ম্যানগ্রোভ বন সুন্দরবন। এটির রয়েছে বিশ্বের সর্ববৃহৎ অখণ্ড বনভূমিরও খ্যাতি। প্রাণ ও প্রকৃতির এক লীলাভূমি এই বনে রয়েছে নানা প্রজাতির উদ্ভিদ, পাখি, উভচর, সরীসৃপ ও স্তন্যপায়ী প্রাণী। সেই ভালোবাসাময় সুন্দরবনকে দেখতে প্রতিবছর দেশ-বিদেশ থেকে ছুটে আসছেন প্রকৃতি প্রেমীরা। সঙ্গে বেড়েছে রাজস্ব আয়ও। এ অবস্থায় বুধবার (১৪ ফেব্রুয়ারি) পালিত হচ্ছে সুন্দরবন দিবস।
বন বিভাগের তথ্য অনুযায়ী, অক্টোবর থেকে ফেব্রুয়ারি পর্যন্ত শীত মৌসুমে সুন্দরবনে পর্যটকরা আসেন। সেই সময় সুন্দরবনের নদী এবং খালগুলো যথেষ্ট ঠান্ডা থাকে এবং আবহাওয়া অনুকূল থাকে। গত ৫ অর্থ বছরে সুন্দরবনে বেড়েছে দেশি-বিদেশি পর্যটক। ২০১৮-২০১৯ অর্থ বছরে সুন্দরবনে দেশি-বিদেশি পর্যটক এসেছিল ১ লাখ ৮৯ হাজার ৫৭০জন। যারমধ্যে দেশি পর্যটক ছিল ১ লাখ ৮৭ হাজার ৩০৯ জন এবং বিদেশি ছিলেন ২ হাজার ২৬১ জন। এতে রাজস্ব আয় হয় ১ কোটি ৫১ লাখ ৭৪ হাজার ৩৯০ টাকা। ২০১৯-২০২০ অর্থ বছরে সুন্দরবন ভ্রমণ করেছেন ১ লাখ ৭২ হাজার ৯৭৯ জন পর্যটক। দেশি পর্যটক ছিল ১ লাখ ৭০ হাজার ৬৩ জন এবং বিদেশি পর্যটক ২ হাজার ৩১৭ জন। রাজস্ব আয় হয় ১ কোটি ৮৭ লাখ ৬৫ হাজার ৮ টাকা।
২০২০-২০২১ অর্থ বছরে সুন্দরবনে আসেন ১ লাখ ৪৬ হাজার ২১১ জন পর্যটক। দেশি পর্যটক ছিলেন ১ লাখ ৪৫ হাজার ৮৯১ জন এবং বিদেশি পর্যটক ৩২০ জন। রাজস্ব আয় হয় ১ কোটি ৫৭ লাখ ৫৪ হাজার ১৬৬ টাকা। ২০২১-২০২২ অর্থ বছরে সুন্দরবনে আসেন ১ লাখ ৫৫ হাজার ৪৭৭ জন পর্যটক। যারমধ্যে দেশি পর্যটক ছিলেন ১ লাখ ৫৪ হাজার ৩৭৪ জন এবং বিদেশি ছিলেন ১ হাজার ১০৩ জন। সেসময় রাজস্ব আয় হয় ২ কোটি ২৪ লাখ ৮৩ হাজার ৫৮০ টাকা।
সবশেষ ২০২২-২০২৩ অর্থ বছরে সুন্দরবন ভ্রমণ করেছেন ২ লাখ ১৬ হাজার ১৪৩ জন পর্যটক। দেশি পর্যটক ছিলেন ২ লাখ ১৪ হাজার এবং বিদেশি পর্যটক ২ হাজার ১৪৩ জন। রাজস্ব আয় হয় ৩ কোটি ৯৪ লাখ ৩২ হাজার ৪৮০ টাকা।
সুন্দরবন ভ্রমণপ্রেমীরা বলেন, বিশ্ব সৌন্দর্যের লীলাভূমি সুন্দরবন। সুন্দরবনের প্রাণ ও প্রকৃতি দেখে আমরা আনন্দিত। সুন্দরবনের ভালোবাসায় প্রতি বছরই আমরা ছুটে আসি। এই বনের প্রাকৃতিক সৌন্দর্য আমাদেরকে টানে। এখানে অনেক ইকোটোরিজম রয়েছে সেখানে আমরা ঘুরেছি। সুন্দরবনের প্রাকৃতিক সৌন্দর্য আমরা উপভোগ করছি। এই বনের গাছপালা, নদী, খাল, বন্যপ্রাণী ও স্থলপায়ী প্রাণী দেখেছি। হরিণ, কুমির, বানর, পাখিসহ নানা প্রজাতির প্রাণী আমরা দেখেছি। তবে বাঘের দেখা পাইনি। আগের মত সবপ্রাণী দেখা যায় না। তবুও সুন্দরবনের ভালোবাসার টানে আমাদের ছুটে আসা।
ট্যুর অপারেটর অ্যাসোসিয়েশন অব সুন্দরবনের সেক্রেটারি এম. নাজমুল আযম ডেভিড বলেন, সুন্দরবনের সৌন্দর্যের টানে প্রতিবছরই পর্যটক বাড়ছে। পদ্মা সেতু হওয়ার পর সুন্দর জীবনে যাতায়াতের পথ সুগম হয়েছে। বেসরকারিভাবে পর্যটকদের ভ্রমণে সুযোগ-সুবিধা বাড়ানো হয়েছে। তবে, সুন্দরবনের পর্যটন বিকাশে সরকারিভাবে আরও সুযোগ-সুবিধা ও নিরাপত্তা ব্যবস্থা বাড়ানো প্রয়োজন।
খুলনা বন অঞ্চলের বন সংরক্ষক মিহির কুমার দো বলেন, বাংলাদেশের একমাত্র প্রাকৃতিক বিশ্ব ঐতিহ্য হচ্ছে সুন্দরবন। এটি বিশ্বের বৃহত্তম ম্যানগ্রোভ ফরেস্ট। এটি বাংলাদেশে একমাত্র বাঘের আবাসস্থল। বাংলাদেশের আর কোন বনে কিন্তু এরকম আবাসস্থল নেই। এখানে অনেক বিরল বন্যপ্রাণী রয়েছে। এটি একটি ধারাবাহিক বনের আবহাওয়া, বনের প্রাকৃতিক পরিবেশ। সার্বিকভাবে জীববৈচিত্র্য, বন্যপ্রাণী ও গাছ গাছালি সবই কিন্তু মানুষের জন্য অত্যন্ত আকর্ষণীয়। একটি ভিন্ন আঙ্গিক, বিভিন্ন পরিবেশ মানুষকে আকৃষ্ট করেছে। কাজেই এই অনাবিল প্রাকৃতিক সৌন্দর্য উপভোগ করার জন্য মানুষ সুন্দরবনে আসছে এবং আসবে।