সারা বাংলা

চাঁপাইনবাবগঞ্জে আমন ধান সংগ্রহে হোঁচট

চাঁপাইনবাবাগঞ্জে আমন মৌসুমের ধান সংগ্রহ অভিযানে হোঁচট খেয়েছে জেলা খাদ্য বিভাগ। লক্ষ্য মাত্রার এক তৃতীয়াংশও ধান কিনতে পারেনি সরকারি এই প্রতিষ্ঠানটি। প্রচারণার অভাব এবং বাজারে দাম বেশি হওয়ায় ধান সংগ্রহ অভিযান ব্যর্থ হয়েছে বলে মনে করছেন সংশ্লিষ্টরা। তবে, লক্ষ্যমাত্রার কাছাকাছি পরিমাণ সিদ্ধ ও আতব চাল সংগ্রহ করতে পেরেছে সরকারি এই দপ্তর।

স্থানীয় কৃষকদের সঙ্গে কথা বলে জানা যায়, বর্তমান বাজারদরের চেয়ে ৫-৭ টাকা কমে গুদামে ধান সংগ্রহ করে। এছাড়া, আর্দ্রতার কথা বলে প্রতি মণে এক-দুই কেজি করে বেশি ধান নেওয়াসহ অনেক সময় ধান ফেরতও দেওয়া হয় কৃষকদের। স্থানীয় বাজারে ঝুট-ঝামেলা নেই। এসব কারণে, কৃষকেরা বাজারে ধান বিক্রি করেছেন। ফলে, ধান সংগ্রহ অভিযান ব্যর্থ হয়েছে।

সারাদেশের মতো চাঁপাইনবাবগঞ্জেও গত ২৩ নভেম্বর সরকারিভাবে আমন ধান-চাল সংগ্রহ অভিযান শুরু হয়। এই সংগ্রহ অভিযান শেষ হয়েছে ২৮ ফেব্রুয়ারি। ৩০ টাকা কেজি ধান ও ৪৪ টাকা কেজি চালের দাম নির্ধারণ করে সরকার। চাঁপাইনবাবগঞ্জে ২ হাজার ২৬৪ মেট্রিক টন ধান, সিদ্ধ চাল প্রায় ১১ হাজার ৪৭ মেট্রিক টন, আতব চাল ২ হাজার ৮৯৭ মেট্রিক টন সংগ্রহের লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারণ করা হয়। তবে, ১১ হাজার ৩৫ মেট্রিক টন সিদ্ধ চাল, ১ হাজার ৮৮৫ মেট্রিক টন আতব চাল সংগ্রহ করা গেলেও ধান সংগ্রহ হয়েছে মাত্র ৬২৬ মেট্রিক টন।

জেলা খাদ্য নিয়ন্ত্রকের কার্যালয় সূত্রে জানা গেছে, এবার সদর উপজেলায় ৪২৬, নাচোলে ৯৩২, গোমস্তাপুরে ৬৭৫, ভোলাহাটে ২০৬ ও শিবগঞ্জে ২৫ মেট্রিক টন ধান সংগ্রহের লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারণ করা হয়। তবে, সদর থেকে মৌসুমে কোনো ধান সংগ্রহ করা যায়নি। নাচোল উপজেলা থেকে ১৮৪, গোমস্তাপুরে ২২৫, ভোলাহাটে ২০৬ ও শিবগঞ্জে ১১ মেট্রিক টন ধান সংগ্রহ করা সম্ভব হয়েছে। 

গোমস্তাপুরের কৃষক সাইফুল ইসলাম বলেন, এবার আমন সংগ্রহ অভিযান কখন শুরু হয়েছে আমার জানা নেই। ধান সংগ্রহ অভিযান নিয়ে যতোটা প্রচারণা দরকার, ততোটা হয়নি এবার। এছাড়া,  গুদামে ধান বিক্রি করতে গেলে নানা ধরনের হয়রানির শিকার হতে হয়। তাই আমার পরিচিত যেসব কৃষক তারাও এই কারণে গুদামে ধান দিতে চায় না।

শিবগঞ্জ উপজেলার কৃষক সাইদুর রহমান বলেন, বাজারে যে দামে ধান বিক্রি হচ্ছে, তার থেকেও প্রায় প্রতি কেজি ৫-৭টাকা কম দামে ধান নেয় খাদ্য গুদাম। এছাড়া, নিজ খরচে ধান দিতে যেতে হয়, এটাও অনেক ভোগান্তি। বাড়ি থেকে নিজ খরচে ধান নিয়ে গেলেও নানা অজুহাতে তারা ধান নিতে চায় না। সব মিলিয়ে এখানকার অধিকাংশ কৃষক বাজারেই ধান বিক্রি করে লাভবান হয়েছেন।

জেলা খাদ্য নিয়ন্ত্রক মিজানুর রহমান বলেন, চলতি আমন মৌসুমে খোলা বাজারে ধান-চালের দাম সরকারি ক্রয়মূল্যের চেয়ে কিছুটা বেশি। এ কারণে কৃষক সরকারি খাদ্যগুদামে ধান দিচ্ছেন না। এছাড়া, সরকারি গুদামে ধান দিতে হলে কিছু শর্ত মানতে হয়। যেমন ধানের আর্দ্রতা ১৪ শতাংশের কম থাকতে হবে। কিন্তু, বেশিরভাগ ধান এসেছে যেগুলো আর্দ্রতা ছিল ১৬ বা ১৭ শতাংশ। যে কারণে সেই ধান কেনা যায়নি। কৃষকরা ১৬-১৭ শতাংশ আর্দ্রতাসম্পন্ন ধান খোলা বাজারে বিক্রি করেছেন অধিক দামে। প্রচার প্রচারণার অভাবের ধান সংগ্রহ অভিযান ব্যর্থ হয়েছে এই অভিযোগ অস্বীকার করেছেন এই কর্মকর্তা।