জুতা কারখানায় কাজ করতেন তারা। ঈদের আগে অর্ধেক বেতন দিয়ে পাঠানো হয় ছুটিতে। ছুটির মধ্যে জানিয়ে দেওয়া হয়, অনির্দিষ্টকালের জন্য কারখানা বন্ধ। আর বকেয়া বেতন, ঈদ বোনাস পরিশোধ করা হবে ২৮ এপ্রিল। সেদিন কারখানায় যান শ্রমিকরা। তবে মালিকপক্ষ কোনো টাকা পরিশোধ করেনি। এর জেরে শ্রমিকরা শরণাপন্ন হন থানায়।
ওসির মধ্যস্থতায় সিদ্ধান্ত হয়, বুধবার (১৫ মে) মালিকপক্ষ থানায় ওসির উপস্থিতিতে শ্রমিকদের সব টাকা পরিশোধ করবে। এজন্য শ্রমিকরা এদিন দুপুর ২টায় থানায় আসেন। তবে আট ঘণ্টায়ও মালিকপক্ষ আসেনি। রাত ৯টার দিকে ঢাকার ধামরাই থানায় গিয়ে দেখা মেলে এসব শ্রমিকের। তারা উপজেলার সোমভাগ ইউনিয়নে অবস্থিত কালামপুর বিসিকের এমএম পিপলস লেদারস ইন্ডাস্ট্রিজ নামে একটি জুতা কারখানার শ্রমিক।
শ্রমিকরা জানান, কারখানায় প্রায় ৬০ জনের মতো শ্রমিক কাজ করতেন। গত ঈদুল ফিতরের আগে শ্রমিকদের অর্ধেক মাসের বেতন দিয়ে কারখানা ছুটি ঘোষণা করা হয়। এরপর ১৬ এপ্রিল শ্রমিকদের মুঠোফোনে মেসেজ পাঠিয়ে জানানো হয়, কারখানা অনির্দিষ্টকালের জন্য বন্ধ ঘোষণা করা হয়েছে। বাকি অর্ধেক বেতন ও বোনাস ২৮ এপ্রিল পরিশোধ করা হবে।
২৮ এপ্রিল শ্রমিকরা কারখানায় এলে মালিকপক্ষ ওভারটাইমের অর্ধেক টাকা দিলেও বেতন ও বোনাস পরিশোধ করেনি। এজন্য শ্রমিকরা ধামরাই থানায় গিয়ে ওসির সহযোগিতা চান। ওসি মালিকপক্ষকে ডেকে শ্রমিকদের সঙ্গে বৈঠক করে সিদ্ধান্ত নেন, ১৫ মে থানায় উভয়পক্ষের উপস্থিতিতে বেতন পরিশোধ করা হবে। এরই জেরে বুধবার দুপুর ২টার দিকে থানায় আসেন অন্তত ২৫ শ্রমিক। কিন্তু রাত ১০টা পর্যন্ত শ্রমিকরা থানায় বসে থাকলেও মালিকপক্ষের কেউ আসেনি।
থানার শহীদ মিনারের সামনে জটলা হয়ে বসে থাকা শ্রমিকদের সঙ্গে কথা হয় এ প্রতিবেদকের। এক নারী শ্রমিক বলেন, রমজানে অর্ধেক বেতন দিয়েছে। এরপর কারখানা অনির্দিষ্টকালের জন্য বন্ধ ঘোষণা করা হয়। গত ২৮ তারিখ আসছিলাম বেতন নেওয়ার জন্য। তখন বলেছিল, ১৫ মে থানায় মালিকপক্ষকে নিয়ে বসে ওসির উপস্থিতিতে বেতন বুঝিয়ে দেওয়া হবে। এজন্য দুপুর ২টার দিকে থানায় আসি। কিন্তু মালিকপক্ষের কেউ আসেনি।
একই কথা বলেন আরেক শ্রমিক। তিনি বলেন, অর্ধেক মাসের বেতন-বোনাস পাব। গত ২৮ তারিখ এসেছিলাম। তখনো দেয়নি। আজ এসেছি। এখনো কারও দেখা পাইনি।
ধামরাই থানার অফিসার ইনচার্জ (ওসি) ১৫ মে থানায় বসে বেতন পরিশোধ করার বিষয়ে সিদ্ধান্ত হয়েছিল স্বীকার করলেও কারখানা কর্তৃপক্ষ তা অস্বীকার করে।
পিপলস লেদারস ইন্ডাস্ট্রিজের চেয়ারম্যান হাফিজুর রহমান বলেন, এমন কোনো সিদ্ধান্ত হয়নি। আমরাই থানায় গেছি। বলেছি, টাকার ব্যবস্থা হয়নি। হলে দ্রুত দেওয়া হবে। ১৫ তারিখের মধ্যে দেওয়ার কথা ছিল। আর আগে হলে আগে দেব। এরপর ১০ তারিখ থেকে কারখানায় এসে বেতন নিতে বলা হয়েছিল। সেদিন থেকে দেওয়া হচ্ছে। যারা এসেছে তারা পেয়েছে। যারা আসেনি তারা পায়নি।
১৫ মে উভয়পক্ষের উপস্থিতিতে বকেয়া পরিশোধ করার বিষয়ে ধামরাই থানার অফিসার ইনচার্জ (ওসি) সিরাজুল ইসলাম শেখ বলেন, নির্বাচন নিয়ে খুব ব্যস্ত আছি। তাই শ্রমিকদের সঙ্গে কথা হয়নি। আর মালিকপক্ষেরও কেউ আসেনি।