রাজশাহীর আওয়ামী লীগ থেকে ‘মীরজাফর ও মোস্তাকদের’ বিতাড়িত করার ঘোষণা দিয়েছেন দলটির নেতারা। বঙ্গবন্ধুর জন্মদিন ও মহান স্বাধীনতা দিবস উপলক্ষে বৃহস্পতিবার (২১ মার্চ) বিকেলে জেলা ও মহানগর আওয়ামী লীগ আয়োজিত আলোচনা সভায় বক্তারা এ ঘোষণা দেন।
রাজশাহী মহানগরীর গণকপাড়া সংলগ্ন জয় বাংলা চত্বরে এ সভার আয়োজন করা হয়। এ সভায় প্রধান অতিথি ছিলেন দলের সভাপতিমণ্ডলীর সদস্য ও রাজশাহী সিটি করপোরেশনের মেয়র এএইচএম খায়রুজ্জামান লিটন। জেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি অনিল কুমার সরকার সভাপতিত্ব করেন। বিশেষ অতিথি ছিলেন মহানগরের সভাপতি বীর মুক্তিযোদ্ধা মোহাম্মদ আলী কামাল।
এ সভা থেকে ঘোষণা দেওয়া হয়, গত ৯ মার্চ পল্লি উন্নয়ন ও সমবায় প্রতিমন্ত্রী আবদুল ওয়াদুদ দারাকে যে স্থানে সংবর্ধনা দেওয়া হয়েছে, সেই স্থানটি ‘পবিত্র’ করা হবে। এ জন্য সেখানে ইসলামি জালসার আয়োজন করে দোয়া-কালাম পড়া হবে।
গত ৯ মার্চ নগরীর সাহেববাজার বড় মসজিদ প্রাঙ্গণে প্রতিমন্ত্রী হওয়ায় রাজশাহী-৫ (পুঠিয়া-দুর্গাপুর) আসনের এমপি ও জেলা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক আবদুল ওয়াদুদ দারাকে সংবর্ধনা দেওয়া হয়। জেলা ও মহানগর আওয়ামী লীগের ব্যানারে ওই সংবর্ধনা অনুষ্ঠিত হয়।
ওই অনুষ্ঠানে রাজশাহী-১ (গোদাগাড়ী-তানোর) আসনের এমপি ওমর ফারুক চৌধুরী রাজশাহীর আওয়ামী লীগকে ‘রাহুমুক্ত’ করার ঘোষণা দেন। আর রাজশাহী-৪ (বাগমারা) আসনের এমপি আবুল কালাম আজাদ জেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি অনিল কুমার সরকারকে অশ্লীল ভাষায় গালি দেন। বৃহস্পতিবারের আলোচনা সভায় এসবের তীব্র প্রতিবাদ জানানো হয়।
সভায় প্রধান অতিথির বক্তব্যে খায়রুজ্জামান লিটন বলেন, ‘একজন (প্রতিমন্ত্রী দারা) কিছু একটা হয়ে গেছেন, তাঁকে সংবর্ধনা দিতেই পারেন। লোক ভাড়া করে আনা হলো, সাহেববাজার বড় মসজিদ প্রাঙ্গণটি কলুষিত করা হলো। সংগঠনের নামে আমরা দেখলাম অন্যকে গালাগালি করে ছোট করার অপপ্রয়াস করা হলো।’
এমপি ওমর ফারুক চৌধুরীর প্রতি ইঙ্গিত করে লিটন বলেন, ‘দেখলাম, সেই মঞ্চে যার গায়ে ছাত্রদলের গন্ধ, যার গায়ে ফ্রিডম পার্টির গন্ধ, যার পরিবারে এখনও স্বাধীনতার বিপক্ষের মানুষের চলাচল আছে, যার নিজের এলাকায় তাকে গডফাদার বলা হয়, কীসের গডফাদার আমি সেটা বলতে চাই না; তিনি ঘোষণা করলেন- রাজশাহীর আওয়ামী লীগকে জনগণের কাছে ফিরিয়ে দেওয়া হলো। আরে উনি তো নিজেই ছাত্রদল ফ্রিডম পার্টি করে এসেছেন, উনি আবার আওয়ামী লীগকে রাহুমুক্ত করবেন কীভাবে? আমরা জন্মগতভাবে রক্তের মধ্যে দিয়েই আওয়ামী লীগ করি।’
