সারা বাংলা

পদত্যাগ করে এমপি হলেন স্বামী, মেয়র হতে চান স্ত্রী

রাজশাহীর তাহেরপুর পৌরসভার মেয়র ছিলেন আবুল কালাম আজাদ। পদত্যাগ করে নির্বাচিত হয়েছেন রাজশাহী-৪ (বাগমারা) আসনের সংসদ সদস্য (এমপি)। এখন মেয়র পদে উপনির্বাচন অনুষ্ঠিত হবে পৌরসভায়। সেই পৌরসভার মেয়র হতে চান আবুল কালাম আজাদের স্ত্রী শাইলা পারভীন। ‘জনগণের চাপে’ পড়ে ভোটে অংশগ্রহণ করবেন বলে জানিয়েছেন তিনি।

আগামী ৯ মার্চ এই পৌরসভায় মেয়র পদে উপনির্বাচন হবে। এতে মেয়রপ্রার্থী হিসেবে রয়েছেন সম্ভাব্য চার জন প্রার্থী। তবে দুই জন জানিয়েছেন, এমপিপত্নী শাইলা পারভীন প্রার্থী না হলেই কেবল তারা প্রার্থী হবেন। দলের ভেতর প্রতিযোগিতা করে তারা নির্বাচন করবেন না।

শাইলা প্রার্থী হলে তাকে সাবেক সর্বহারা নেতা আবদুর রাজ্জাক ওরফে আর্ট বাবুর প্রতিদ্বন্দ্বিতার মুখে পড়তে হতে পারে। শাইলা পারভীনের বাবা এই পৌরসভার মেয়র আলো খন্দকারকে গলাকেটে হত্যা মামলার আসামি ছিলেন সর্বহারা ক্যাডার আর্ট বাবু। তিনি মেয়র পদে নির্বাচন করার আগ্রহের কথা জানিয়েছেন। তবে এখনও চূড়ান্ত সিদ্ধান্ত নেননি বলে জানিয়েছেন।

বাবা আলো খন্দকারের মৃত্যুর পর ২০০৩ সালে শাইলা পারভীন তাহেরপুর পৌরসভার মেয়র হয়েছিলেন। পরে সাবেক ছাত্রনেতা আবুল কালাম আজাদ তাকে বিয়ে করেন। আবুল কালাম আজাদ পর পর দুবার পৌরসভার মেয়র হন। দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনের আগে মেয়রের পদ থেকে পদত্যাগ করে আওয়ামী লীগের মনোনয়ন চান। নির্বাচনে নৌকার প্রার্থী আবুল কালাম আজাদ আওয়ামী লীগের তিনবারের এমপি ও স্বতন্ত্র প্রার্থী এনামুল হককে বড় ব্যবধানে পরাজিত করেন।

আবুল কালাম মেয়রের পদ থেকে পদত্যাগ করার কারণে আগামী ৯ মার্চ এই পৌরসভায় উপনির্বাচন অনুষ্ঠিত হবে। পৌর নির্বাচনে আওয়ামী লীগ কাউকে দলীয় মনোনয়ন দেবে না। কেউ নৌকা প্রতীকও পাবেন না। মেয়র পদে এমপিপত্নী ও সাবেক মেয়র শাইলা পারভীন এবং সাবেক সর্বহারা নেতা আর্ট বাবু ছাড়াও পৌর আওয়ামী লীগের সভাপতি আবু বকর মৃধা মনসুর রহমান ও পৌরসভার বর্তমান দায়িত্বপ্রাপ্ত মেয়র বাবুল খানের নির্বাচন করার আগ্রহ রয়েছে।

এরমধ্যে আবু বকর মৃধা মনসুর রহমান ও বাবুল খান জানিয়েছেন, এমপি আবুল কালাম আজাদ সমর্থন দিলে তারা নির্বাচন করবেন। এমপিপত্নী শাইলা পারভীন প্রার্থী হলে তারা নির্বাচন করবেন না। শাইলা প্রার্থী না হলে এমপি চাইলে তারা প্রার্থী হবেন, না চাইলে হবেন না। তবে উপজেলা কৃষক লীগের সাধারণ সম্পাদক আর্ট বাবুর নির্বাচন করার সম্ভাবনা বেশি।

দলীয় নেতাকর্মীরা জানিয়েছেন, আর্ট বাবু এ আসনের সদ্য সাবেক এমপি এনামুল হকের আশির্বাদপুষ্ট। এনামুল হকই সর্বহারা নেতা আর্ট বাবুকে স্বরাষ্ট্রমন্ত্রীর কাছে আত্মসমর্পণ করিয়েছিলেন। তারপর রাজনীতিতে প্রতিষ্ঠিত করেছেন। এবারের সংসদ নির্বাচনের সময় এনামুলের পাশে ছায়ার মতো ছিলেন আর্ট বাবু। আর বর্তমান এমপি আবুল কালাম আজাদের সঙ্গে দীর্ঘদিন ধরেই এনামুলের দা-কুমড়া সম্পর্ক। জেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি অনিল কুমার সরকার এই বাগমারা উপজেলা পরিষদের চেয়ারম্যান। এবার নির্বাচনে তিনি নৌকার বিপক্ষে গিয়ে এনামুলের পাশে ছিলেন। তাই এমপিপত্নী মেয়র প্রার্থী হলে তার বিপক্ষে আর্ট বাবুকেই এনামুল শিবিরের প্রার্থী করা হতে পারে বলে ধারণা করা হচ্ছে।

জানতে চাইলে আর্ট বাবু বলেন, ‘নির্বাচন করার আগ্রহ আছে। কিন্তু কিছু দিন আগেই একটা নির্বাচন হলো। নির্বাচনে যে রকম পরিবেশ দেখলাম, সেই রকম হলে নির্বাচনে অংশগ্রহণ করে লাভ নেই। নানা বিষয়াদি আছে। সবকিছু দেখছি। এখনও চূড়ান্ত সিদ্ধান্ত নেইনি।’

শাইলা পারভীন বলেন, ‘আমার স্বামী এমপি। আমি কেন পৌরসভার মেয়র হতে যাব? আমি তো মেয়র ছিলাম। আমার নির্বাচন করার ইচ্ছা ছিল না। ইচ্ছা ছিল- নিজে রাজনীতি করব না, রাজনীতি করাব। কিন্তু জনগণের খুব চাপ। নির্বাচন না করলে ৯০ থেকে ৯৫ পার্সেন্ট মানুষ আমার বাড়ির সামনে এসে বসে থাকবে। তাই নির্বাচন করতে হবে।’

এ বিষয়ে এমপি আবুল কালাম আজাদ বলেন, ‘আমার শ্বশুরবাড়ির লোকজন আর এলাকাবাসী চাচ্ছে, শাইলা আবারও পৌরসভার মেয়র হয়ে মানুষের সেবা করুক। তাই নির্বাচন করবেন।’

জেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি ও উপজেলা পরিষদের চেয়ারম্যান অনিল কুমার সরকার বলেন, ‘দলীয় প্রধান পৌর নির্বাচন ওপেন করে দিয়েছেন। নৌকা থাকবে না। তাই কে প্রার্থী হবেন তা এখনই বলতে পারছি না। তাহেরপুর এমপি সাহেবের নিজের এলাকা। তার কোনো ইচ্ছা থাকতে পারে।’