সারা বাংলা

হত্যা মামলার আসামিকে নিয়ে তদন্ত কর্মকর্তার ইফতার

রাজশাহীর বাগমারায় সোহাগ হোসেন (২৬) নামে এক যুবককে হত্যা করা হয়। ওই হত্যা মামলার এক নম্বর আসামি ঝিকরা ইউনিয়নের চেয়ারম্যান রফিকুল ইসলামকে পাশে নিয়ে ইফতার করেছেন মামলার তদন্ত কর্মকর্তা পুলিশ পরিদর্শক নয়ন হোসেন। এ ঘটনায় ক্ষোভ প্রকাশ করেছেন মামলার বাদী নিহত সোহাগের বাবা শরিফুল ইসলাম।  

শনিবার (৩০ মার্চ) যোগীপাড়া পুলিশ তদন্ত কেন্দ্রের পক্ষ থেকে ইফতার মাহফিল অনুষ্ঠানের আয়োজন করা হয়। এসময় সোহাগ হত্যা মামলার এক নম্বর আসামি ঝিকরা ইউনিয়নের চেয়ারম্যান রফিকুল ইসলাম উপস্থিত ছিলেন। ওই ইফতার মাহফিলের একটি ছবি সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে পোস্ট করেন যোগীপাড়া ইউনিয়নের সাবেক চেয়ারম্যান মোস্তফা কামাল।

আরও পড়ুন: বাগমারায় সোহাগ হত্যা মামলার আসামি গ্রেপ্তার

ছবিতে দেখা যায়, মামলার তদন্ত কর্মকর্তা ও যোগীপাড়া পুলিশ তদন্ত কেন্দ্রের ইনচার্জ পুলিশ পরিদর্শক নয়ন হোসেনের ডানপাশে সোহাগ হত্যা মামলার আসামি চেয়ারম্যান রফিকুল ইসলাম, বামপাশে বাগমারা থানার ওসি (তদন্ত) সবুজ রানা এবং তাঁর বামপাশে সাবেক চেয়ারম্যান মোস্তফা কামাল বসে আছেন। মামলার পর থেকে এলাকায় অবস্থান করলেও অদৃশ্য কারণে চেয়ারম্যান রফিকুল ইসলামকে গ্রেপ্তার করেনি পুলিশ।

গত ২ ফেব্রুয়ারি সকাল সাড়ে ১০টার দিকে মরুগ্রাম ডাঙ্গাপাড়া গ্রামের আনিছুর রহমানের ছেলে মনোহার ইসলাম তাদের জমিতে থাকা সরিষা তুলতে বিলে যায়। এ সময় একই গ্রামের বেশ কয়েকজন সেখানে উপস্থিত হন। তারা মনোহারকে বলতে থাকেন, তোকে বিলের জমিতে আসতে নিষেধ করেছি তারপরও কেন সরিষা তুলতে এসেছিস। এ সময় উভয়পক্ষের মধ্যে বাকবিতণ্ডা শুরু হয়। একপর্যায়ে মনোহারকে সরিষার জমিতেই মারধর করা হয়। আহত মনোহারকে উদ্ধার করে আত্রাই উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে ভর্তি করা হয়। বন্ধুর ওপরে হামলার খবর পেয়ে ঢাকা থেকে আহত মনোহারকে দেখতে তার বাসায় রওনা হন সোহাগসহ আরও কয়েকজন বন্ধু।

আরও পড়ুন: বাগমারায় আহত বন্ধুকে দেখতে এসে তরুণ খুন 

আহত মনোহারের বাসায় পৌঁছার আগেই ওই দিন রাত সাড়ে ৯টার দিকে ঝিকরা ইউনিয়নের মরুগ্রাম ডাঙ্গাপাড়া এলাকায় হামলার শিকার হন সোহাগসহ তার বন্ধুরা। হামলায় ঘটনাস্থলেই নিহত হন সোহাগ।

