গবেষণা প্রকল্পের অর্থায়নে মাটি পরীক্ষা করে ধানের আবাদ করে লাভবান হয়েছেন টাঙ্গাইলের মধুপুর উপজেলার মহিষমাড়া ইউনিয়নের জয়নাতলী গ্রামের কৃষক মো. সাইফুল ইসলাম। সুষম মাত্রায় সারের প্রায়োগিক পরীক্ষায় অংশ নিয়ে ধানের আবাদে তার ফলন বেড়েছে ২৫ ভাগ। তাকে দেখে অন্য কৃষকেরাও মাটি পরীক্ষা করে সার প্রয়োগ করার প্রতি আগ্রহী হচ্ছেন। এতে যেমন সারের অপচয় রোধ হবে, একইভাবে বাড়বে ফলনও।
জানা যায়, মৃত্তিকা গবেষণা ও গবেষণা সুবিধা জোরদারকরণ প্রকল্পের অর্থায়নে মধুপুর উপজেলার মহিষমাড়া জয়নাতলী গ্রামের কৃষক সাইফুল ইসলামের ৩০ শতাংশ জমিতে ব্রি ধান-৮৯ আবাদ করা হয়। সুষম মাত্রায় সার প্রয়োগ করা সেই জমির ধান কর্তন এবং মাড়াই শেষে পরিমাপ করে দেখা যায়, ফলন অন্তত ২৫ ভাগ বেশি হয়েছে। যারা নিজেদের মতো করে জমিতে সার দিয়েছেন, তাদের জমিতে ফলন হয়েছে অনেক কম।
কৃষক সাইফুল ইসলাম বলেন, আমি ৩০ শতাংশ জমিতে মাটি পরীক্ষা করে আবাদ করেছি। জমিতে আগের তুলনায় এবছর সারের খরচ কম হয়েছে। ফলনও বৃদ্ধি পেয়েছে। জমিতে বিষের পরিমাণও কম পড়েছে। জমিতে ২০ থেকে ২৫ ভাগ ফলন বেশি হয়েছে।
কৃষক জাহিদুল ইসলাম বলেন, আমরা ফসল উৎপাদন করি। আমরা মাটির গুণাগুণ না জেনে ফসল উৎপাদন করি। এখন আমাদের কৃষি কর্মকর্তারা এসে মাটির গুনাগুণপরীক্ষা করে দেখছে। মাটি পরীক্ষার পরে জমিতে আবাদ করে দেখছি আমাদের খরচ কম হয়েছে। মাটি পরীক্ষা ছাড়া ফসল আবাদে আমাদের খরচ বেশি হয়েছে।
টাঙ্গাইল মৃত্তিকা সম্পদ উন্নয়ন ইনস্টিটিউটের প্রধান বৈজ্ঞানিক কর্মকর্তা ড. উৎপল কুমার বলেন, মধুপুর উপজেলার মহিষমাড়া জয়নাতলী গ্রামে একজন কৃষকের ৩০ শতাংশ জমিতে মাটি পরীক্ষা করে সার সুপারিশ করেছি। পাশাপাশি আরেকটি জমিতে কৃষক তার নিজস্ব জায়গায় আবাদ করেছেন। আমরা যেটা দেখছি, মাটি পরীক্ষা করে যে আবাদ করেছি এখানে প্রায় ১৫ থেকে ২৫ ভাগ সার কম লেগেছে। সারের অপচয় কম হয়েছে। ফলন প্রায় ২০ থেকে ৩০ ভাগ বৃদ্ধি পেয়েছে। এই জমিতে ব্রি ধান-৮৯ আবাদ করা হয়েছিল। লক্ষ্যমাত্রার চেয়ে বেশি ধান হয়েছে।
তিনি আরও বলেন, আমার যে প্রেসক্রিপশন সিস্টেমে যাই, এটা আমরা স্মার্ট প্রেসক্রিপশন বলছি যেখানে আমরা মাটি পরীক্ষা করে সার দিচ্ছি। অন্যদিকে, আমরা রোগ ও পোকামাকড় দমনের জন্য যে প্রেসক্রিপশন দরকার সেটা কৃষকদের করে দিচ্ছি। এর ফলে ১৫ থেকে ২০ ভাগ সারের অপচয় কম হচ্ছে। বালাইনাশকের ব্যবহার অর্ধেকে নেমে এসেছে। যদি সারা বাংলাদেশে আমরা এ পদ্ধতি বাস্তবায়ন করতে পারি তাহলে বছরে সার ও কীটনাশক বাবদ প্রায় ২০ হাজার কোটি টাকা সাশ্রয় করতে পারবো। এখন যে খাদ্যশস্য উৎপাদন হয় তার চেয়ে প্রায় ১ কোটি মেট্রিক টন খাদ্যশস্য সারা বাংলাদেশে বেশি উৎপাদন হবে।