কুমিল্লার সিটি কপোরেশনের (কুসিক) মেয়র পদে উপনির্বাচনে প্রচার শেষ হচ্ছে বৃহস্পতিবার। রাত ৮টা থেকে আনুষ্ঠানিক প্রচার শেষ হবে। বুধবার (৬ মার্চ) শেষ মুহূর্তে প্রচারে ব্যস্ত সময় পার করছেন চার মেয়র প্রার্থী। ভোট নিজের দিকে টানতে দিচ্ছেন নানা প্রতিশ্রুতি।
মেয়রপদে চার জনই স্বতন্ত্র প্রার্থী। আওয়ামী লীগ থেকে কোনো প্রার্থী দেয়নি বা কোনো প্রার্থীকে দলগতভাবে সমর্থন দেয়নি। আওয়ামী লীগের দুই নেতা প্রতিদ্বন্দ্বিতা করছেন। আর নির্বাচনে নির্বাচনে অংশ নিচ্ছে না। আগামী ৯ মার্চ উপনির্বাচনে ভোটগ্রহণ অনুষ্ঠিত হবে।
নগর আওয়ামী লীগ সমর্থিত বাস প্রতীকের স্বতন্ত্র প্রার্থী ডা. তাহসিন বাহার সূচনা নগরীর অশোকতলা এলাকায় প্রচার চালান দলীয় নেতাকর্মীদের নিয়ে। মেয়র হিসেবে স্মার্ট নগরী উপহার দেয়ার প্রতিশ্রুতি দেন তিনি।
সাবেক দুই বারের মেয়র ঘড়ি প্রতীকের প্রার্থী মনিরুল হক সাক্কু নগরের কান্দিরপাড় রুপায়ন টাওয়ারের সামনে গণসংযোগ করেন। দীর্ঘদিনের স্থানীয় রাজনীতি করায় নিজস্ব ভোট ব্যাংকের প্রতি আস্থা রাখছেন সাক্কু। সাক্কু বিএনপি থেকে বহিষ্কৃত।
অন্য প্রার্থীদের মধ্যে ভোটের মাঠে প্রচারণায় এগিয়ে আছেন নিজাম উদ্দিন কাযসার। দিনভর নগরীর ১৬নং ওয়ার্ডের বিভিন্ন এলাকায় প্রচার চালান। ভোটাদের দেন নানা প্রতিশ্রুতি। তরুণ ভোটাদের টানতে নানামুখী প্রচার চালাচ্ছেন।
কুমিল্লা মহানগর আওয়ামী লীগের উপদেষ্টা কমিটির সদস্য ও ‘হাতি’ প্রতীকের প্রার্থী নূর-উর রহমান মাহমুদ তানিম নেতাকর্মীদের নিয়ে নগরীর ৫নং ওয়ার্ড মোগলটুলিসহ বিভিন্ন এলাকায় প্রচারণা চালান।
স্থানীয় সূত্রে জানা যায়, এ নির্বাচনে ত্রিমুখী লড়াইয়ের সম্ভাবনার কথা বলছেন নগরীর বাসিন্দারা। কুমিল্লা জেলা পুলিশ বলছে, নির্বাচন সামনে রেখে যে কোনো ঘটনা মোকাবিলা করার জন্য পুলিশের একাধিক টিম প্রস্তুত রয়েছে।
পুলিশ সুপার আবদুল মান্নান বলেন, সমগ্র নির্বাচনী এলাকায় ১২ প্লাটুন বিজিবি, র্যাবের ২৭টি টিম, পুলিশের ২৭টি মোবাইল টিম, ৯টি স্ট্রাইকিং ফোর্সসহ তিন স্তরে নিরাপত্তা থাকবে।
