সারা বাংলা

চাহিদা থাকলেও আবাদ কমেছে স্ট্রবেরির

চাঁপাইনবাবগঞ্জে কমেছে স্ট্রবেরি চাষাবাদ। গত এক বছরে এ জেলায় স্ট্রেবেরির আবাদ কমেছে ১৮ হেক্টর। বাজারে ভালো চাহিদা থাকলেও কৃষক লাভবান না হওয়ায় কমেছে আবাদ। বাজারজাতে সমস্যা হওয়ায় কৃষক এ ফলের আবাদ কম করছেন বলে জানা গেছে।

জেলা কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের কার্যালয় সূত্রে জানা গেছে, চাঁপাইনবাবগঞ্জে গত বছর ১০০ হেক্টর জমিতে স্ট্রবেরি চাষাবাদ হয়েছিলো। এবার ১৮ হেক্টর কমে ৮২ হেক্টর জমিতে এ ফলের চাষ করছেন কৃষকরা। এরমধ্যে শিবগঞ্জ উপজেলায় ৮০ হেক্টর, সদর উপজেলায় ১ হেক্টর এবং গোমস্তাপুর ও নাচোল উপজেলায় মাত্র ১ হেক্টর জমিতে আবাদ হচ্ছে স্ট্রবেরি।

জেলায় সবচেয়ে বেশি স্ট্রবেরির চাষাবাদ হয় শিবগঞ্জ উপজেলায়। এছাড়া, স্ট্রবেরি চাষাবাদ করে লাভবান হতে না পারায় এসব জমিতে শীতকালিন শাকসবজিসহ অনান্য ফসল চাষাবাদ করছেন।

স্ট্রবেরি চাষিদের সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, সাধারণত ডিসেম্বর থেকে মার্চ মাসের মধ্যেই এই ফলের চারা রোপন করতে হয়। আবাহওয়া অনুকূলে থাকলে ভালো ফলনের আশা করা যায়, নতুবা স্ট্রবেরির গাছ মরে যায়। এতে ক্ষতিগ্রস্ত হন কৃষক।

অনান্য ফসলের তুলনায় এই ফল আবাদে সর্তক দৃষ্টি রেখে  দেখভালো করতে হয়। নির্দিষ্ট সময়ে কিটনাশক স্প্রেসহ সেচ দিতে হয়। এসবের ব্যতয় ঘটলে ভালো ফলনের আশা করা যায় না। যেসব মাঠে স্ট্রবেরি ছাড়া অন্য আরও ফসল আবাদ হয়, সেই মাঠে স্ট্রবেরি চাষাবাদ করা খুবই ঝুঁকিপূর্ণ।

শিবগঞ্জ উপজেলার উজিরপুরের বাসিন্দা মাহবুব বিন গতবার স্ট্রবেরির চাষাবাদ করলেও বিভিন্ন কারণে এ বছর আবাদ করেননি। মাহবুব বলেন, স্ট্রবেরি চাষাবাদ করা খুবই চ্যালেঞ্জ। চারা রোপন করার পর থেকেই প্রতিটি গাছে গাছে নজর রাখতে হয়। পোকার আক্রমণ হলেই গাছ মারা যায়। কিটনাশকের স্প্রে কমবেশ হলেই চারা নষ্ট হয়ে যায়। পরে ওই সব চারা থেকে ফল আনা খুবই কষ্টসাধ্য।

তিনি আরও বলেন, স্ট্রবেরি চাষাবাদ করা খুবই ঝুঁকিপূর্ণ কাজ। যথাযথভাবে যত্ম নিতে না পারলে কৃষক ক্ষতিগ্রস্ত হন। এ কারণে এই ফলের আবাদ ছেড়ে অনেকই অন্য শাকসবজি চাষাবাদে ঝুঁকছেন।

আব্দুর রাজ্জাক নামে আরেক চাষি বলেন, প্রতি বিঘায় স্ট্রবেরির চারা কিনে রোপন করলে দুই থেকে আড়াই লাখ টাকা খরচ হয়। এছাড়া, যারা চারা বানিয়ে স্ট্রবেরি আবাদ করেন তাদের প্রতি বিঘায় খরচ হয় এক থেকে দেড় লাখ টাকা। স্ট্রবেরির চাহিদা বাজারে অনেক, কিন্তু সময়ের মধ্যে বাজারজাত না করতে পারলে ক্ষতিগ্রস্ত হতে হয়।

স্ট্রবেরি চাষি আসিফ আহমেদ হৃদয় বলেন, কয়েকদিনের বিরূপ আবহাওয়ায় স্ট্রবেরি গাছগুলো দুর্বল হয়ে পড়েছিলো। পরে অভিজ্ঞদের পরামর্শ নিয়ে দেখভালো করায় গাছ থেকে এখন ফল ধরেছে। বাজারে ৯৩০ থেকে ৯৫০ টাকা কেজি দরে বিক্রি হচ্ছে স্ট্রেবেরি।

চাঁপাইনবাবগঞ্জের কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের উপ-পরিচালক ড. পলাশ সরকার বলেন, যেসব কৃষক স্ট্রবেরি চাষাবাদ করেন তাদের অনেক সর্তক থাকতে হয়। স্ট্রবেরি চাষাবাদ করতে গেলে, আবহাওয়ার ওপর নজরদারি করা কৃষকের জন্য অতিব জরুরি। এ ফলটি সময়ের মধ্যে বাজারজাত করা না গেলে কৃষক ক্ষতিগ্রস্ত হয়। সবমিলিয়ে এ ফলের আবাদ করা খুবই ঝুঁকির্পূর্ণ। যেসব কৃষক স্ট্রবেরি আবাদ করছেন তাদেরকে নিয়মিত পরামর্শ দেওয়া হচ্ছে।

তিনি আরও বলেন, গত বছরের তুলনায় এবার স্ট্রবেরি চাষাবাদ কিছুটা কমেছে। তবে বাজারে ভালো দাম থাকায় আশা করা যায়, সামনের দিন থেকে কৃষক এ ফল চাষাবাদে ঝুঁকবেন।