সারা বাংলা

যত্রতত্র দেয়াল লিখন ও পোস্টারিংয়ে সৌন্দর্যহানি

চাঁপাইনবাবগঞ্জে যত্রতত্র পোস্টার লাগানো ও দেয়াল লিখনে ঘটছে সৌন্দর্যহানি। যথানিয়মে পোস্টার লাগানো ও অপসরণের নিদিষ্ট আইন থাকলেও মানছে না কেউ। সংশ্লিষ্টদের ভাষ্য, এ কাজে জড়িত ব্যক্তি ও প্রতিষ্ঠানের সচেতনতার পাশাপাশি সাধারণ জনগণ সচেতন না হলে যত্রতত্র পোস্টারিং ও দেয়াল লিখন বন্ধ করা সম্ভব হবে না।

গত কয়েকদিন জেলার বিভিন্ন এলাকায় ঘুরে দেখা গেছে, নির্বাচনি প্রচারণা ছাড়াও বিভিন্ন ব্যক্তি ও প্রতিষ্ঠানের ব্যক্তিগত প্রচার, স্কুল-কলেজে ভর্তির বিজ্ঞপ্তি, নতুন সিনেমার মুক্তিসহ বিভিন্ন ধরনের প্রচারণায় পোস্টারিং করা হয়। কখনও নিজস্ব লোক দিয়ে পোস্টার ও দেয়াল লিখন হলেও এ পেশায় নিয়োজিত ব্যক্তিদের দ্বারাও করা হচ্ছে এ কাজ। আবার নির্ধারিত উৎসব বা অনুষ্ঠান শেষে এসব পোস্টার অপসারণ করার কথা থাকলেও সেটিও করা হচ্ছে না।

প্রধান সড়ক, সড়কের পাশের বাড়ির দেয়াল, বৈদ্যুতিক খুঁটি, ব্যবসায়িক প্রতিষ্ঠান, সেতুর পিলার, রাস্তার পাশের গাছসহ সব জায়গায় রাজনৈতিক দলের নেতাকর্মী ও ব্যক্তিগত বিভিন্ন ধরনের পোস্টার সাঁটানো রয়েছে। কোথাও কোথাও একটির ওপরে একাধিক পোস্টার সাঁটানোর কারণে অনেক মোটা আকার ধারণ করেছে। এতে খুব দ্রুত দেয়ালের স্থায়িত্বও ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছে।

সবথেকে বেশি পোস্টার করা হয়েছে- বিশ্বরোড, শহরের মার্কেট এলাকা, শান্তিমোড়, উদয়ন মোড়, বাতেন খাঁ মোড়, পুরাতন বাজার, রেহাইচর, বারঘোরিয়া, মহরাজপুর, নয়াগোলা, শিবগঞ্জের রাণীহাটি, ছত্রাজিতপুর, শিবগঞ্জ বাজার, কানসাট গোপাল নগর মোড়, সোনামসজিদ স্থলবন্দর এলাকা, গোমস্তাপুরের রহনপুর-কলেজ মোড়, খোয়াড় মোড়, নাচোলের নেজামপুর, বাসস্ট্যান্ড, ভোলাহাটের হাসপাতাল মোড় এলাকায়। এসব এলাকায় জনসাধারণের চলাচল বেশি থাকায় টার্গেট করে পোস্টারিং করা হয়। পোস্টারিং বন্ধে ভবন মালিক ও সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষ নোটিশ টানালেও সেদিকে ভ্রুক্ষেপ নেই কারও।

