রাজশাহী চিনিকলের এক প্রকৌশলী শ্রমিক ইউনিয়নের (সিবিএ) এক নেতাকে মারধর করেছেন বলে অভিযোগ উঠেছে। এ ঘটনায় চিনিকলে উত্তেজনা দেখা দিয়েছে। অভিযুক্ত প্রকৌশলীকে দ্রুত এখান থেকে প্রত্যাহার করা না হলে বৃহত্তর কর্মসূচি পালনের ঘোষণা দিয়েছেন শ্রমিকেরা। অভিযুক্ত প্রকৌশলী অভিযোগ অস্বীকার করে বলেছেন, শ্রমিকেরাই তাঁকে মেরেছেন।
অভিযুক্ত প্রকৌশলীর নাম সামিউল ইসলাম। রাজশাহী চিনিকলে তিনি সহকারী ব্যবস্থাপক (সিভিল) পদে কর্মরত। গত ২৪ মার্চ তিনি চিনিকল সিবিএর সাধারণ সম্পাদক রফিকুল ইসলামকে মারধর করেছেন বলে শ্রমিকদের অভিযোগ। এই প্রকৌশলীর বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেওয়ার আশ্বাস দিয়ে শ্রমিকদের থামিয়ে রেখেছিলেন চিনিকলের ব্যবস্থাপনা পরিচালক (এমডি)। কিন্তু ব্যবস্থা না নেওয়ার কারণে বৃহস্পতিবার (২৮ মার্চ) থেকে শ্রমিকেরা মুখ খুলতে শুরু করেছেন।
প্রকৌশলী সামিউল ইসলামের শাস্তির দাবিতে বৃহস্পতিবার চিনিকলে বিক্ষোভ করেন শ্রমিকেরা। বিক্ষোভ থেকে তাঁরা দ্রুত সামিউল ইসলামের প্রত্যাহার দাবি করেন। তা না হলে আরও কঠোর কর্মসূচি দেওয়া হবে বলে ঘোষণা দেন। সকাল ১০টা থেকে বেলা ১১টা পর্যন্ত এ বিক্ষোভ কর্মসূচি চলে।
ঘটনা তদন্তে চার সদস্যের কমিটি করে দিয়েছেন চিনিকলের এমডি আবুল বাসার। কমিটির প্রধান চিনিকলের মহাব্যবস্থাপক (ফাইনান্স) লতিফা খাতুন। সদস্যরা হলেন- মহাব্যবস্থাপক (প্রশাসন) শাহীনূর রহমান, উপমহাব্যবস্থাপক (সম্প্রসারণ) নজরুল ইসলাম ও ব্যবস্থাপক (উৎপাদন) রুহুল আমিন। কমিটিতে তাদের প্রতিনিধি না রাখায় ক্ষুব্ধ শ্রমিকেরা।
রাজশাহী চিনিকল শ্রমিক ইউনিয়নের সাধারণ সম্পাদক রফিকুল ইসলাম জানান, সেলিম রেজা নামের এক টার্বাইন অপারেটরের কোয়ার্টারে পানির সমস্যা। সমস্যার সমাধানে সেলিম কয়েক দিন ধরে সহকারী ব্যবস্থাপক (সিভিল) সামিউল ইসলামের কাছে ঘুরছিলেন। সামিউল এতে বিরক্ত হয়ে বলেছিলেন, সামনের রোজায় পাইপ ঠিক করে দেওয়া হবে। পরে সেলিম রেজার হয়ে কথা বলতে গত ২৪ মার্চ তিনি সামিউল ইসলামের দপ্তরে যান। এতে সামিউল ইসলাম উত্তেজিত হয়ে ওঠেন। একপর্যায়ে সামিউলের দপ্তরে থাকা ছোট রড দিয়ে রফিকুলের মাথায় আঘাত করতে যান। রফিকুল হাত দিয়ে মাথা রক্ষা করতে গেলে রডের আঘাতে বাম হাতের আঙুল কেটে যায়। ঘটনার পর অন্য শ্রমিকেরা জড়ো হন।
