সিরাজগঞ্জে যমুনায় জেগে ওঠা ছোট-বড় বালুচরে মরিচের ব্যাপক চাষ হয়েছে। ভালো দামও পাচ্ছেন কৃষকেরা। চলতি বছরে উৎপাদনের লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারণ করা হয়েছে ১৬ হাজার ৪৮৮ মেট্রিক টন। যার বাজার মূল্যে প্রায় শতকোটি টাকা। সিরাজগঞ্জ কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের (উপ-পরিচালক) বাবলু কুমার এই তথ্য জানিয়েছেন।
জেলা কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তর সূত্রে জানা গেছে, এবছর জেলায় ১ হাজার ৮৭০ হেক্টর জমিতে মরিচের চাষ হয়েছে। এর মধ্যে সদর ৬৮০, কাজিপুর ৪৪০, রায়গঞ্জ ৪৬৫, উল্লাপাড়া ৯৫, কামারখন্দ ৭৮, চৌহালী ৭০, শাহজাদপুর ২২, তাড়াশ ১০ ও বেলকুচি উপজেলায় ১০ হেক্টর জমিতে চাষ হয়েছে। চাষকৃত মরিচের মধ্যে হাইব্রিড জাতের বিজলী, যমুনা, রশনী, ঝিলিক উন্নত জাতের মধ্যে বারি-৩, সুপার সনিক, রংপুরী, বগুড়া ছাড়াও স্থানীয় জাতের মরিচের ব্যাপক আবাদ হয়েছে। প্রতি হেক্টর জমিতে মরিচের উৎপাদন হয়েছে দশ দশমিক ৬৩ মেট্রিক টন। এ বছর জেলায় শুকনো মরিচের উৎপাদন লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারণ করা হয়েছে ১৬ হাজার ৪৮৮ মেট্রিক টন।
রবিবার (১০ মার্চ) সকালে ফসলের মাঠে গিয়ে দেখা যায়, যমুনার বিস্তৃন্ন চরাঞ্চল জুড়ে মরিচের খেত। কৃষক-কৃষাণীরা জমি থেকে লাল, সবুজ মরিচ তোলার কাজে ব্যস্ত সময় পার করছেন। জমি থেকে মরিচ তুলে বস্তাবন্দি করছেন তারা। প্রতিদিন দূর-দূরান্ত থেকে পাইকার ব্যবসায়ীরা এসে এখান থেকে মচির ক্রয় করে নদীপথে নিয়ে যাচ্ছেন আড়তে। স্থানীয় চাহিদা মিটিয়ে সিরাজগঞ্জের মরিচ পৌঁছে যাচ্ছে সারাদেশে।
স্থানীয় বাজার সূত্রে জানা যায়, বর্তমানে ৫০ থেকে ৬০ টাকা কেজি কাঁচামরিচ বিক্রি হচ্ছে আর শুকনো মরিচ মানভেদে বিক্রি হচ্ছে ৫৫০ থেকে ৬০০ টাকা কেজি।
মরিচ চাষিরা জানান, মরিচ চাষে বিঘা প্রতি ৩০ থেকে ৩৫ হাজার টাকা খরচ পড়ে। এক মৌসুমে ৩ থেকে ৪ দফা পানি সেচ ও সামান্য সার কিটনাশক ছাড়া এ চাষবাদে তেমন কোন খরচ ও ঝামেলা নেই। মরিচ লাগানোর পরে ৬০ থেকে ৭০ দিনের মাথায় তা উঠানো শুরু হয়।
সোনামুখী ইউনিয়নের পাইকপাড়া গ্রামের মরিচ চাষি শহিদুল ইসলাম জানান, ১ বিঘা জমিতে মরিচ চাষ করেছি। এতে খরচ হয়েছে ৩২ হাজার টাকা। শুকনো মরিচ বাজারে বর্তমানে বিক্রি হচ্ছে ৫৫০ থেকে ৬০০ টাকা কেজি। বর্তমান বাজারে চার মণ মরিচ ৯৬ হাজার টাকা বিক্রি করতে পারবেন বলে জানান এই চাষী।
নাটুয়াপাড়ার মরিচ চাষি ছালাম শেখ বলেন, কৃষি বিভাগের পরামর্শে ২ বিঘা জমিতে মরিচের চাষ করেছি। এরই মধ্যে ৪০ মণ কাঁচামরিচ বিক্রি করেছি। আরও ৮ মণ মরিচ শুকিয়ে রেখেছি।
গুটিয়ার চরের মরিচের পাইকার আমজাদ হোসেন জানান, দীর্ঘদিন ধরে চরাঞ্চলের মাঠ থেকে কাঁচা-পাকা মরিচ কিনে আড়তে বিক্রি করি। এ বছর প্রায় দুইশো মন মরিচ ক্রয় করে বিক্রি করেছি।
সিরাজগঞ্জ সদর উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা আনোয়ার সাদাত জানান, আবহাওয়া অনুকূলে থাকায় সদর উপজেলায় ৬৮০ হেক্টর জমিতে মরিচের চাষ হয়েছে। কৃষি বিভাগের সার্বিক সহযোগিতায় এবারে মরিচের বাম্পার ফলন হয়েছে। বিঘা প্রতি ৫০ থেকে ৬০ মন মরিচের ফলন হয়েছে। ফলন ও দাম ভালো পেয়ে কৃষকের মুখে হাসি ফুটেছে।