কানাডার প্রধানমন্ত্রী জাস্টিন ট্রুডোর নামে পাবনায় ভুয়া জন্মনিবন্ধন সনদ তৈরির ঘটনায় গঠিত তদন্ত কমিটি তদন্ত প্রতিবেদন জমা দিয়েছে। একইসঙ্গে ইউনিয়নের ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান আব্দুর রউফ মোল্লা ও সচিব আওলাদ হাসানকে কারণ দর্শানোর নোটিশ দেওয়া হয়েছিল, সেটিরও জবাব দিয়েছেন তারা।
বৃহস্পতিবার (২৮ মার্চ) বিকেলে পাবনার জেলা প্রশাসক মুহা. আসাদুজ্জামান বিষয়টি নিশ্চিত করেছেন। তিনি বলেন, ‘কানাডার প্রধানমন্ত্রী জাস্টিন ট্রুডোর নামে ভুয়া জন্মনিবন্ধন সনদ তৈরি ঘটনায় স্থানীয় সরকার মন্ত্রী মো. তাজুল ইসলামের নির্দেশে ঘটনা খতিয়ে দেখতে তদন্ত কমিটি গঠন করা হয়। পাবনার স্থানীয় সরকারের উপ-পরিচালক সাইফুর রহমানকে তদন্ত করতে নির্দেশ দেওয়া হয়েছিল। তিনি আজকে দুপুরের দিকে আমার অফিসে তদন্ত প্রতিবেদন জমা দিয়েছেন। আমি এখনও সেই প্রতিবেদন দেখতে পারিনি। দেখে পরে বিস্তারিত জানাতে পারব।’
সুজানগর উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা সুখময় সরকার বলেন, ‘সুজানগর উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তার কার্যালয় থেকে ইউনিয়নের ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান আব্দুর রউফ মোল্লা ও সচিব আওলাদ হাসানকে কারণ দর্শানোর নোটিশ দেওয়া হয়েছিল। তারা সেটির জবাব দিয়েছেন। আমরা পাবনার জেলা প্রশাসক স্যারের কাছে জমা দিয়েছি। তিনি দেখে মূলত ব্যবস্থা নেবেন।’ তবে শোকজের জবাব সন্তোষজনক দিয়েছেন নাকি অসন্তোষজনক দিয়েছেন তিনি জানাতে পারেননি। তিনি বলেন, ‘সব বিষয় ডিসি স্যার বলতে পারবেন।’
পাবনার স্থানীয় সরকার বিভাগের উপ-পরিচালক সাইফুর রহমান বলেন, ‘জেলা প্রশাসকের নির্দেশে আমি সুজানগরের সেই আহম্মদপুর ইউনিয়নে গিয়েছিলাম। সব বিষয় খোঁজখবর নিয়েছি। তথ্য-উপাত্ত সংগ্রহ করেছি। সেখানে বেশ কিছু অসঙ্গতি ও অনিয়ম পেয়েছি। এগুলো ডিসি স্যার বলবেন। এর বেশি কিছু আপাতত বলতে পারছি না।’
কানাডার প্রধানমন্ত্রী জাস্টিন ট্রুডো পেয়েছেন বাংলাদেশী জন্ম সনদ। সেই জন্ম সনদের কাগজ বলছে, তিনি জন্মসুত্রে পাবনা জেলার নাগরিক। পাবনার সুজানগর উপজেলার আহম্মদপুর ইউনিয়ন পরিষদ থেকে তার নামে ইস্যু করা হয় ভুয়া জন্ম নিবন্ধন সনদ।
ইউনিয়ন পরিষদের দেয়া জন্ম নিবন্ধন সনদে দেখা গেছে, নিবন্ধিত ব্যক্তি নাম হিসেবে রয়েছে জাস্টিন ট্রুডো, পিতা পিয়েরে ট্রুডো, মাতা মার্গারেট ট্রুডো। জন্ম তারিখ রয়েছে ২৫ ডিসেম্বর ১৯৭১। জন্ম সনদের রেজিস্ট্রেশন নম্বর দেয়া হয়েছে ১৯৭১৭৬১৮৩১৭০৩৫৫০৯।
অনুসন্ধান বলছে, জন্ম নিবন্ধনটির আসল ব্যক্তির নাম আজিজুল। সেখানে দেয়া হয়েছে জাস্টিন ট্রুডোর নামে। তার জন্ম সনদের প্রথম চারটি ডিজিট ছিল ২০০৪। আর সেটা পরিবর্তন করে দেয়া হয়েছে ১৯৭১। আর গত ১৯ মার্চ রাত ৯টা ৫১ মিনিটে পেমেন্ট হয়েছে। ৯টা ৫২ মিনিটে রিসিভ হয়েছে এবং রাত ৯টা ৫৪ মিনিটে উর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষ সেটি এপ্রুভও করেছে। আর এই অপকর্ম করেছেন আহম্মদপুর ইউনিয়ন পরিষদের কম্পিউটার অপারেটর নিলয় পারভেজ ইমন। তার বিরুদ্ধে টাকা নিয়ে ভুয়া জন্ম নিবন্ধন সনদ দেওয়ার আরও অভিযোগ রয়েছে।
জাস্টিন ট্রুডোর জন্ম সনদ তৈরিকারক সেই কম্পিউটার অপারেটর নিলয় পারভেজ ইমনের নাম উল্লেখসহ অজ্ঞাত আরও চারজনের বিরুদ্ধে গত ২২ মার্চ আমিনপুর থানায় মামলা করেন ইউনিয়নের প্যানেল চেয়ারম্যান-২ ফাতেমা বেগম। ঘটনার পর থেকে পলাতক রয়েছেন অভিযুক্ত ইমন।