রফিকুল ইসলাম আরও জানান, পরে এমডির কক্ষে উভয়পক্ষ গেলে সেখানেও সামিউল উত্তেজিত হয়ে ওঠেন। এমডির কক্ষের পাশে তাঁর সহকারী ইফতেখার সেলিমের কক্ষে এসে সামিউল টেবিলের ওপর উঠে পড়েন। এরপর তিনি ওপর থেকে শ্রমিকদের লাথি মারতে থাকেন। একটি টেবিল ফ্যান দিয়েও তিনি শ্রমিকদের আঘাত করার চেষ্টা করেন। পরে ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তারা এসে তাঁকে শান্ত করেন।
রফিকুল ইসলাম বলেন, ‘এই ঘটনার পর এমডি আবুল বাসার বিষয়টি কাউকে না জানানোর জন্য অনুরোধ করেন। তিনি এই প্রকৌশলীর বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেবেন বলে আশ্বাস দেন। পাশাপাশি একটি তদন্ত কমিটি করতে চান। সেই কমিটিতে শ্রমিকদের দুজন প্রতিনিধি ও দুজন কর্মকর্তাকে রাখার কথা। কিন্তু তিনি যে কমিটি করেছেন তাতে শ্রমিক প্রতিনিধি রাখা হয়নি। এমডি এখন প্রকৌশলী সামিউল ইসলামকে বাঁচানোর চেষ্টা করছেন। এ জন্য বুধবার আমি কাটাখালী থানায় প্রকৌশলীর বিরুদ্ধে লিখিত অভিযোগ করেছি।’
চিনিকল শ্রমিক ইউনিয়নের সভাপতি মাসুদ রানা বলেন, ‘এই প্রকৌশলীর দুর্নীতির শেষ নেই। সংস্কারের নামে তিনি লাখ লাখ টাকা তছরুপ করেন। কিছু দিন আগে চিনিকল উচ্চ বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষককে অশ্রাব্য ভাষা গালাগাল করেছেন। এসবের প্রতিবাদ করার কারণে তিনি আগে থেকে সিবিএ নেতাদের ওপর ক্ষুব্ধ ছিলেন। এই ক্ষোভের জেরে তিনি অফিসকক্ষেই সাধারণ সম্পাদক রফিকুলের ওপর হামলা করেছেন। আমরা তাকে দ্রুত এখান থেকে প্রত্যাহার করে বিভাগীয় ব্যবস্থা নেওয়ার দাবি জানাই। নইলে বৃহত্তর কর্মসূচি দেওয়া হবে।’
জানতে চাইলে অভিযুক্ত সহকারী ব্যবস্থাপক (সিভিল) সামিউল ইসলাম বলেন, ‘আমি রড দিয়ে মারতে যাব কেন? কোনো অফিসে কি রড থাকে? শ্রমিকেরাই আমাকে মারধর করেছে।’ তাঁর বিরুদ্ধে তোলা দুর্নীতির অভিযোগ প্রসঙ্গে বলেন, ‘এখন একটা ঝামেলা হয়েছে, এসব কথা বলবেই।’
চিনিকলের এমডি আবুল বাসার বলেন, ‘ঘটনাটি নিয়ে দুইপক্ষই আমার কাছে লিখিত অভিযোগ দিয়েছে। আমি চার সদস্যের তদন্ত কমিটি করে দিয়েছি। তিন কার্য দিবসের মধ্যে তদন্ত শেষ করতে বলেছি। আজই (বৃহস্পতিবার) তদন্ত শেষ করতে হবে। তারপর যে প্রতিবেদন এবং সুপারিশ আসবে তার আলোকে আমি ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষকে ব্যবস্থা নিতে বলব।’
নগরীর কাটাখালী থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) তৌহিদুর রহমান বলেন, ‘মারধর ও ছিলাফোলা জখম করার অভিযোগে সিবিএ সাধারণ সম্পাদক রফিকুল ইসলামের লিখিত অভিযোগ পেয়েছি। বিষয়টি চিনিকলের অভ্যন্তরীণ ব্যাপার। সেখানে তদন্ত চলছে। সেখানে তদন্তে কী পাওয়া যাচ্ছে সেটি দেখে পুলিশও অভিযোগের তদন্ত করবে। তারপর ব্যবস্থা নেওয়া হবে।’