সারা বাংলা

তাড়াশে জমে উঠেছে আড়াইশ বছরের ঐতিহ্যবাহী দই মেলা

সরস্বতী পূজা উপলক্ষে সিরাজগঞ্জ ও চলনবিল অধ্যুষিত তাড়াশে দিনব্যাপী চলছে আড়াইশ বছরের ঐতিহ্যবাহী দই মেলা। এ বছর মেলায় বাহারি আকার ও স্বাদের দইয়ের পসরা সাজিয়ে বসেছেন বিক্রেতারা।

বুধবার (১৪ ফেব্রুয়ারি) সকাল থেকে বিকেল পর্যন্ত জেলা শহরের মুজিব সড়ক ও তাড়াশের ঈদগাহ মাঠে এই দইয়ের মেলার আয়োজন করা হয়েছে।

মেলায় সিরাজগঞ্জ, বগুড়া, পাবনা ও নাটোর থেকে ঘোষেরা দই এনে পসরা সাজিয়ে বসেছেন। ঐতিহ্যের ধারাবাহিকতায় যুগ যুগ ধরে চলে আসা এই মেলা আগামীতে আরও প্রসারিত হবে এমনটাই প্রত্যাশা দই প্রেমীদের।

স্থানীয়রা জানান, জমিদার বনোয়ারী লাল রায় বাহাদুর প্রথম পঞ্চমী তিথিতে দই মেলার প্রচলন করেছিলেন। তিনি দই ও মিষ্টান্ন খুব পছন্দ করতেন।

এছাড়া, জমিদার বাড়িতে আসা অতিথিদের আপ্যায়নে এ অঞ্চলে ঘোষদের তৈরি দই পরিবেশন করা হতো। সেই থেকে জমিদার বাড়ির সামনে রশিক লাল রায় মন্দিরের পাশের মাঠে সরস্বতী পূজা উপলক্ষে দিনব্যাপী দই মেলার আয়োজন শুরু হয়।

দইয়ের পরিবেশক রনি মিষ্টান্ন ভাণ্ডারের রণজিৎ ঘোষ বলেন, ২০ মণ দই নিয়ে এসেছি। দইয়ের চাহিদা থাকায় বিকেলের মধ্যেই শেষ হয়ে যাবে। তবে দুধের দাম, জ্বালানি, শ্রমিক খরচ ও দই পাত্রের মূল্য বৃদ্ধির কারণে দাম বেড়েছে।

বেলকুচি উপজেলার রাজাপুরের সুশান্ত বলেন, সিরাজগঞ্জের রাজাপুরের দইয়ের একটা সুনাম রয়েছে। তাই আমাদের দইয়ের চাহিদা বেশি। মেলা এক দিনব্যাপী হলেও কোনো ঘোষের দই অবিক্রীত থাকে না বরং ক্রেতাদের চাহিদা মেটাতে আমরা হিমসিম খাচ্ছি।

দই কিনতে আসা সুমন দাস বলেন, সরস্বতী পূজার দিন শ্রী পঞ্চমী তিথিতে দই মেলার শুরু হয়। প্রতিবছর দই মেলায় আত্মীয়-স্বজনদের জন্য দই কিনে থাকি।

দেবা বিশ্বাস বলেন, সরস্বতী পূজা উপলক্ষে বাড়িতে অনেক অতিথি এসেছে। তাদের আপ্যায়নে দই কিনলাম। প্রতিবছর এখান থেকে দই কিনি।

আরেক ক্রেতা সঞ্জয় সাহা বলেন, সরস্বতী পূজা উপলক্ষে বোন ও জামাইসহ অনেক আত্মীয়-স্বজন এসেছে। এখানকার দই খুব সুস্বাদু। প্রতিবছর ১০ থেকে ১২ কেজি দই কিনে থাকি। তবে এবার দাম একটু বেশি মনে হচ্ছে।

তাড়াশ উপজেলা সনাতন সংস্থার সাবেক সাধারণ সম্পাদক ডা. গোপাল চন্দ্র ঘোষ বলেন, সরস্বতী পূজাকে কেন্দ্র করে ঐতিহ্যবাহী এই দই মেলা অনুষ্ঠিত হয়। তৎকালীন জমিদার রায় বাহাদুর প্রথমে দই মেলার প্রচলন করেছিলেন। তারপর থেকে এটা যেন এলাকার একটা রেওয়াজ ও আনুষ্ঠানিকতায় পরিণত হয়েছে। আমরা ছোটবেলায় বাবার সঙ্গে মেলায় গিয়েছি। আমাদের সন্তানরাও আমাদের হাত ধরে মেলায় যাচ্ছে।

তাড়াশ উপজেলা সনাতন সংস্থার সাধারণ সম্পাদক সনাতন কুমার দাস বলেন, ঐতিহ্য মেনে দই মেলা অনুষ্ঠিত হচ্ছে। আগে মেলায় মানুষের ভিড় বেশি থাকায় ঢোকাই যেত না। এবারের মেলায় জৌলুস ফিরে এসেছে।

জেলা পূজা উদযাপন পরিষদের সভাপতি সন্তোষ কুমার কানু বলেন, ঐতিহ্যবাহী দই মেলা প্রতিবছরের ন্যায় এবারও অনুষ্ঠিত হচ্ছে। সিরাজগঞ্জ ও তাড়াশে আনন্দ-উদ্দীপনার মধ্য দিয়ে দই মেলার উৎসব হচ্ছে।