জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ে (জাবি) ধর্ষণের প্রতিবাদে চার দফা দাবি নিয়ে মিছিল করেছে বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীরা।
আজ মঙ্গলবার (৬ ফেব্রুয়ারি) সন্ধ্যা সাড়ে ৬টায় বিশ্ববিদ্যালয়ের ট্রান্সপোর্ট চত্বর থেকে শুরু হয়ে মিছিলটি শহীদ মিনার, টারজান পয়েন্ট ও সকল ছাত্রী হল হয়ে পুনরায় ট্রান্সপোর্ট চত্বরে এসে সংক্ষিপ্ত সমাবেশে শেষ হয়। মিছিলে শতাধিক শিক্ষার্থী অংশ নেয়।
শনিবার (৩ ফেব্রুয়ারি) রাত সাড়ে ৯টার দিকে জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ের মীর মোশাররফ আবাসিক হলের ৩১৭নং কক্ষে স্বামীকে আটকে রেখে স্ত্রীকে কৌশলে মীর মশাররফ হোসেন হলের পেছনে নিয়ে পালাক্রমে ধর্ষণ করার অভিযোগ উঠেছে বিশ্ববিদ্যালয় শাখা ছাত্রলীগের উপ-আন্তর্জাতিক বিষয়ক সম্পাদক মোস্তাফিজুর রহমান ও বহিরাগত মামুনুর রশীদ মামুনের বিরুদ্ধে।
শিক্ষার্থীদের দাবিগুলো হলো, ধর্ষণে অভিযুক্ত ও পলায়নে সহযোগিতাকারীদের রাষ্ট্রীয় আইনে বিচার দ্রুততম সময়ে নিশ্চিত করতে হবে; মীর মশাররফ হোসেন হল ও রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর হলের প্রোভোস্ট এবং হল প্রশাসনের বিরুদ্ধে অভিযুক্তকে পলায়নে সাহায্য করার অভিযোগের বিষয়ে তদন্ত কমিটি গঠন করতে হবে; সকল আবাসিক হল থেকে অছাত্রদের তাড়াতে হবে এবং ক্যাম্পাসের নিরাপত্তা শাখার বিরুদ্ধে শাস্তিমূলক ব্যবস্থা নিতে হবে ও যৌন নিপীড়নবিরোধী সেল কার্যকর করতে হবে।
মিছিলে শিক্ষার্থীরা ‘ছাত্রলীগ ধর্ষণ করে, প্রশাসন কী করে’, ‘ধর্ষকদের পাহারাদার, হল প্রশাসন চমৎকার’, ‘ধর্ষকদের পাহারাদার, ধিক্কার ধিক্কার’, ‘যে প্রশাসন ধর্ষকদের পাহারা দেয়, সেই প্রশাসন চাই না’, ‘আমাদের ক্যাম্পাসে আমরাই থাকব, অছাত্ররা থাকবে না’, ‘জাহাঙ্গীরনগরের মাটিতে, ধর্ষকদের ঠাঁই নাই’, ‘হল থেকে দল থেকে, ধর্ষকদের বহিষ্কার কর’— ইত্যাদি স্লোগান দিতে দেখা যায়।
মিছিল শেষে নগর ও অঞ্চল পরিকল্পনা বিভাগের শিক্ষার্থী ফাইজা মেহজাবিন প্রিয়ন্তীর সঞ্চালনায় সংক্ষিপ্ত সমাবেশে প্রত্নতত্ত্ব বিভাগের শিক্ষার্থী রাবেয়া বসরী তাপস্বী বলেন, ‘ধর্ষণে সেঞ্চুরি করা মানিক থেকে মোস্তাফিজ পর্যন্ত যে ঘটনা ঘটে গেছে, সেটা বিচ্ছিন্ন হতে পারে না। একটা নির্দিষ্ট দল এই সব ঘটনার সঙ্গে যুক্ত সেই বিষয়ে আমরা সবাই অবগত আছি। কিন্তু প্রশাসন কখনো উল্লেখযোগ্য ব্যবস্থা নেয় না। জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয় সকলের জন্য নিরাপদ হোক।’
আইআইটি বিভাগের শিক্ষার্থী সোয়াতি বলেন, ‘বঙ্গবন্ধু কিন্তু ইন-জাস্টিজের কথা কখনো বলেননি। আর ছাত্রলীগ যদি ন্যায়ের পক্ষে থাকে তবে ছাত্রত্ব শেষ হওয়ার সঙ্গে সঙ্গে তাদের হল ছেড়ে দেয়া উচিত। ছাত্রলীগ সুস্থ নেতৃত্বের বদলে অসুস্থ নেতৃত্ব তৈরি করছে। আমি চাই, এই বিষয়ে তারা কাজ করুক।’
সমাপনী বক্তব্যে অর্থনীতি বিভাগের শিক্ষার্থী অনামিকা নূরাইন বিত্ত বলেন, ‘ঘুরেফিরে কেন ছাত্রলীগের কর্মীরাই ক্যাম্পাসে ও ক্যাম্পাসের বাইরে অপকর্ম ঘটায়। আমি আপনাদের মনে করিয়ে দিতে চাই, ধর্ষণ একটি পাওয়ার প্র্যাকটিস। ছাত্রলীগ ক্যাম্পাসে সবচেয়ে বেশি পাওয়ার প্র্যাকটিস করে। ছাত্রলীগের কর্মীদের ক্যাম্পাসে শেখানো হয়, কীভাবে বাপ-মা ছেড়ে আসা একজন শিক্ষার্থীকে টর্চার করতে হয়। সেখান থেকে তারা ক্ষমতার স্বাদ পায়। আমাদের দাবিগুলো প্রশাসনের মানতে হবে, অভিযুক্তদের ক্যাম্পাসে অবাঞ্ছিত করা, সার্টিফিকেট সাময়িক স্থগিত করার এই প্রহসন বন্ধ করতে হবে। সুস্পষ্ট পদক্ষেপ নিতে হবে।’
আগামীকাল বুধবার (৭ ফেব্রুয়ারি) দুপুর ১টায় শহীদ মিনারের পাদদেশে কালো পতাকা মিছিলের ঘোষণা দিয়ে সংক্ষিপ্ত সমাবেশের সমাপ্তি ঘোষণা করা হয়।