কচ্ছপের জীবনাচার সম্বন্ধে জানতে দু’টি অলিভ রিডলি প্রজাতির মা কচ্ছপের শরীরে ট্র্যাকিং চিপ লাগিয়ে কক্সবাজার সমুদ্রসৈকত থেকে ছেড়ে দেওয়া হয়েছে। এসময় বালিয়াড়িতে ফোটানো ৩২টি সামুদ্রিক কচ্ছপের বাচ্চাও অবমুক্ত করা হয়েছে।
সোমবার (১৮ মার্চ) বিকেলে টেকনাফ সমুদ্র উপকূলের শামলাপুর সৈকতের কোডেক নামের একটি সংস্থার হ্যাচারি থেকে অলিভ রিডলি প্রজাতির এ বাচ্চাগুলো সাগরে ছাড়া হয়। চলতি মৌসুমে এই প্রথম হ্যাচারিতে ফোটানো বাচ্চা অবমুক্ত করা হয় বলে জানান সংশ্লিষ্টরা।
যুক্তরাষ্ট্র ভিত্তিক সংস্থা ইউএসএআইডির সহায়তায় পরিচালিত নেচার অ্যান্ড লাইফ প্রকল্পে সামুদ্রিক কচ্ছপ সংরক্ষণ ও প্রজননে কাজ করছে কোডেক।
এ প্রকল্পের পরিচালক ড. শীতল কুমার নাথ বলেন, বিশেষজ্ঞদের সহায়তায় দু’টি কচ্ছপের শরীরে ট্র্যাকিং চিপ ডিভাইস স্থাপন করা হয়েছে। এই ডিভাইস স্থাপনের ফলে আগামী মৌসুমে কচ্ছপগুলো কক্সবাজার সমুদ্র উপকূলে ডিম পাড়তে আসছে কিনা তা শনাক্ত করা সম্ভব হবে।
তিনি আরও বলেন, প্রতিবছর সামুদ্রিক মা কচ্ছপগুলো সৈকতের বিভিন্ন পয়েন্টের বালিতে ডিম ছাড়ে। সেখান থেকে ডিম সংগ্রহ ও সংরক্ষণ করে হ্যাচারিতে নিয়ে আসা হয়। হ্যাচারিতে রেখে বাচ্চা ফোটানো শেষে পুনরায় সমুদ্রে অবমুক্ত করা হয়। এখন নতুন করে সামুদ্রিক মা কচ্ছপের দেহে শনাক্তকরণ ট্র্যাকিং চিপ স্থাপন করা হয়েছে। এটা নিশ্চিত হতে চাচ্ছি যে, এ বছর যে মা কচ্ছপটি সৈকতে ডিম ছাড়লো সেটি আগামী বছর একই জায়গায় ডিম ছাড়তে আসে কি না।
নেচার অ্যান্ড লাইফ প্রকল্পের উদ্যোগে গত তিন বছরে ১২৬টি মা কচ্ছপ থেকে ১৩ হাজার ৫৩০টি ডিম সংরক্ষণ করা হয়েছে। তা থেকে বাচ্চা ফোটানো হয়েছে ৮ হাজার ৬৭৮টি। যা পরে ধাপে ধাপে সাগরে অবমুক্ত করা হয়।
বাংলাদেশ সমুদ্র গবেষণা ইনস্টিটিউটের (বোরি) জ্যেষ্ঠ বৈজ্ঞানিক কর্মকর্তা তরিকুল ইসলাম বলেন, এই ডিভাইস স্থাপনের ফলে সামুদ্রিক কচ্ছপের গতিবিধি সার্বক্ষণিক পর্যবেক্ষণ করা হবে। এতে জানা যাবে কচ্ছপ কখন কোথায় কিভাবে অবস্থান করছে, তাদের আবাসস্থল এবং প্রজনন মৌসুমে তাদের উপকূলে ফিরে আসার রুট বা পথ শনাক্তকরণ করা সম্ভব হবে। ফলে তাদের চলাচলের পথে বাধাবিপত্তি চিহ্নিত করা যাবে।
তিনি আরও বলেন, চলতি প্রজনন মৌসুমে (নভেম্বর-মার্চ) শনিবার পর্যন্ত ১৬৩টি মা কচ্ছপ থেকে ১৮ হাজার ৭৭৯টি ডিম সংগ্রহ করে হ্যাচারিতে সংরক্ষণ করা হয়েছে। কয়েকদিনের মধ্যে অধিকাংশ হ্যাচারির ডিম ফুটে বাচ্চা জন্ম নিবে। এরপর তা সাগরে অবমুক্ত করা হবে। এ পর্যন্ত ৯৯টি মা কচ্ছপ ডিম পাড়তে এসে মারা পড়েছে।