সারা বাংলা

মাদারীপুরে সিন্ডিকেটের কারসাজিতে বাড়ছে ডিমের দাম

মাদারীপুরে সিন্ডিকেটের কবলে পড়ে হু হু করে বাড়ছে ডিমের দাম। হিমাগারে মজুত করে কৃত্রিম সংকট দেখিয়ে ডিমের দাম হালিতে বাড়ানো হয়েছে ১২-১৫ টাকা।

মাদারীপুর জেলাজুড়ে শুধুমাত্র দুই জন বড় ব্যবসায়ীর হাতে জিম্মি ডিমের বাজার। এতে ক্ষুব্ধ সাধারণ ক্রেতারা।

তবে ব্যবসায়ীদের মতে, আমদানি কম হওয়ায় বেড়েছে ডিমের দাম। আর বাজার নিয়ন্ত্রণে গতানুগতিক আশ্বাস দিয়ে যাচ্ছে ভোক্তা অধিকার সংরক্ষণ অধিদপ্তর।

সরেজমিন ঘুরে জানা গেছে, পর্যাপ্ত মজুত থাকা সত্ত্বেও কৃত্রিম সংকট দেখিয়ে বাড়ানো হচ্ছে ডিমের দাম। হালিতে গত এক সপ্তাহের ব্যবধানে ডিমের দাম বেড়েছে ১২-১৫ টাকা পর্যন্ত।

শহরের বিসিক শিল্প নগরীর ভেতরেই মাদারীপুর হিমাগার। পর্যাপ্ত জায়গা খালি থাকায় মার্চ মাস থেকে ডিম মজুত শুরু করে ফড়িয়া ব্যবসায়ীরা।

অভিযোগ উঠেছে যে, শহিদুল ইসলাম ও জাহাঙ্গীর কাজী নামে দুই ব্যবসায়ী পুরো ডিমের বাজার অস্থির করে রেখেছেন। হিমাগারে ডিম মজুত রেখে সিন্ডিকেট করে বাড়িয়েছেন দাম। হঠাৎ ডিমের দাম বৃদ্ধিতে ক্ষুব্ধ ক্রেতা, বিপাকে খুচরা ব্যবসায়ীরাও।

ডিমের সংকট থাকায় বেড়েছে দাম। আর জেলায় কোনো ফার্ম না থাকায় এমন পরিস্থিতির সৃষ্টি হয়েছে বলে দাবি ফড়িয়া ব্যবসায়ীদের।

এদিকে হিমাগার কর্তৃপক্ষ জানিয়েছে, রমজান মাসে ডিমের দাম কম থাকায়, তখন থেকেই মজুত শুরু করে ব্যবসায়ীরা। পরে সুবিধা মতো আস্তে আস্তে বাজারে ছাড়ে ডিম।

অসাধু ডিম ব্যবসায়ীদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেওয়ার কথা জানিয়েছে, জাতীয় ভোক্তা অধিকার সংরক্ষণ অধিদপ্তর।

সংশ্লিষ্ট সূত্রে জানা গেছে, মাদারীপুর হিমাগারে বর্তমানে প্রায় ৫ লাখ ডিম মজুত রয়েছে বলে জানিয়েছেন কর্মকর্তারা। এক হালি ফার্মের ডিম পাইকারী বিক্রি হচ্ছে ৪৮-৫০ টাকা। যা খুচরা পর্যায়ে পৌঁছে ৫৫-৬০ টাকায়। এ ছাড়া দেশি মুরগি ও হাঁসের ডিমের দেখা নেই বাজারে।

রেস্টুরেন্ট ব্যবসায়ী হাবিবুর রহমান বলেন, হঠাৎ করেই ডিমের দাম বেড়ে গেছে। এখন মহাবিপদে পড়েছি আমরা। মাছ-মাংসের দাম বেশি, এখন ডিমেরও বেশি। ডিমের বাজারের সিন্ডিকেট ভেঙে দেওয়া উচিত।

আরিফুর রহমান নামে এক ক্রেতা বলেন, ডিমের বাজার চড়া। হঠাৎ ডিমের হালি ১০-১৫ টাকা বেড়েছে। এভাবে দাম বাড়তে থাকলে আমরা সাধারণ মানুষ কিভাবে ডিম কিনে খাবো।

শহরের পুরান বাজারের খুচরা ডিম ব্যবসায়ী রিয়াজুল ইসলাম বলেন, ডিমের বাজারে সিন্ডিকেট চলছে। বড় বড় ব্যবসায়ীরা হিমাগারে ডিম মজুত করে রেখেছে। ক্রেতাদের সাথে ডিমের দাম নিয়ে প্রতিনিয়তই ঝগড়া হচ্ছে। আমরাও চাই ডিমের দাম স্বাভাবিক থাকুক।

ফড়িয়া ডিম ব্যবসায়ী শহিদুল ইসলাম বলেন, মাদারীপুর জেলার কোথায়ও ডিমের ফার্ম নেই। এই ডিম পাবনা ও স্বরূপকাঠি থেকে কিনে আনতে হয়। সেক্ষেত্রে খরচ বেশি ও দামও বেশি পড়ে যায়।

সিন্ডিকেট করার কথা অস্বীকার করে তিনি বলেন, বর্তমানে ডিমের চাহিদা বেশি, সরবরাহ কম। তাই একটু দাম বেড়েছে। বাজারে পর্যাপ্ত ডিম পাওয়া গেলে, এই সংকট থাকবে না।

মাদারীপুর কোল্ড স্টোরেজ লিমিটেড’র ব্যবস্থাপক মো. আব্দুল করিম বলেন, দুই ব্যবসায়ীর ৪ লাখ ৬৮ হাজার ডিম হিমাগারে মজুত রয়েছে। আগে ৬ লাখ ডিম মজুত ছিলো। সুবিধা মতো দুই জন ব্যবসায়ী ডিম বাজারে আস্তে আস্তে ছাড়ে। ডিম তিন থেকে সাড়ে তিন মাস হিমাগারে ভাল থাকে। এরচেয়ে বেশি দিন হলে ডিম পচে যাওয়ার সম্ভাবনা থাকে।

মাদারীপুর জেলা প্রাণিসম্পদ কর্মকর্তা সুবোধ কুমার দাস বলেন, গরমের সময় ডিম বেশিদিন হিমাগারে রাখা ঠিক নয়। এতে ডিমের গুণাগুণ নষ্ট হয়।

জাতীয় ভোক্তা অধিকার সংরক্ষণ অধিদপ্তরের মাদারীপুরের সহকারী পরিচালক জান্নাতুল ফেরদৌস বলেন, অবৈধভাবে মজুত রেখে ডিমের দাম বাড়ানোটা অযৌক্তিক। প্রয়োজনে ভ্রাম্যমাণ আদালতের মাধ্যমে অসাধুদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেওয়া হবে।