মৌলভীবাজারের জুড়ী উপজেলার পূর্ব জুড়ি ইউনিয়নের পূর্ব গোয়ালবাড়ী গ্রামের ভাঙ্গারপাড়ে বিদ্যুতের আগুনে পুড়ে একই পরিবারের ছয় জনের মৃত্যুর ঘটনায় দায়িত্বে অবহেলার দায়ে পল্লী বিদ্যুৎ সমিতির (পবিস) তিনজন কর্মকর্তাকে সাময়িক বরখাস্ত ও এক কর্মচারিকে চাকরিচ্যুত করেছে ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষ। পবিসের মৌলভীবাজার কার্যালয়ের মহাব্যবস্থাপক এবিএম মিজানুর রহমান বিষয়টির সত্যতা নিশ্চিত করেছেন।
সাময়িক বরখাস্ত হওয়া কর্মকর্তারা হলেন, পূর্ব গোয়ালবাড়ী এলাকায় বিদ্যুৎ সরবরাহের দায়িত্বে থাকা পবিসের বড়লেখা কার্যালয়ের উপ-মহাব্যবস্থাপক সোহেল রানা চৌধুরী, সহকারী মহা-ব্যবস্থাপক আশরাফুল হুদা ও জুড়ী কার্যালয়ের ইনচার্জ রেজাউল করিম তালুকদার। এর মধ্যে সোহেল রানা চৌধুরীকে পবিসের সিলেটে তত্ত্বাবধায়ক প্রকৌশলীর কার্যালয়ে, আশরাফুল হুদাকে কুমিল্লার তত্ত্বাবধায়ক প্রকৌশলীর কার্যালয়ে এবং রেজাউলকে বরিশালের তত্ত্বাবধায়ক প্রকৌশলীর কার্যালয়ে সংযুক্ত করা হয়েছে। চাকরিচ্যুত কর্মচারী হলেন, শিক্ষানবিশ লাইনম্যান মো. আশিক।
মহাব্যবস্থাপক এ বি এম মিজানুর রহমান বলেন, পল্লী বিদ্যুতায়ন বোর্ডের (আরইবি) মানবসম্পদ বিভাগের পরিচালক একরামুল হাসান স্বাক্ষরিত চিঠিতে চার কর্মকর্তা-কর্মচারীর বিরুদ্ধে শাস্তিমূলক ব্যবস্থা গ্রহণের কথা জানানো হয়। ১ এপ্রিল থেকে তা কার্যকর হয়েছে।
মহাব্যবস্থাপক এবিএম মিজানুর রহমান বলেন, এর আগে দুর্ঘটনার কারণ অনুসন্ধানে আরইবি'র পক্ষ থেকে প্রধান প্রকৌশলী বিশ্বনাথ শিকদারকে প্রধান করে পাঁচ সদস্যের কমিটি গঠন করে দেওয়া হয়। কমিটির সদস্যরা সরেজমিন ঘটনাস্থল পরিদর্শন করে তিন কার্যদিবসের মধ্যে প্রতিবেদন দাখিল করেন। কমিটির সদস্যদের সুপারিশের পরিপ্রেক্ষিতে চার কর্মকর্তা-কর্মচারীকে শাস্তিমূলক ব্যবস্থা গ্রহণ করা হয়।
পূর্ব গোয়ালবাড়ী গ্রামের ভাঙ্গার পাড়ে রহমত আলী নামের এক ব্যক্তির জমিতে টিনের চালা ও বেড়া দেওয়া একটি ঘরে বাকপ্রতিবন্দ্বী দিনমজুর ফয়জুর রহমান (৫০) পরিবারের সদস্যদের নিয়ে পাঁচ-ছয় বছর ধরে থাকতেন। ফয়জুর ভূমিহীন ছিলেন। তাঁর ঘরের ওপর দিয়ে টানানো ছিল ১১ হাজার ভোল্টের বিদ্যুৎ লাইন। ২৬ মার্চ ভোরে বজ্রপাতসহ ঝড়-বৃষ্টিতে পাশের খুঁটি থেকে বিদ্যুৎ লাইনের তার ছিঁড়ে ঘরের ওপর পড়ে যায়। এতে ঘরটি বিদ্যুতায়িত হয়ে পড়ে আগুন ধরে যায়। পরিবারের সদস্যরা জীবন বাঁচাতে দরজা খুলে বাঁচার চেষ্টা চালান। এ সময় বিদ্যুৎস্পৃষ্ট হয়ে আগুন লেগে ঘটনাস্থলে ফয়জুর রহমান (৫০), তাঁর স্ত্রী শিরি বেগম (৪৫), মেয়ে সামিয়া সুলতানা (১৬), সাবিনা আক্তার (১৩) ও ছেলে সায়েম আহমদ (৮) মারা যায়। গুরুতর দগ্ধ সোনিয়াকে (৬) প্রথমে সিলেটের ওসমানী মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে নিয়ে যাওয়া হয়েছিল। উন্নত চিকিৎসার জন্য রাতে ঢাকায় শেখ হাসিনা জাতীয় বার্ণ ও প্লাস্টিক সার্জারি ইনস্টিটিউটে স্থানান্তর করা হয়। সেখানে ওই দিন ভোরে তার মৃত্যু হয়।