সারা বাংলা

গাইবান্ধায় ব্যাংকের টাকা লুট করতে প্রবাসীকে অপহরণ

দীর্ঘ দিন কয়েকজন বাংলাদেশি মিলে দুবাইয়ে প্রবাস জীবন কাটিয়েছেন। সেই সূত্রে বন্ধুত্ব। দীর্ঘ ১০ বছর প্রবাস জীবনে যা আয় করেছেন; খেয়ে, না-খেয়ে এবং বাড়িতে না পাঠিয়ে দুবাইয়ের আল মাশরাফ ব্যাংকে সঞ্চয় করেন আমিনুল ইসলাম। 

দুবাই প্রবাসী আমিনুলের বাড়ি গাইবান্ধার সুন্দরগঞ্জ উপজেলার শান্তিরাম ইউনিয়নের শান্তিরাম গ্রামে। বাবা দরিদ্র কৃষক নুর মোহাম্মদ। আশা ছিল, কষ্টের অর্জন করা মূলধন দিয়ে দেশে ফিরে ভালো কিছু করবেন। যাতে পরিবারের সবাইকে নিয়ে স্বচ্ছল জীবনযাপন করতে পারেন। কিন্তু প্রবাসী বন্ধুদের প্রতারণায় সেই স্বপ্ন লণ্ডভণ্ড হওয়ার উপক্রম।

আমিনুলের পরিবারের সদস্যরা জানান, আমিনুল ১০ বছর দুবাই প্রবাসী। সম্প্রতি দুবাইয়ের আল মাশরাফ ব্যাংকে তার ১০ বছর মেয়াদী ফিক্সড ডিপোজিটের মেয়াদ শেষ হয়েছে। সেই অনুযায়ী তার জমানো টাকা বিদেশ থেকে বাংলাদেশ সোনালী ব্যাংকের মতিঝিল শাখায় ট্রান্সফার করা হয়েছে। প্রবাসে থাকতে কয়েকজন প্রবাসী বাংলাদেশি তার বন্ধু হয়। তারাও করোনার পর দেশে এসেছেন। একই ব্যাংকে একসঙ্গে ২২ বন্ধু টাকা জমা করেছেন ১০ বছর ধরে।

প্রবাসী চার বন্ধু সম্প্রতি আমিনুলের গাইবান্ধার বাড়িতে বেড়াতে আসতে চায়। এতে আমিনুল সিদ্ধান্ত নেন, ২৪ জানুয়ারি বন্ধুদের সঙ্গে একই মাইক্রোবাসে ঢাকায় গিয়ে সোনালী ব্যাংকের মতিঝিল শাখায় ফিঙ্গার প্রিন্ট দিয়ে টাকা উত্তোলন করে সেই টাকা গাইবান্ধার সোনালী ব্যাংক শাখায় ট্রান্সফার করবেন।

মঙ্গলবার (২৩ জানুয়ারি) দুপুর ১টায় প্রবাসী ওই চার বন্ধু গাইবান্ধায় এসে আমিনুলকে ফোন দেন। আমিনুল তাদের বাড়ির নিকটবর্তী সুন্দরগঞ্জের ধুবনী বাজারে আসতে বলেন। সেখানে গিয়ে আমিনুল তাদের রিসিভ করেন এবং বন্ধুদের সঙ্গে দেখা হওয়ার বিষয়টি বাড়িতে ফোন করে জানান।

পরে বন্ধুরা মাইক্রোবাসের মধ্যে জোর করে আমিনুলের আঙ্গুলের ফিঙ্গার প্রিন্ট নেয়। তারা ব্যাংক একাউন্টের পাসওয়ার্ড বলতে বলে। আমিনুল বলতে অস্বীকৃতি জানালে ধ্বস্তাধস্তি শুর হয়। একপর্যায়ে তারা ঘাড়ে ইনজেকশন পুশ করলে আমিনুল অচেতন হয়ে পড়ে। এ সময় তারা আমিনুলের ব্যাংকের সব ডকুমেন্টস সংরক্ষণ করা মোবাইল ফোন নিয়ে নেয়। দুপুর ২টা থেকে আমিনুলের ফোন বন্ধ পাওয়া যায়।

এদিকে, সব জায়গায় খোঁজাখুঁজির পর আমিনুলের উদ্বিগ্ন পরিবার যখন সুন্দরগঞ্জ থানায় সাধারণ ডায়েরি করতে যায়, তখন রাত প্রায় ৯টা। এরইমধ্যে খবর আসে, আমিনুলকে বেলকা ইউনিয়ন পরিষদের পাশে অচেতন অবস্থায় উদ্ধার করেছে স্থানীয়রা। পরে গ্রাম পুলিশকে দিয়ে সুন্দরগঞ্জ থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) মাহবুব আলম তাকে সুন্দরগঞ্জ স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে ভর্তি করান।

এ ঘটনায় রোববার (২৮ জানুয়ারি) রাতে আমিনুল বাদী হয়ে সুন্দরগঞ্জ থানায় প্রবাসী চার বন্ধু ময়মনসিংহ জেলার আমির হোসেন, নড়াইল জেলার আরিফ মিয়া, সিরাজগঞ্জ জেলার আসাদ মোল্লা, টাঙ্গাইল জেলার গোপাল চন্দ্রসহ ১০ থেকে ১৫ জনের বিরুদ্ধে অভিযোগ দাখিল করেন।

আমিনুলের বাবা নুর মোহাম্মদ রাইজিংবিডিকে বলেন, সোমবার (২৯ জানুয়ারি) থেকে আমিরুল পাগলের মতো আচরণ করছে। তার মোবাইলটি খোঁজে আর ঘর থেকে বের হয়ে ছোটাছুটি করতে থাকে। ডাক্তারের পরামর্শে রংপুর মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে ভর্তি করা হয়েছে। ডাক্তার বলছেন, সুস্থ হতে কমপক্ষে সাত দিন লাগবে।

তিনি আরও বলেন, ওই বন্ধুরা ওই ফিঙ্গার প্রিন্ট দিয়ে কোনোভাবে ব্যাংক থেকে যদি সব টাকা তুলে নিয়ে যায়, তখন কী হবে?

সুন্দরগঞ্জ থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) মাহবুব আলম বলেন, ‘এ ঘটনায় লিখিত অভিযোগ পেয়েছি। ঘটনাটি যেহেতু প্রথম দিন থেকে জানি, তাই ভুক্তভোগী ওই প্রবাসীকে সব ধরনের সহযোগিতা করা হচ্ছে।’ 

তিনি বলেন, আমিনুলের সঙ্গে এত দিনের বন্ধুত্ব, অথচ তাদের মোবাইল নম্বর নেই। তাদের ঠিকানা পর্যন্ত জানে না। শুধু নাম, ছবি এবং কিছু ইমু নম্বর দিতে পেরেছে। তবে তদন্ত চলছে। অপহরণের সঙ্গে জড়িতদের গ্রেপ্তার করা সম্ভব হবে আশা করছেন ওসি।