাঁধের কাজে ব্যবহারের জন্য বালু উত্তোলন করা হচ্ছে। কিন্তু তাদের ধারণা ছিলো না, বিষয়টি এমন হবে।

সংশ্লিষ্ট কাজের ঠিকাদার আরশাদ বিশ্বাস জানান, নদীর পাড়ে বালি রাখার জন্য ভূমিধসে কয়েকটি ঘর নদীতে বিলীন হয়েছে। কর্তৃপক্ষের সঙ্গে কথা বলে ক্ষতিগ্রস্তদের বিষয়ে ব্যবস্থা নিতে চেষ্টা চলছে।

মাগুরা পানি উন্নয়ন বোর্ডের নির্বাহী প্রকৌশলী সরোয়ার জাহান সুজন জানান, অপরিকল্পিত বালু উত্তোলনের কারণে এ ভাঙনের সৃষ্টি হয়েছে। নতুন করে জিওবি ব্যাগ দিয়ে তীর সংরক্ষণ করা হবে। যারা ঘর-বাড়ি হারিয়ে নিঃস্ব হয়েছেন, তাদের ব্যাপারে প্রশাসন ব্যবস্থা নিবে।