বাংলাদেশে ‘দেয়াল লিখন ও পোস্টার লাগানো (নিয়ন্ত্রণ) আইন, ২০১২’ অনুযায়ী অনুমতি ছাড়া দেয়াল লিখন বা পোস্টার সাঁটালে তা শাস্তিযোগ্য অপরাধ। ২০১২ সালের ফেব্রুয়ারিতে দেয়াল লিখন ও পোস্টার লাগানো নিয়ন্ত্রণ আইন গেজেট আকারে প্রকাশ করে সরকার। আইনভঙ্গ করে কেউ যত্রতত্র দেয়াল লিখন বা পোস্টার লাগালে এর সুবিধাভোগীর বিরুদ্ধে অন্যূন ১০ হাজার টাকা এবং অনূর্ধ্ব ৫০ হাজার টাকা অর্থদণ্ড আরোপ করা হবে, অনাদায়ে অনধিক ৩০ দিন পর্যন্ত বিনাশ্রম কারাদণ্ড দেওয়া যাবে। এ ছাড়া ওই সুবিধাভোগীকে তার নিজ খরচে সংশ্লিষ্ট দেয়াল লিখন, পোস্টার মুছে ফেলার বা অপসারণের জন্য আদেশ দিতে পারবেন আদালত। কিন্তু এ আইন থাকলেও তার কোনও প্রয়োগ নেই সারা দেশের কোথাও। 

আব্দুল হামিদ নামে এক বাড়িমালিক বলেন, পোস্টার ও দেয়াল লিখনের কারণে পলেস্তারা বেশিদিন টেকে না। এতে দেয়ালের স্থায়িত্ব নষ্ট হয়ে যায়। কয়েকদিন পর পর এসব পোস্টার অপসারণ করা হলেও একদিন পরেই আবারও লাগানো হয়। রাতের আঁধারে পোস্টার লাগানোর কারণে প্রতিহতও করা যায় না।

রকিফুল ইসলাম নামে স্কুলশিক্ষক বলেন, নির্বাচন ছাড়াও বিভিন্ন রাজনৈতিক দলের অনুষ্ঠানের সময় বেশি পোস্টার লাগানো ও দেয়াল লিখন হয়। অনেক নেতাকর্মী একত্রে আসায় দেখলেও ভয়ের কারণে বাধা দেওয়া সম্ভব হয় না। দারোয়ানরা মাঝেমধ্যে বাধা দেওয়ার চেষ্টা করলে তারা ধমক দিয়ে থামিয়ে দেয়।

এ ব্যাপারে চাঁপাইনবাবগঞ্জ পৌরসভার শহর পরিকল্পনাবিদ মো. ইমরান হোসাইন জানান, পৌর এলাকায় নিদিষ্ট স্থানে পোস্টার সাঁটানোর জন্য কোন নির্ধারিত স্থান নেই। যত্রতত্র পোস্টার সাঁটালে পরিবেশের মারাত্মক ক্ষতি হয়। এ ছাড়া, শহরের সৌন্দর্যহানি হয়। সাধারণ মানুষ সচেতন না হলে এসব কর্মকাণ্ড বন্ধ হবে না।

তিনি আরও বলেন, কয়েক বছর আগে জেলার গুরুত্বপূর্ণ স্থানগুলোয় পোস্টার সাঁটানোর জন্য নিদিষ্ট স্থান নির্বাচন করার কথা হয়েছিল। এখনও মাঝেমধ্যে এই আলোচনা হয় ঠিকই। কিন্তু কবে নাগাদ স্থানটি নির্বাচন করা হবে ঠিক জানা নেই।

চাঁপাইনবাবগঞ্জের অতিরিক্ত জেলা প্রশাসক (সার্বিক) আহমেদ মাহবুব-উল-ইসলাম বলেন, যত্রতত্র পোস্টার লাগানো ও দেয়াল লিখনে সৌন্দর্যহানি হচ্ছে এটা ঠিক। এটি আইন বহির্ভূত কাজ। পোস্টার লাগানোর জন্য স্থান নির্দিষ্ট করার কাজ চলমান আছে। স্থান নির্দিষ্ট করে দেওয়ার পরে ব্যাপকভাবে আইনানুগ ব্যবস্থা নেওয়া হবে।

এসব পোস্টার-দেয়াল লিখন রোধে কোনও ভ্রাম্যমাণ আদালত পরিচালনা করা হয় কিনা- এমন প্রশ্নে তিনি অতিরিক্ত জেলা ম্যাজিস্ট্রেট’র সঙ্গে কথা বলার অনুরোধ করেন।

এ ব্যাপারে অতিরিক্ত জেলা ম্যাজিস্ট্রেট আসিফ আহমেদের সঙ্গে মুঠোফোনে যোগাযোগ করা হলে তিনি রিসিভ করেননি।