জানা গেছে, ঢাকার মালিবাগে একটি কোম্পানিতে চাকরি করার সময় বাগমারার ঝিকরা ইউনিয়নের মরুগ্রাম ডাঙ্গাপাড়া গ্রামের আনিসার রহমানের ছেলে মনোহার ইসলামের সঙ্গে সোহাগের পরিচয় হয়। সমবয়সী হওয়ায় সেই পরিচয় ঘনিষ্ঠ বন্ধুত্বে রূপ নেয়। সেই যোগাযোগ থেকে আহত বন্ধুকে দেখতে আসেন সোহাগসহ তার বন্ধুরা।  

এ ঘটনায় সোহাগের চাচাতো ভাই সাইফুল ইসলাম বাদী হয়ে গত ৩ ফেব্রুয়ারি বাগমারা থানায় প্রথমে একটি হত্যা মামলা দায়ের করেন। হত্যাকাণ্ডের পর থেকে  জড়িতরা এলাকা থেকে পালিয়ে বেড়াচ্ছেন। ওই হত্যা মামলায় কয়েকজনকে গ্রেপ্তার করে জেলহাজতে পাঠিয়েছে আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী। 

এদিকে, নিহত সোহাগ যশোরের মনিরামপুর এলাকার শরিফুল ইসলাম মিস্ত্রীর ছেলে। একমাত্র ছেলে খুন হওয়ার ঘটনায় তিনি মানসিক ভারসাম্য হারিয়ে ফেলেন। পরে তিনি সুস্থ হয়ে বাগমারায় আসেন এবং হত্যাকাণ্ডের সঙ্গে প্রত্যক্ষ ও পরোক্ষভাবে যারা জড়িত তাদের নাম উল্লেখসহ নাম না জানা কয়েকজনের বিরুদ্ধে রাজশাহীর আদালতে আরো একটি মামলা করেন। এক ঘটনায় দুটি মামলা হওয়ায় তদন্তের স্বার্থে আদালত তা আগের মামলাটির সঙ্গে সমন্বয় করার জন্য বাগমারা থানাকে নির্দেশ দেন। মামলার চূড়ান্ত প্রতিবেদন দাখিল করার আগেই আসামিকে সঙ্গে নিয়ে ইফতারের ঘটনায় বিভিন্ন মহলে ক্ষোভের সৃষ্টি হয়েছে। 

মামলার বাদী শরিফুল ইসলাম বলেন, আমার ছেলেকে যারা নির্মমভাবে হত্যা করেছে তাদের সবার বিচার চাই। আমার ছেলে কোনো অপরাধ করেনি। কেন তাকে হত্যা করা হলো। আসামিদের বিরুদ্ধে মামলা করা হলেও কেন তাদের না ধরে সঙ্গে নিয়ে ইফতার করা হচ্ছে?

এ ব্যাপারে মামলার তদন্ত কর্মকর্তা যোগীপাড়া পুলিশ তদন্ত কেন্দ্রের পরিদর্শক নয়ন হোসেন বলেন, আমি ইতোমধ্যে জয়পুরহাটের আক্কেলপুর থানায় ওসি হিসেবে বদলি হয়েছি। গতকাল শনিবার ইফতারের কিছুক্ষণ আগে আমি পুলিশ তদন্ত কেন্দ্রে যাই। সেখানে গিয়ে চেয়ারম্যান রফিকুল ইসলামকে দেখেছি। চেয়ারম্যানকে কে বা কারা দাওয়াত দিয়েছেন সেটি আমার জানা নেই। কোনো অপরাধীকে ছাড় দেওয়ার সুযোগ নেই বলেও মন্তব্য করেন এই পুলিশ কর্মকর্তা।

এ বিষয়ে বাগমারা থানার ওসি (তদন্ত) সবুজ রানা বলেন, আমি গত সপ্তাহে বাগমারা থানায় যোগদান করেছি। চেয়ারম্যান রফিকুল ইসলাম মামলার আসামি কী না বিষয়টি আমার জানা নেই।