৪২ বছর ধরে রোজা রাখা দিনমজুর ইনছান আলী (৮০) এবার পবিত্র হজ পালনে সৌদি আরব যাচ্ছেন। ইনছান আলীর হজে যাওয়ার খবরে খুশি স্বজনসহ প্রতিবেশীরা।
নয় সন্তানের জনক ইনছান আলী কুড়িগ্রাম সদর উপজেলার হলোখানা ইউনিয়নের সারডোব গ্রামের বাসিন্দা। ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের পরীক্ষা নিয়ন্ত্রক বাহালুল হক চৌধুরীর সার্বিক সহযোগিতায় আগামী ১০ জুন তার হজে যাওয়ার কথা রয়েছে।
স্থানীয়রা জানান, ইনছান আলী নিয়মিত পাঁচ ওয়াক্ত নামাজ আদায়ের পাশাপাশি ৪২ বছরে ধরে রোজা রাখেন। শুধু বছরের নির্দিষ্ট ৫ দিন রোজা রাখেন না তিনি।
ইনছান আলী বলেন, ‘গরীব ঘরে আমার জন্ম। পৈতৃক সূত্রে পাওয়া ১৪ শতক জমি ও বসতভিটা ছাড়া কিছু নেই। অভাব অনটনের মাঝেও কখনো রোজা ছেড়ে দেইনি। প্রথম দিকে রোজা রাখতে একটু কষ্ট হতো। পরে মহান আল্লাহর রহমতে সব ঠিক হয়ে যায়।’
তিনি বলেন, ‘৬ ছেলের মধ্যে ২ ছেলে মারা গেছে। বাকি ৪ জন বিয়ে করে আলাদা সংসার পেতেছে। তিন মেয়েকে বিয়ে দিয়েছি। ছেলেরা দিনমজুরি করে যা আয় করে তা থেকে কিছু দেয়। তা দিয়েই কোনমতে চলি।’
ইনছান আলী বলেন, ‘অভাবের সংসারে রোজা রাখতে অনেক সময় কষ্ট হতো। কত দিন যে গেছে, শুধু পানি খেয়ে রোজা রেখেছি। সেহরিতে খাবার না থাকায় মুড়ি, চিড়া কখনো কচু গাছ সেদ্ধ করে খেয়েছি। কিন্তু যত কষ্টই হোক রোজা ছাড়িনি। ইফতারে কখনো পানি, আবার কখনো গাছের পাতা চিবিয়ে খেতাম। খোদার কাছে চোখের পানি ছেড়ে বলতাম, আল্লাহ আমাকে যতদিন হায়াত দিয়েছেন আমি যেন ততদিন রোজা রাখতে পারি।’
তিনি আরও বলেন, ‘নামাজ পড়ে সবসময় আল্লাহর কাছে বলতাম, আল্লাহ আমাকে হজ করার তৌফিক দিন। আমার নিজের তো হজের খরচ বহন করার সামর্থ্য নেই। ছেলেরা যে পাঠাবে তাদেরও সেই সামর্থ্য নাই। আল্লাহ আমার দোয়া কবুল করেছেন। তার অসীম কুদরতে আমার হজে যাওয়ার উছিলা হিসেবে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের পরীক্ষা নিয়ন্ত্রক বাহালুল হক চৌধুরীকে পাঠিয়েছেন। সহৃদয়বান ওই ব্যক্তির সহযোগিতায় আগামী মাসের ১০ তারিখ পবিত্র হজ পালনের উদ্দেশ্যে রওয়ানা দিব ইনশআল্লাহ।’
ইনছান আলীর প্রতিবেশী নজরুল ইসলাম বলেন, ‘ছোটবেলা থেকে দেখছি, ইনছান আলী চাচা প্রতিদিন রোজা রাখেন। তিনি অত্যন্ত ধার্মিক মানুষ। এক ওয়াক্ত নামাজ কাজা করেন না। চাচা দেখা হলেই হজে যাওয়ার কথা বলতেন। আল্লাহ ওনার নিয়ত কবুল করেছেন।’
স্থানীয় একটি বিদ্যালয়ের শিক্ষক আমিনুল ইসলাম বলেন, ‘অভাব অনটনের সংসারে থেকেও ইনছান আলী কখনো ধর্ম বিমুখ হননি। টানা ৪২ বছর ধরে তিনি রোজা রাখছেন। তার হজে যাওয়ার জন্য যিনি ব্যবস্থা করেছেন আমরা এলাকাবাসী তার কাছে কৃতজ্ঞ। আল্লাহ যেন তাকে বেহেশত নসিব করে সে কামনা করছি।’