বিশিষ্ট ক্রীড়া সংগঠক, বীর মুক্তিযোদ্ধা শেরপুর জেলা ক্রীড়া সংস্থার সাবেক সাধারণ সম্পাদক মোকছেদুর রহমান হিমু আর নেই।
বৃহস্পতিবার (১৪ মার্চ) রাত সাড়ে সাতটার দিকে শেরপুর শহরের খরমপুর এলাকার নিজবাড়ীতে জ্ঞান হারালে জেলা সদর হাসপাতালে নেওয়ার পর কর্তব্যরত চিকিৎসক তাকে মৃত ঘোষণা করেন। তিনি বেশ কিছুদিন ধরে ক্যান্সার এবং শ্বাসকষ্টজনিত রোগে ভুগছিলেন। চিকিৎসকের পরামর্শে নিজ বাড়িতে তিনি চিকিৎসাধীন ছিলেন।
মুক্তিযুদ্ধ শুরুর লগ্নে শেরপুর থেকে প্রথম যে ১২ জন যুবক সামরিক প্রশিক্ষণের জন্য ঝিনাইগাতীর পাতার ক্যাম্পে গিয়েছিলেন, মোকছেদুর রহমান হিমু ছিলেন তাদেরই একজন। সম্মুখ সমরের দুর্ধর্ষ একজন মুক্তিযোদ্ধা হিসেবে তিনি বিভিন্ন অপারেশনে অংশ নিয়েছিলেন এবং কৃতিত্বের স্বাক্ষর রেখেছিলেন। মুক্তিযুদ্ধ থেকে ফেরার পর দেশ গঠনে ঝাঁপিয়ে পড়েন এবং অডিটর পদে সরকারি চাকরিতে যোগদান করে চাকরি জীবন শেষে অবসর যাপন করছিলেন।
এই বীর মুক্তিযোদ্ধা হিমু ক্রীড়াঙ্গনের একজন একনিষ্ঠ সংগঠক ছিলেন। শেরপুরের প্রথম ক্রিকেট দল শেরপুর ক্রিকেট ক্লাবের তিনি প্রতিষ্ঠাতাদের একজন। দলটির নিয়মিত খেলোয়াড়ও ছিলেন। দীর্ঘদিন তিনি নিষ্ঠার সাথে জেলা ক্রীড়া সংস্থার সাধারণ সম্পাদকের দায়িত্ব পালন করেছেন। তিনি বাংলাদেশ এ্যাথলেটিক্স ফেডারেশন ও ঢাকা বিভাগীয় ক্রীড়া সংস্থার সাবেক সহ-সভাপতি ছিলেন।
বাংলাদেশ ক্রিকেট বোর্ডের কাউন্সিলর থাকাকালে তিনি টুর্নামেন্ট কমিটির সদস্য ছিলেন। এছাড়া জেলা ও বিভাগীয় ক্রীড়া সংগঠক ফোরামের তিনি নির্বাহী কমিটিতেও দায়িত্ব পালন করেছেন। ময়মনসিংহ বিভাগীয় ক্রীড়া সংস্থার প্রতিষ্ঠাকালীন কমিটিতেও তিনি দায়িত্ব পালন করেছেন।
সজ্জন এবং স্পষ্টভাষী হিমু সাহেবের মৃত্যু সংবাদ ছড়িয়ে পড়লে জেলার ক্রীড়াঙ্গনে শোকের ছায়া নেমে আসে। একজন ভালো মানুষের প্রয়াণে শহরের বিভিন্ন পর্যায়ের সুধীবৃন্দ, মুক্তিযোদ্ধা সকলেই শোকাভিভূত হয়ে পড়েন।
শুক্রবার (১৫ মার্চ) বেলা আড়াইটায় শেরপুরের ইতিহাসের অংশ এই বীর মুক্তিযোদ্ধা মোকছেদুর রহমান হিমু’র নামাজে জানাযা শহরের তেরাবাজার জামিয়া সিদ্দিকীয় মাদ্রাসা মাঠে অনুষ্ঠিত হয়। জানাজা শেষে তাকে রাষ্ট্রীয়ভাবে সম্মাননা দেওয়া হয়। পরে শহরের পৌর কবরস্থানে তাকে দাফন করা হয়।
এসময় মরহুমকে গার্ড অব অনার দেন সদর উপজেলার নির্বাহী কর্মকর্তা মিজাবে রহমত ও সদর থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা এমদাদুল হক। এসময় সেক্টর কমান্ডার্স ফোরামের সাধারণ সম্পাদক বীর মুক্তিযোদ্ধা আখতারুজ্জামান, বীর মুক্তিযোদ্ধা মোখলেছুর রহমান, বীর মুক্তিযোদ্ধা আব্দুল খালেকসহ অন্যান্য মুক্তিযোদ্ধাগণ, শেরপুর পৌরসভার মেয়র গোলাম কিবরিয়া লিটন, সদর উপজেলার চেয়ারম্যান মো. রফিকুল ইসলাম, মাদরাসা কমিটির সাধারণ সম্পাদক হাবিবুর রহমান হাবিবসহ জেলার বিভিন্ন স্তরের রাজনৈতিক নেতৃবৃন্দ, সামাজিক-সাংস্কৃতিক সংগঠনের নেতৃবৃন্দ ও সমাজের বিভিন্ন স্তরের গণ্যমান্য ব্যক্তিবর্গ উপস্থিত ছিলেন।