লিটন বলেন, ‘আমরা মনে করি, বড় মসজিদ প্রাঙ্গণ সেটাকে কলুষিত করার জন্য সেখানে মিলাদ দিয়ে পবিত্র করা দরকার। আমরা সেটা করতে চাই। ঈদের পরে আমরা সেখানে ইসলামি জালসা দিয়ে মওলানাদের ডেকে এনে, দোয়া-কালাম পড়িয়ে পবিত্র করতে চাই। কারণ, কিছু রাজাকার, কিছু বিএনপি, জনগণের ভোটে তারা কতটুকু এগিয়ে আছেন, আমি সেই প্রশ্নে যাব না। তারা ওখানে বড় বড় কথা বলে আমাকে, আমাদের অবাঞ্ছিত ঘোষণা করে।’
সভায় বিশেষ অতিথি ছিলেন রাজশাহী-৩ (পবা-মোহনপুর) আসনের এমপি আসাদুজ্জামান আসাদ। তিনি বলেন, ‘কিছুদিন আগে কিছু রাজাকারশাবক রাজশাহীকে অশান্ত করতে এসেছিল। তারা খায়রুজ্জামান লিটনের পায়ের নিচে বসে নেতা হয়েছে। যারা কয় দিন আগে জিন্দাবাদ স্লোগান দিয়েছে, তারা এখন নোংরা কথা বলবে এটাই স্বাভাবিক। রাজাকারশাবকদের বলব, যদি সাহস থাকে, ক্ষমতা থাকে কোথায় সমাবেশ করবেন জানাবেন। সেখানে গিয়ে ওই মঞ্চে দাঁড়িয়েই আপনাদের মুখোশ উন্মোচন করতে চাই।’
রাজশাহী-২ (সদর) আসনের স্বতন্ত্র এমপি ও মহানগর আওয়ামী লীগের সহ-সভাপতি শফিকুর রহমান বাদশা বলেন, ‘লিটনকে ছোট করে কেউ যদি মনে করেন বড় হবেন, তাহলে তিনি আহাম্মক। এখন ষড়যন্ত্র শুরু হয়েছে। আমরা এই ষড়যন্ত্রকারীদের উৎখাত করব।’
রাজশাহী-৪ আসনের সাবেক এমপি এনামুল হক ও রাজশাহী-৫ আসনের সাবেক এমপি ডা. মনসুর রহমান ষড়যন্ত্রকারীদের বিরুদ্ধে কঠোর ব্যবস্থা নেওয়ার দাবি জানান। এনামুল হক বলেন, ‘গাছের থেকে পরগাছা বড় হয়ে গেছে। তারা মূল গাছ সম্পর্কে কটূ কথা বলছেন। তাদের বলব শিষ্টাচার মেনে রাজনীতি করুন নইলে পালাবার জায়গা পাবেন না।’ তিনি ‘আগাছা’ দূর করে রাজশাহী জেলা ও মহানগর আওয়ামী লীগের কমিটি করার অনুরোধ জানান।
মহানগর আওয়ামী লীগের সভাপতি মোহাম্মদ আলী কামাল বলেন, ‘বাংলার মাটিতেই মীরজাফর-মোস্তাকের জন্ম হয়েছে। রাজশাহীতে কেন নতুন করে এদের জন্ম হবে না? জন্ম হয়েছে, আমরা প্রতিহত করব।’ জেলার সভাপতি অনিল কুমার সরকার বলেন, ‘সংবর্ধনার মঞ্চ থেকে কালাম (এমপি আবুল কালাম আজাদ) আমাকে গালি দিয়েছেন। কোনো ভদ্র-শিক্ষিত মানুষ এটা করেন না। এর বিচারের ভার আমি আওয়ামী লীগের নেতাকর্মীদের দিলাম।’
আলোচনা সভায় বিশেষ অতিথি হিসেবে আওয়ামী লীগের কেন্দ্রীয় কমিটির সদস্য বেগম আখতার জাহানও বক্তব্য দেন। সভা পরিচালনা করেন জেলা আওয়ামী লীগের যুগ্ম সম্পাদক লায়েব উদ্দিন লাভলু ও মহানগরের যুগ্ম সম্পাদক মোস্তাক হোসেন।
সভায় আওয়ামী লীগ ও সহযোগী সংগঠনের আরও অনেক নেতা বক্তব্য দেন। তারাও ‘ষড়যন্ত্রকারীদের’ রাজশাহী থেকে বিতাড়িত করার ঘোষণা দেন। সভায় মহানগরের প্রতিটি ওয়ার্ড এবং ৯ উপজেলা থেকে আওয়ামী লীগ ও সহযোগী সংগঠনের হাজার খানেক নেতাকর্মী যোগ দেন।