স্থানীয় প্রবীণ রাজনীতিকদের সঙ্গে আলাপ করে জানা যায়, ভোটের সময় ঘনিয়ে আসার সঙ্গে চলছে শেষ মুহূর্তের প্রস্তুতি ও জয় নিশ্চিত করার হিসাব-নিকাশ। দলীয় নেতাকর্মীদের ভোটকেন্দ্রে নেয়া ও বাস প্রতীকে ভোট দেয়া নিশ্চিত করার ওপর জোর দিচ্ছেন সূচনার সমর্থক-নেতারা। পাশাপাশি তরুণ ১২ হাজার ভোটারদের দিকেও নজর রয়েছে তার। বিএনপি ও সদর দক্ষিণ উপজেলার ৯টি ওয়ার্ডে ভোটারদের দিকে বিশেষ নজর দিয়েছেন মনিরুল হক সাক্কু।
কুমিল্লা মহানগর স্বেচ্ছাসেবক দলের সাবেক নেতা নিজাম উদ্দিন কায়সার। গত নির্বাচনে প্রায় ৩০ হাজার ভোট পেয়েছিলেন তিনি। দলের সিদ্ধান্তের বাইরে গিয়ে নির্বাচন করায় সাক্কুর মতো কায়সারকে বহিষ্কার করে বিএনপি। তবে বিগত নির্বাচন থেকে স্থানীয় বিএনপি নেতাকর্মীরা এবার তার পাশে থাকায় জয়ের ব্যবধান গড়ে দিতে পারে তিনি। সেই প্রচেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছেন তিনি।
‘হাতি’ প্রতীকের প্রার্থী নূর-উর রহমান মাহমুদ তানিমের পাশে এ পর্যন্ত আওয়ামী লীগের কোনো নেতাকে দেখা যায়নি। তবে সাবেক ছাত্রলীগের একাধিক নেতাকর্মী নির্বাচনে তার পক্ষে কাজ করছেন। ভোটের মাঠে কিছু অসুবিধার মধ্যে আছেন তানিম। ভোটের শেষ সময়ের প্রস্তুতি নিচ্ছে রিটার্নিং কর্মকর্তার দপ্তরও। ভোটগ্রহণের দিন ৯ মার্চ কুমিল্লায় সাধারণ ছুটি ঘোষণা করা হয়েছে।
রিটার্নিং কর্মকর্তার দপ্তর ও স্থানীয় সূত্রে জানা যায়, এ নির্বাচনের ভোটার রয়েছেন ২ লাখ ৪২ হাজার ৪৫৮ জন। তাদের মধ্যে সদর দক্ষিণের ৯ ওয়ার্ডে ভোটার ৬৮ হাজার ৭৫২ জন। ওই এলাকার অধিকাংশ বিএনপি ভোটার। প্রত্যেক প্রার্থী নিজ এলাকার ভোটারদের রিজার্ভ হিসাবে আখ্যায়িত করে অন্য এলাকার ভোটারদের দিকেই নজর বেশি দিচ্ছেন।
কুমিল্লা মহানগর আওয়ামী লীগের যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক আহমেদ নেওয়াজ পাভেল বলেন, ‘কুমিল্লা নগরের মেয়ে, কুমিল্লার মাটি ও মানুষের নেতা আ ক ম বাহাউদ্দিন বাহার এমপির কন্যা ডা. তাহসিন বাহার সূচনা ব্যক্তি উদ্যোগে দীর্ঘদিন ধরে মানুষের জন্য কাজ করছেন। এ নগরের মানুষ তাকে ভোট দেবে ও মহানগর আওয়ামী লীগের অঙ্গ সংগঠন তার পাশে রয়েছে।’
তিনি বলেন, কুমিল্লা মোট ভোটারের প্রায় ২০ শতাংশ ভাসমান। এখানে ভাসমান ভোটার সঙ্গে কথা হয়েছে, তাদের ভোটও বাস প্রতীকে পড়বে।
মনিরুল হক সাক্কু বলেন, ‘আমি দীর্ঘদিন ধরে কুমিল্লার লোকাল রাজনীতির সঙ্গে জড়িত। কুমিল্লা নগর বাসী প্রথম থেকে আমার উপর আস্থা রেখেছে। আমি মানুষের জন্য কাজ করছি। সিটি কপোরেশনের বড় বড় প্রকল্পগুলো সরকার থেকে এনেছি। মানুষ আমার উপর আস্থা রাখবে।’
মনিরুল হক সাক্কুর নির্বাচনের দেখভাল করছেন তার ছোট ভাই কাইমুল হক রিংকু। তিনি বলেন, ‘আমার ভাই মানুষের জন্য কাজ করছে ৪৬ বছর ধরে। তিনি কুমিল্লার রাজনীতির সঙ্গে পরিচিত। এখানকার ভোট ব্যাংক মানেই সাবেক এমপি আকবর হোসেন আর সাক্কু। আমরা মানুষের জন্য কাজ করেছি। মানুষ আমাদের ভোট দেবে।’
কুমিল্লা মহানগর স্বেচ্ছাসেবক দলের সাবেক নেতা নিজাম উদ্দিন কায়সারের পক্ষে কাজ করা নগরীর ২৪ নং ওয়ার্ডে নাজমুল নামে এক কর্মী জানান, বিগত নির্বাচনের তুলনায় কায়সার ভাইয়ের ভোটের মাঠ এবার অনেক ভালো। বিশেষ করে, কুমিল্লা দক্ষিণ জেলা আওয়ামীলীগের আহ্বায়ক হাজী আমিনুল রশিদ ইয়াছিনের সমর্থকরা কায়সার ভাইয়ের পক্ষে কাজ করছে। এবার কায়সার ভাইয়ের জয় হবে। এছাড়া কাউসারের প্রধান টার্গেট সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম প্রতিদিন ফেসবুকে লাইভে কথা চালাচ্ছেন। তরুণ ভোটারদের দিচ্ছেন নানা প্রতিশ্রুতি।
প্রার্থী 'হাতি’ প্রতীকের প্রার্থী নূর-উর রহমান মাহমুদ তানিম মিডিয়া দায়িত্ব পালন করছে, মো. সাকিব হোসেন। তিনি বলেন, তানিম ভাই দীর্ঘদিন ছাত্র রাজনীতি করছেন কুমিল্লায়। তরুণ সমাজে উনার গ্রহণযোগ্যতা রয়েছে। বিশেষ করে তারা নতুন প্রার্থীকে ভোট দেবেন। এছাড়াও যারা স্থানীয় এমপি কে পছন্দ করেন না, তাদের ভোটও তানিম ভাইয়ের পক্ষ যাবে। এ বিষয়ে সুশাসনের জন্য নাগরিক-সুজনের জেলা সভাপতি শাহ মোহাম্মদ আলমগীর বলেন, ‘আমরা চাই কুমিল্লা সুন্দর নির্বাচন হউক। কয়েক দিন ধরে অনেক হামলা ও সংঘাতের খবর পাচ্ছি। এসব ঘটনায় সাধারণ মানুষের মধ্যে আতঙ্ক বিরাজ করছে।’
২০২২ সালের কুমিল্লা সিটি করপোরেশনের তৃতীয় নির্বাচনে মেয়র নির্বাচিত হন আওয়ামী লীগ মনোনীত নৌকা প্রতীকের আরফানুল হক রিফাত। ২০২৩ সালের ১৩ ডিসেম্বর চিকিৎসা চলাকালে তার মৃত্যু হয়। এরপর কুমিল্লা সিটি করপোরেশনের মেয়র পদটি শূন্য ঘোষণা করে নির্বাচন কমিশন উপনির্বাচনে তারিখ ঘোষণা করে। আগামী ৯ মার্চ ১০৫টি ভোট কেন্দ্রের ৬৪০টি কক্ষে ভোট নেয়া হবে। নির্বাচন ইভিএমে অনুষ্ঠিত হবে। এবার ২ লাখ ৪২ হাজার ৪৫৮ ভোটার তাদের ভোটাধিকার প্রয়োগ করবেন।