সারা বাংলা

কবরস্থান থেকে কঙ্কাল চুরি, প্রত্যক্ষদর্শীর রোমহর্ষক বর্ণনা

‘তখন আমি ফজরের নামাজ পড়ে কোরআন তেলাওয়াত শেষে বাইরে বের হই। ভোরের আলো কেবল ফুটছে, আঁধার কিছুটা ছিল। কিছুদিন আগে আমার ভাই মারা গেছে। তাই কবরস্থানের দিকে যাই। সেখানে গিয়ে কালো পোশাক পড়া, মুখ বাঁধা ৯ জনকে কবরস্থান থেকে বের হতে দেখি। তাদের কাঁধে ব্যাগ ছিল।’

মঙ্গলবার (১৯ মার্চ) ভোরে নিজের চোখে দেখা ঘটনার বর্ণনা এভাবেই করেন রেখা খাতুন নামের এক নারী। তার বাড়ি আমিনপুর থানার খাস আমিনপুর গ্রামে।

পড়ুন: ১৫টি কবরের ওপরের মাটি সরানো, ভেতরের দৃশ্যে এলাকায় তোলপাড়

রেখা খাতুন বলেন, ‘কালো পোশাক পড়া মুখোশধারী ৯ জন দুই গ্রুপে কবরস্থান থেকে বের হয়। এরপর তারা একটি ট্রাকে চলে যায়। পরে দ্রুত বাড়িতে চলে আসি আর ভাবি, কালো পোশাক পড়া মানুষগুলো কবরস্থানে কি করছে। পরে সকালে আমার স্বামী বাজার থেকে ফিরে কঙ্কাল চুরির কথা জানায়। তখন বুঝতে পারি, কালো পোশাক পড়া লোকগুলো এই কাজ করেছে।’

পাবনা বেড়া উপজেলার আমিনপুর কেন্দ্রীয় কবরস্থান থেকে মঙ্গলবার (১৯ মার্চ) ভোররাতে ১৫টি মরদেহের কঙ্কাল চুরি হয়। সকালে বিষয়টি টের পান স্থানীয়রা। কঙ্কাল চুরি নিয়ে মুহূর্তের মধ্যে জেলা জুড়ে দেখা দেয় চাঞ্চল্য। খবর পেয়ে ঘটনাস্থল পরিদর্শন করেছে পুলিশ।

দুপুরে সরেজমিনে কবরস্থানে গিয়ে দেখা যায়, অনেক মানুষের ভিড়। কেউ বাইরে দাঁড়িয়ে দেখছেন। কেউ আবার কবরে নেমে কঙ্কাল চুরির বিষয়টি দেখছেন। ১৫টি কবরের চিত্র প্রায় একই রকম। দেখা যায়, কবরগুলোর বাঁশের চারাট উপরে তোলা। মাটি খুঁড়ে তোলা হয়েছে।

সেখানে কথা হয় স্থানীয় ইউপি সদস্য আবুল কালাম মন্ডলের সঙ্গে। তিনি বলেন, প্রত্যেকটা কবর থেকে মাথা তুলে নিয়ে গেছে দুর্বৃত্তরা।

খাস আমিনপুর কেন্দ্রীয় কবরস্থানের সভাপতি বাবুল উদ্দিন মন্ডল বলেন, কঙ্কাল চুরির বিষয়টি জানার পর দ্রুত থানায় খবর দেই। পরে পুলিশ ঘটনাস্থলে আসে। এটার তদন্ত হওয়া উচিত। এরকম ঘটনা আমাদের এলাকায় এর আগে কখনো হয়নি। কারা, কী কারণে এটা করেছে তাদের আইনের আওতায় আনা উচিত।

খাস আমিনপুর গ্রামের অটোরিকশাচালক সেলিম বিশ্বাস বলেন, ভোরে এই কবরস্থানের পাশ দিয়ে বাজারে যাওয়ার সময় দেখি অনেক লোকজন। পরে জানতে পারি কঙ্কাল চুরির ঘটনা। আসলে মানুষ মরেও শান্তি নাই। কবরে গিয়েও তার ওপর অত্যাচার। এটি খুবই দুঃখজনক ও কষ্টদায়ক ঘটনা।

চুরি হওয়া এক কবরের লাশের স্বজন মাসুদ রানা বলেন, মহাসড়কের পাশের কবরস্থান থেকে কঙ্কাল চুরি কোনো সাধারণ ঘটনা নয়। এর সঙ্গে নিশ্চয়ই বড় কোনো চক্র জড়িত। আমাদের দাবি, পুলিশ দ্রুত এই ঘটনা উদঘাটন করে জড়িতদের বিরুদ্ধে আইনি ব্যবস্থা নেবে।

আমিনপুর থানার অফিসার ইনচার্জ (ওসি) হারুনুর রশীদ বলেন,‌ কবর থেকে কঙ্কালগুলো চুরি হয়েছে। আমরা বিষয়টি গুরুত্বের সঙ্গে তদন্ত করছি। কোনো চক্র জড়িত আছে কিনা তদন্ত সাপেক্ষে বিস্তারিত বলা যাবে। অভিযোগ পেলে আইনগত ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে।