সারা বাংলা

ঝিটকা-মানিকগঞ্জ-ঢাকা সড়কে ৪ বছর ধরে বাস চলাচল বন্ধ 

ঝিটকা-মানিকগঞ্জ-ঢাকা সড়কে চার বছর ধরে বাস চলাচল বন্ধ রয়েছে। এতে মানিকগঞ্জের হরিরামপুর উপজেলার কয়েক হাজার যাত্রীরা দীর্ঘদিন ধরে ভোগান্তি পোহাচ্ছেন। 

হরিরামপুর উপজেলা বাস মালিক সমিতি সূত্রে জানা গেছে, হরিরামপুর-ঝিটকা-মানিকগঞ্জ-ঢাকা রুটে প্রতিদিন প্রায় ৭০/৮০ টি মিনিবাস (ভিলেজ লাইন)  চলাচল করতো। কিন্তু চার বছর ধরে ঝিটকা-মানিকগঞ্জ আঞ্চলিক সড়কে ঝিটকা হতে মানিকগঞ্জ, বেওথা ও গিলন্ড মুন্নু গেইট এবং ঝিটকা হতে হেমায়েতপুর পর্যন্ত প্রায় শতাধিক সিএনজিচালিত অটোরিকশা ও ইজিবাইক চলাচল করে। এর ফলেই বাস সার্ভিস দিনে দিনে অনেকটা কমতে থাকে। যা বর্তমানে পুরোপুরিই বন্ধ। বর্তমানে ঝিটকা বাজারের (হরিরামপুর মোড়) সিএনজি স্ট্যান্ড থেকে প্রতিদিন ৫ থেকে ১০ মিনিটের ব্যবধানে ৫ জন করে যাত্রী নিয়ে সিএনজিগুলো মানিকগঞ্জ ও হেমায়েতপুর ছেড়ে যায়। ঝিটকা পাইলট বালিকা উচ্চ বিদ্যালয়ের গেইট থেকে বেউথা ঘাটে যায় প্রায় ২০/২৫টি ইজিবাইক। সময় বাঁচাতে যাত্রীরাও সিএনজিতে যাতায়াতে হুমড়ি খেয়ে পড়ে। এতে করে বাস সার্ভিস অনেকটাই অবহেলায় পড়ে। ২০২০  সালে মহামারী করোনাকালীন সময় থেকে বাস সার্ভিস একেবারেই বন্ধ হয়ে যায়।

বর্তমানে উপজলার ঝিটকা অঞ্চলের বাসুদেবপুর গ্রামের সাফায়েত হোসেনের দুটি বাস ঢিলেঢালাভাবে চলাচল করলেও দুএকটি করে ট্রিপ দিলেও সিএনজির কারণে যাত্রী শূন্য হওয়ায় তাও সম্ভব হয়ে উঠে না।

একাধিক যাত্রীর সাথে কথা বলে জানা যায়, সিএনজিতে দ্রুত চলাচল করা গেলেও এতে রয়েছে দুর্ঘটনার মারাত্মক ঝুঁকি। অদক্ষ  চালক আর ফিটনেসবিহীন সিএনজিতে প্রায়ই ঘটছে দুর্ঘটনা। এতে বেশ কয়েকজন যাত্রী নিহতের ঘটনাও ঘটেছে। অনেকে আহত হয়ে এখন পর্যন্ত পঙ্গু অবস্থায় জীবনযাপন করছেন। এছাড়াও সন্ধ্যা বা একটু রাত হলেই মানিকগঞ্জ ঝিটকা আসার পথে যাত্রীদের কাছ থেকে অতিরিক্ত ভাড়া আদায়ের অভিযোগও করেন অনেক যাত্রী।

