সারা বাংলা

গোমতী নদীর বুক ক্ষত-বিক্ষত, ২৫ স্থানে লুটেরাদের রাজত্ব

নদীর বাঁধ থেকে অবাধে মাটি কেটে নিয়ে যাচ্ছে একাধিক চক্র। প্রশাসনের নাকের ডগায় দুই পাড়ের প্রায় ২৫টি স্থান থেকে মাটি কেটে নিয়ে যাওয়ায় গোমতী নদীর পুরাতন তিনটি সেতু এখন ঝুঁকিপূর্ণ।

কুমিল্লার আদর্শ সদর, বুড়িচং ও দেবিদ্বার উপজেলার ওপর দিয়ে বয়ে চলেছে গোমতী নদীতে এভাবে মাটি কাটা ও তিনটি সেতু ক্ষতিগ্রস্ত হলেও পানি উন্নয়ন বোর্ড (পাউবো) বা জেলা প্রশাসন নির্বিকার। মাটি কাটা প্রতিরোধে তারা কোনো ব্যবস্থা নিচ্ছেন না।

দুই একটি অভিযান চললেও কোনোভাবেই প্রতিরোধ করা যাচ্ছে না মাটি খেকোদের। সাম্প্রতিক কুমিল্লার কোতোয়ালি মডেল থানায় অজ্ঞাতনামা ব্যক্তিদের নামে মামলা করে পাউবো। মামলা দিয়ে যেন দায়সারা হয়েছে।

সোমবার (২৯ জানুয়ারি) দুপুরে সরেজমিনে দেখা যায়, সেতুর গা ঘেঁষে মাটি কাটার কারণে হুমকির মুখে পড়েছে জেলার আদর্শ সদর উপজেলা পাঁচথুবী ইউনিয়নের চাঁনপুর এলাকার বেইলি সেতু, টিক্কাচর এলাকার শালধর সেতু ও পালপাড়া সেতু।

এ তিনটি সেতুর দুই পাশ গা ঘেঁষে মাটি কাটা হচ্ছে রাতদিন। রাতে মেশিন দিয়ে মাটি কাটা হয়। এরপর ট্রাক ও ট্রাক্টর দিয়ে মাটি পারাপার করা হয়। মাটি কাটায় যেকোনো সময়ে ধ্বসে পড়তে পারে বেইলি সেতুসহ এ দুইটি সেতু।

চাঁনপুর এলাকার বাসিন্দা মাহফুজ সরকার বলেন, শীতকাল আসলে গোমতী নদীর মাটি কাটা শুরু হয়। প্রশাসন দিনে অভিযান দিলে, তারা  রাতে কাটে। জোর করে জমিগুলো দখল করে মাটি কাটছে; কথা বললে তো হুমকি দেয়। অধিকাংশ মাটি চলে যায় আওয়ামী লীগের এক নেতার ইটভাটায়।

পালপাড়া এলাকার বাসিন্দা মাহবুব আলম বলেন, বেশ কয়েক বছর আগে পালপাড়া ব্রিজটি করেছে সরকার। নতুন ব্রিজ হলেও এই ব্রিজের নিচের অধিকাংশ স্থানে মাটি কাটা হয়েছে, এভাবেই চলতে থাকলে বন্যা বা যেকোনো ধরনের দুর্ঘটনায় অপূরণীয় ক্ষতি হয়ে যেতে পারে। আমরা এর প্রতিকার চাই।

একই অভিযোগ করেন টিক্কাচর এলাকার মাছ বিক্রেতা সেলিম সরকার। তিনি বলেন, টিক্কাচর ব্রিজের নিচে বালু তোলা হয়। পুলিশ প্রশাসন সবাই দেখে; সবাই কেনো চুপ আমাগো জানা নেই। প্রশাসন তো মাঝেমধ্যে অভিযান চালায়। নদীতে বড় পাহাড়ি ঢল নেমে নদীতে পানি বাড়লে ব্রিজ নষ্ট হতে পারে। সরকারের উচিত মাটি কাটা বন্ধ করা।

বাংলাদেশ পরিবেশ আন্দোলন (বাপা) কুমিল্লা জেলা শাখার সাধারণ সম্পাদক আলী আকবর বলেন, ‘গোমতী নদীতে সরকারের বা প্রশাসনের ভূমিকা দেখা যাচ্ছে না। এভাবে একটি নদীকে প্রতিনিয়ত কাটা হচ্ছে, সেতুগুলো ঝুঁকিপূর্ণ হচ্ছে, অসাধু চক্রগুলোর বিরুদ্ধে কোনো ব্যবস্থা নেওয়া হচ্ছে না। প্রশাসন যা করে, তা হলো ধরি মাছ না ছুঁই পানি। আমরা বারবার জেলা প্রশাসনকে বিষয়টি জানিয়েছি, দেখি তারা কি ধরনের পদক্ষেপ নেন।

পানি উন্নয়ন বোর্ড (পওর) কুমিল্লার নির্বাহী প্রকৌশলী খান মো. ওয়ালিউজ্জামান বলেন, আমরা নিয়মিত অভিযান পরিচালনা করছি, তিনটি সেতুর নিচে এক মাস আগে মাটি কাটা হয়েছিল, আমরা একটি মামলা দিয়েছি, জেলা প্রশাসনের সহযোগিতায় যৌথভাবে আমরা অভিযোগ পরিচালনা করছি। ঝুঁকিপূর্ণ সেতু নিয়ে আমরা সেতু বিভাগের সাথে কথা বলছি।

কুমিল্লা জেলা প্রশাসক খন্দকার মু. মুশফিকুর রহমান বলেন, আমরা নিয়মিত অভিযান চালাচ্ছি, সেতুগুলোর নিচে মাটি কাটার কারণে হয়তো ঝুঁকিপূর্ণ হয়ে উঠছে, যারা এই কাজ করছে আমরা তাদের বিরুদ্ধে আইনগত ব্যবস্থা নিবো। এক্ষেত্রে সবার সহযোগিতা প্রয়োজন।