বঙ্গোপসাগর থেকে ধেয়ে আসা প্রবল ঘূর্ণিঝড় রেমালের ভয়ে খুলনার উপকূলীয় এলাকার মানুষের মধ্যে আতঙ্ক বিরাজ করছে। ঘূর্ণিঝড়ের প্রভাবে রোববার (২৬ মে) সকাল থেকে উপকূলীয় উপজেলা দাকোপ, কয়রা, পাইকগাছা ও বটিয়াঘাটার মানুষদের মধ্যে আতঙ্ক বিরাজ করছে। দুপুরের পর থেকে উপকূলীয় এলাকার মানুষেরা আশ্রয়কেন্দ্রে যাওয়া শুরু করেছে। আশ্রয়কেন্দ্রগুলোতে ৩ লাখ ৩৫ হাজার মানুষ আশ্রয় নিতে পারবে।
সকাল থেকে দাকোপ, কয়রা, পাইকগাছা ও বটিয়াঘাটা উপজেলার মানুষকে নিরাপদ আশ্রয়ের জন্য আশ্রয়কেন্দ্রে যাওয়ার জন্য মাইকিং করা হয়।
দাকোপ উপজেলার সুন্দরবন সংলগ্ন পুরো ছুতারখালী ইউনিয়ন ঝুঁকিপূর্ণ। এছাড়া কয়রা ও পাইকগাছা উপজেলার বিভিন্ন নদ-নদীর ৫১ কিলোমিটার বেড়িবাঁধ ঝুঁকিপূর্ণ অবস্থায় রয়েছে।
কয়রা উপজেলার গোবরা গ্রামের বাঁধের পাশে বসবাসকারী আখতারুজ্জামান ও বিল্লাল হোসেন জানান, আইলার সময় ঘাঁটাখালী বাঁধ ভেঙে যাওয়ায় তাদের বসতবাড়ি নদীগর্ভে বিলীন হয়ে যায়। এরপর প্রায় দুই মাস আশ্রয়কেন্দ্রে থাকেন। সেখান থেকে বাঁধের উপরে ঝুপড়ি বেঁধে বসবাস শুরু করেন। একপর্যায়ে জনপ্রতিনিধিদের কথায় বাঁধের স্লোবে পুনরায় ঘর তৈরি করে বসবাস করছেন। আইলার ১৫ বছর পরও তারা নিজ ঠিকানায় ফিরতে পারেননি। সেখানে বাঁধের পাশে প্রায় শতাধিক পরিবার রয়েছে। তারা ঘূর্ণিঝড় রেমালের ১০ নম্বর সংকেত শোনার পর আতঙ্কে রয়েছেন।
কয়রা উপজেলার দক্ষিণ বেদকাশি ইউনিয়নের চেয়ারম্যান মো. আছের আলী মোড়ল জানান, তার ইউনিয়নের ঘড়িলাল থেকে চরামুখা খেয়াঘাট এবং খেয়াঘাট থেকে হলদিবুনিয়া পর্যন্ত বেড়িবাঁধ বেশি ঝুঁকিপূর্ণ।
খুলনা পানি উন্নয়ন বোর্ডের-২ (পাউবো) নির্বাহী প্রকৌশলী আশরাফুল আলম জানান, কয়রা, পাইকাছা ও দাকোপ উপজেলার ১২ কিলোমিটার বেড়িবাঁধ ঝুঁকিপূর্ণ ছিল। সেগুলো সংস্কার করা হয়েছে। তবে যদি জোয়ারের সময় ঘূর্ণিঝড় রেমাল আঘাত হানে তাহলে জোয়ারের তাণ্ডবে ও জলোচ্ছ্বাসের কারণে অনেক জায়গার বেড়িবাঁধ ভেঙে যাওয়ার আশঙ্কা রয়েছে।
খুলনা জেলা ত্রাণ ও পুনর্বাসন কর্মকর্তা আব্দুল করিম জানান, রোববার সকাল ১১টার মধ্যে ঝুঁকিপূর্ণ উপকূলীয় এলাকার ৪৭ হাজার মানুষ আশ্রয়কেন্দ্রে আশ্রয় নেয়। তাদের জন্য পর্যাপ্ত পরিমাণ, চিড়া, মুড়ি, গুড় পানিসহ শুকনা খাবারের ব্যবস্থা করা হয়েছে। এছাড়া ৮০টি মেডিকেল টিম গঠন করা হয়েছে। এরমধ্যে ৪৬টি টিম মাঠে কাজ করছে।
তিনি জানান, দুর্যোগপ্রবণ উপকূলীয় এলাকার মানুষের জন্য গত শনিবারের (২৫ মে) মধ্যে ৬০৪টি আশ্রয়কেন্দ্র প্রস্তুত করা হয়। এছাড়া ৩টি মুজিব কিল্লা ও ৫ সহস্রাধিক স্বেচ্ছাসেবক কাজ করছে। পাশাপাশি বিভিন্ন বেসরকারি সংস্থার (এনজিও) স্বেচ্ছাসেবকরাও উপকূলীয় এলাকায় কাজ করছে।
খুলনা আবহাওয়া অফিসের সিনিয়র আবহাওয়াবিদ আমিরুল আজাদ জানান, খুলনায় দুপুর ৩টার পর থেকে ঝড়ো হাওয়ার সঙ্গে বৃষ্টিপাত শুরু হয়েছে। তবে এর আগে সকাল ৬টা থেকে ৯টা পর্যন্ত ১ মিলিমিটার বৃষ্টিপাত হয়।
খুলনা জেলা প্রশাসক খন্দকার ইয়াসির আরেফীন জানান, ঘূর্ণিঝড় রেমাল মোকাবিলার খুলনা জেলা প্রশাসনের পক্ষ থেকে সব ধরনের প্রস্তুতিমূলক ব্যবস্থা নেওয়া হয়েছে।