ঝিটকা বাজারের কাপড়ের ব্যবসায়ী বিল্লাল বস্ত্রালয়ের স্বত্বাধিকারী মো. বিল্লাল হোসেন জানান, ঝিটকা থেকে বাস চলাচল বন্ধ হওয়ায় সকল শ্রেণিপেশার মানুষের সমস্যার সৃষ্টি হয়েছে। ঝিটকা থেকে মানিকগঞ্জ এবং হেমায়েতপুর পর্যন্ত নিয়মিত সিএনজিচালিত অটোরিকশা চলাচল করছে। সিএনজিতে দ্রুত আসা যাওয়া করা গেলেও দুর্ঘটনার ঝুঁকি অনেক বেশি। সময় বাঁচাতে সিএনজিগুলোও চলাচল করে বেপরোয়া গতিতে। এতে মাঝে মাঝেই দুর্ঘটনা ঘটছে। আর বেশি মালামাল নিয়ে তো সিএনজিতে যাতায়াত করা যায় না। তাই ভাল মানের বাস সার্ভিস চালু হলে আমাদের মতো ব্যবসায়ীসহ সাধারণ মানুষের জন্যও উপকার হবে।

ঝিটকা বাজার ব্যবসায়ী সমিতির কোষাধ্যক্ষ হাবিবুর রহমান খোকন জানান, বাস বন্ধের জন্য অনেকটা বাস মালিকরাই দায়ী। কারণ তাদের সার্ভিস ভাল ছিলো না। এখন সিএনজিচালিত অটোরিকশাতে চলাচল করে মানুষ দ্রুত সময়ে গন্তব্য স্থানে যেতে পারলেও সিএনজিতে চলাচলে ঝুঁকি অনেক। কারণ মাঝে মাঝেই দুর্ঘটনার শিকার হয়ে এই এলাকার মানুষ প্রাণ হারাচ্ছেন। মালিক সমিতির কাছে আমাদের দাবি, সুন্দর ভালমানের বাস দিয়ে বাস সার্ভিসটা সঠিকভাবে পরিচালনার মধ্য দিয়ে বাস সার্ভিস চালু করা হোক। এতে জনগণের দুর্ভোগ লাঘব হবে। সাধারণ মানুষ পরিবার পরিজন নিয়ে স্বাচ্ছন্দ্যে যাতায়াত করতে পারবে।

হরিরামপুর উপজেলা বাস মালিক সমিতির সভাপতি সাফায়েত হোসেন বলেন, অবৈধ সিএনজিচালিত অটোরিকশা সিন্ডিকেটের জন্যই এ রুটে বাস চলাচল বন্ধ হয়ে গেছে। সিএনজি পাঁচ জন যাত্রী নিয়ে চলে যায়। এতে মানুষ তাড়াতাড়ি যেতে পারে বলেই সিএনজির দিকে যাত্রীরা বেশি ঝুঁকে গেছে । অটোরিকশাতে চালকের পাশে কিন্তু যাত্রী বসার নিয়ম নেই। তিন জনের জায়গায় সিএনজিতে পাঁচ নিয়ে যায়। এটা কিন্তু অনিয়ম। এতে করে এ রুটে সিএনজি দুর্ঘটনাও বেড়ে গেছে। পাশাপাশি এ রুটে বাস বন্ধের কারণে সরকারের কিন্তু রাজস্বও কমে গেছে। অবৈধভাবে সিএনজি চলাচল বন্ধ করে বাস সার্ভিস চালু না হলে জনদুর্ভোগ দূর হবে না।

এ বিষয়ে মানিকগঞ্জ জেলা পরিবহন মালিক সমিতির সভাপতি মো. জাহিদুল ইসলাম জাহিদ মুঠোফোনে জানান, দীর্ঘদিন যাবৎ ঝিটকা রোডে বেশ ভাঙাচোরা থাকায় বাস চলাচল বন্ধ ছিলো। এখন রাস্তার কাজ হয়েছে। জাতীয় নির্বাচনের কারণে বাস সার্ভিস চালুর প্রক্রিয়া সম্ভব হয়নি। তবে আগামী ৬ মাসের মধ্যে আমরা বাস সার্ভিস চালুর পদক্ষেপ গ্রহণ করার চেষ্টা করবো। ফিটনেসবিহীন সিএনজি ও অদক্ষ চালকের বিষয়ে তিনি জানান, আগামী মিটিংয়ে আমরা এ বিষয়ে সিদ্ধান্ত নিয়ে পদক্ষেপ নেবো।