সারা বাংলা

কুমিল্লায় শিব নারায়ণ দাশকে সর্বস্তরের মানুষের শ্রদ্ধা

বাংলাদেশের প্রথম জাতীয় পতাকার অন্যতম নকশাকার ও কুমিল্লার কৃতি সন্তান শিব নারায়ণ দাশের মরদেহ আজ বিকেলে কুমিল্লায় আনা হয়। শনিবার (২০ এপ্রিল) বিকেল ৪টায় তার মরদেহ শ্রদ্ধা নিবেদনের জন্য কুমিল্লা টাউন হল মাঠের শহিদ মিনারে রাখা হয়। 

মুক্তিযুদ্ধ চলাকালে আঞ্চলিক কমান্ডার (বুড়িচং, ব্রাহ্মণপাড়া ও কসবা অঞ্চল) বীর মুক্তিযোদ্ধা ও আওয়ামী লীগ নেতা নাজমুল হাসান পাখি বিষয়টি নিশ্চিত করে বলেন, শীবু দা (শিব নারায়ণ) আমার নেতৃত্বে যুদ্ধ করেছেন, তিনি একজন অসাধারণ ব্যক্তি ও আপাদমস্তক একজন দেশপ্রেমিক। 

তিনি আরও বলেন, শীবু দা বেঁচে থাকতে যোগ্য সম্মান না পেলেও তার দেহ এবং চোখের কর্নিয়া দেশের জন্য দান করে গেছেন। ঢাকা ও কুমিল্লায় সর্বস্তরের মানুষের শ্রদ্ধা জানানোর পর মরদেহ বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব মেডিক্যাল বিশ্ববিদ্যালয় হাসপাতালে হস্তান্তর করা হবে।

এর আগে, ৭৮ বছর বয়সী জাসদ নেতা ও বীর মুক্তিযোদ্ধা শিব নারায়ণ দাশ শুক্রবার সকাল ৯টা ২৫ মিনিটে বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব মেডিক্যাল বিশ্ববিদ্যালয় হাসপাতালের আইসিইউতে মারা যান। তার ছেলে অর্ণব আদিত্য দাশ বলেন, বাবার মরদেহ বারডেমের হিমঘরে রাখা হয়েছে। তার দেহ এখানে (বিএসএমএমইউ) দান করা হবে এবং কর্নিয়া দান করা হয়েছে সন্ধানীতে। শ্বাসকষ্ট নিয়ে গত ১ এপ্রিল রাজধানীর শমরিতা হাসপাতালে ভর্তি হয়েছিলেন শিব নারায়ণ দাশ। 

মনিপুরী পাড়ার বাসায় ওইদিন রাতে বেশ অসুস্থ হয়ে পড়লে তাকে হাসপাতালে নিয়ে আইসিইউতে রাখা হয়। বৃহস্পতিবার রাতে শমরিতা থেকে তাকে বঙ্গবন্ধু মেডিক্যালে ভর্তি করা হয়। শিবনারায়ণ দাশের বাবা সতীশচন্দ্র দাশ কুমিল্লাতে আয়ুর্বেদ চিকিৎসা করতেন। ১৯৭১ সালে মুক্তিযুদ্ধ চলাকালীন পাকিস্তানি হানাদাররা তাকে ধরে নিয়ে হত্যা করে।

প্রসঙ্গত, ১৯৭০ সালের ৬ জুন ছাত্রনেতা শিব নারায়ণ দাশ ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ইকবাল হলের (বর্তমান শহীদ সার্জেন্ট জহুরুল হক হল) ১১৬ নম্বর কক্ষে রাত ১১টার পর পুরো পতাকার নকশা সম্পন্ন করেন। এ পতাকাই পরবর্তীতে ১৯৭১-এর ২ মার্চ ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের বটতলায় উত্তোলিত হয়। পরে ১৯৭১ সালের ২৩ মার্চ পাকিস্তান দিবসে সমগ্র পূর্ব পাকিস্তানের বিভিন্ন স্থানে পাকিস্তানের জাতীয় পতাকার পরিবর্তে শিব নারায়ণ দাশের নকশা করা বাংলাদেশের পতাকা উত্তোলন করা হয়।

১৯৭২ সালে শেখ মুজিবুর রহমানের সরকার শিব নারায়ণ দাসের নকশা করা পতাকার মধ্যে মানচিত্রটি বাদ দিয়ে পতাকার মাপ, রঙ ও তার ব্যাখ্যা সংবলিত একটি প্রতিবেদন দিতে বলেন পটূয়া কামরুল হাসানকে। কামরুল হাসান দ্বারা পরিমার্জিত রূপটিই বর্তমানে বাংলাদেশের জাতীয় পতাকা।