সারা বাংলা

যেভাবে জিম্মি হয় এমভি আবদুল্লাহ, অডিও বার্তায় জানালেন চিফ অফিসার

২৩ বাংলাদেশি নাবিকসহ সোমালিয়ান জলদস্যুদের হাতে জিম্মি হয়ে আছে বাংলাদেশি পতাকাবাহী জাহাজ এমভি আবদুল্লাহ। ভারত মহাসাগরে জলদস্যুদের কবলে পড়া থেকে শুরু করে জাহাজের বর্তমান পরিস্থিতি সম্পর্কে মালিকপক্ষের কাছে পাঠানো এক অডিও বার্তায় বিস্তারিত জানিয়েছেন জিম্মি থাকা জাহাজের চিফ অফিসার মো. আতিক উল্লাহ খান।

তার পাঠানো অডিও বার্তাটি ইতিমধ্যে জাহাজের মালিক কর্তৃপক্ষ এসআর শিপিং এবং গণমাধ্যমকর্মীদের হাতে এসেছে। রাইজিংবিডির পাঠকদের জন্য অডিও বার্তাটি হুবহু তুলে ধরা হলো-

আসসালামুলাইকুম স্যার, আমি চিফ অফিসার মো. আতিক উল্লাহ খান বলছি। আজ (মঙ্গলবার) সকালে জাহাজের সময় আনুমানিক সাড়ে ১০টার দিকে একটা হাই স্পিডবোট আমাদের দিকে আসতে থাকে। সঙ্গে সঙ্গে এলার্ম দিই। আমরা সবাই ব্রিজে গেলাম। ওখান থেকে পরে সিটে চলে যাই।

ক্যাপ্টেন স্যার ও সেকেন্ড অফিসার তখন ব্রিজে ছিলেন। আমরা ঝিকঝাক কোর্স করলাম। তারপর এসওএস (জীবন বাঁচানোর জরুরি বার্তা) করলাম। ইউকে এমটিও (যুক্তরাজ্যের মেরিটাইম ট্রেড অপারেশন) যোগাযোগের চেষ্টা করেছি। কিন্তু তারা ফোন রিসিভ করেনি। এর মধ্যে জলদস্যুরা চলে আসে।

ওরা প্রথমে ক্যাপ্টেন স্যার ও সেকেন্ড অফিসারকে জিম্মি করে। পরে আমাদের ডাকে। সেসময় কিছুক্ষণ গোলাগুলি করে তারা। এতে আমরা একটু ভয় পেয়ে যাই। সবাই ব্রিজে বসে ছিলাম। তবে, কারো গায়ে হাত তোলেনি। শুধু সেকেন্ড অফিসারকে একটু মারধর করেছে। তারপর আরেকটি স্পিডবোটে আরও কয়েকজন আসে। এভাবে ১৫-২০ জন জাহাজটিতে আসে।

এর কিছুক্ষণ পর একটি বড় ফিশিং বোট নিয়ে আরও জলদস্যুরা আসে। ইরানের মালিকানাধীন ওই ফিশিং বোটটি এক মাস আগে তারা জিম্মি করেছিল। এটি দিয়ে তারা এক মাস ধরে নতুন কোনো জাহাজ জিম্মি করার জন্য সাগরে ঘোরাঘুরি করছিল। দুর্ভাগ্যজনকভাবে আমরা সামনে পড়ে যাই। ওই ফিশিং বোটের তেল শেষ হয়ে গিয়েছিল। আমাদের জাহাজে থাকা পাম্প দিয়ে কিছু ডিজেল নিয়ে ওই বোটে দিয়েছে তারা। তেল দেওয়ার পর আমাদের জাহাজে উঠে জিম্মি করা ফিশিং বোটটি ছেড়ে দেয়।

তারপর ওরা আমাদের সেকেন্ড ও থার্ড অফিসারকে নিয়ে জাহাজের ইঞ্জিন রুমে যায়। সেখানে গিয়ে জাহাজের ইঞ্জিন বন্ধ করে দেয়। এখন পর্যন্ত আল্লাহর রহমতে কারো কোনো ক্ষয়ক্ষতি হয়নি। জাহাজেরও কোনো ক্ষতি হয়নি। তবে সবাই ভয়ে আছি। ওরা খুব ভয় দেখাচ্ছে।

জাহাজে ২০-২৫ দিনের খাবার পানি আছে। সবাইকে বলেছি, এগুলো একটু সাবধানে ব্যবহার করতে। শেষ হয়ে গেলে বিপদে পড়ব। তবে, একটা সমস্যা হচ্ছে আমাদের জাহাজে কিছু কোল্ড কার্গো আছে। প্রায় ৫৫ হাজার টন। এগুলো একটু ডেঞ্জারাস। ফায়ারের ঝুঁকি আছে। শেষ যখন অক্সিজেন মেপেছি তখন ৯-১০ শতাংশ লেভেল পেয়েছি। এটি নিয়মিত মনিটরিং করতে হয়। কোনো কারণে অক্সিজেন লেভেল বেড়ে গেলে বিশেষজ্ঞের মতামত নিতে হবে। এটার একটু ব্যবস্থা করবেন, স্যার।

আমাদের জন্য দোয়া করবেন। আমাদের পরিবারকে একটু দেখবেন। সান্ত্বনা জানাবেন, স্যার। আসসালামুলাইকুম।

আরও পড়ুন: জলদস্যুদের কবলে বাংলাদেশের জাহাজ, ২৩ নাবিক জিম্মি