সারা বাংলা

রেমালের তাণ্ডবে গোপালগঞ্জে ভেসে গেছে ৬৬৬ মে. টন মাছ 

গোপালগঞ্জের টুঙ্গিপাড়া উপজেলার তাড়াইল গ্রামের দীনবন্ধু গাইন। সংসারে রয়েছে স্ত্রী ও দুই ছেলে-মেয়ে। ছেলে অনার্স পড়ছে আর মেয়ে এবার এইচএসসি পাস করেছে। সংসারের আর্থিক অটন কাটাতে এ বছর ধার করে ৩০ বিঘা ঘেরে মাছের চাষ করেন। কিন্তু ঘূর্ণিঝড় রেমালের তাণ্ডবে জলোচ্ছ্বাসে ঘের ভেসে যাওয়ায় এখন সর্বস্বান্ত তিনি। ধার কীভাবে দেবেন সেই চিন্তায় দিন কাটছে তার।

দীনবন্ধু গাইন বলেন, ‘সংসারের অভাব অনটন কাটাতে এ বছর ৩০ বিঘা ঘেরে মাছের চাষ করি। ভেবেছিলাম এই মাছ অন্তত ৩০ থেকে ৩৫ লাখ টাকায় বিক্রি হবে। লাভ হবে প্রায় ১০ লাখ টাকার মতো। কিন্তু মাছের ঘের ভেসে যাওয়ায় এই স্বপ্ন এখন শেষ। স্ত্রী-সন্তান নিয়ে কীভাবে দিন কাটবে, সেই চিন্তায় এখন দিন কাটছে আমার।’ শুধু দীনবন্ধু নয় তার মতো একই অবস্থা টুঙ্গিপাড়া ও সদর উপজেলার অন্তত তিন শতাধিক মাছ চাষির। 

জেলা মৎস্য অফিস সুত্রে জানা গেছে, ঘূর্ণিঝড় রেমালের তাণ্ডবে গোপালগঞ্জের সদর, টুঙ্গিপাড়া ও কোটালীপাড়া উপজেলার মাছের ঘের ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। এতে ৭৩ হেক্টর জমির ৩৪২টি পুকুর, ৫২৯ হেক্টর জমির ১ হাজার ১৫৫টি ঘের ক্ষতিগ্রস্ত হয়। এতে ৬৬৬ মেট্রিক টন মাছ ভেসে গেছে। এর মধ্যে চিংড়ি ৬৮ দশমিক ৫১ মেট্রিক টন, পোনা ২৯ লাখ পিস ও চিংড়ি পিএল ৬ দশমিক ৩১ লাখ পিস রয়েছে। এতে চাষিদের অন্তত ১৭ কোটি ১৭ লাখ টাকার ক্ষতি হয়েছে।   

আজ মঙ্গলবার (২৮ মে) সরেজমিন টুঙ্গিপাড়া উপজেলার তারাই গ্রামে গিয়ে দেখা যায়, মাছের ঘের পাড়ে মাথায় হাত দিয়ে বসে আছেন দীনবন্ধু। পলক দৃষ্টিতে ঘেরের দিকে তাকিয়ে রয়েছেন তিনি। ঘূর্ণিঝড় রেমালের প্রভাবে তারাইল গ্রামের শতাধিক মৎস্য চাষির ঘের তলিয়ে যায়। এতে ভেসে যায় সাদা মাছ, চিংড়িসহ বিভিন্ন প্রজাতির মাছ। অনেকে ঘেরে নেট দিয়ে বাঁধ দিয়েও মাছ ভেসে যাওয়া ঠেকাতে পারেননি। আর কয়েক দিন বাদে এসব মাছ বিক্রির জন্য ঘের থেকে উঠানো হতো। 

তাড়ালই গ্রামের ভবসিন্ধু গাইন বলেন, ‘আমার সংসারে স্ত্রী, এক ছেলে ও এক মেয়ে রয়েছে। সংসারের অভাব কাটাতে ১৭ বিঘা ঘেরে সাদা মাছ চিংড়িসহ বিভিন্ন প্রজাতির মাছের চাষ করি। মাছের যে সাইজ হয়েছে, তা ২৫ লাখ টাকায় বিক্রি করতে পারতাম। এতে আমার অন্তত ৮ থেকে ১০ লাখ টাকা লাভ হতো। কিন্তু ঘূর্ণিঝড় রেমাল সব আমার শেষ করে দিলো। ধার করে মাছের চাষ করেছিলাম। এখন এই ধার কীভাবে শোধ করব, সেই চিন্তায় দিন কাটছে আমার। এখন পরিবার-পরিজন নিয়ে না খেয়ে দিন কাটাতে হবে।’ 

অরবিন্দু গাইন ও অর্চনা গাইন বলেন, ‘পরিবারের অভাব কাটাতে মাছ চাষ করেছিলাম। কিন্তু এখন লাভ তো দূরের কথা, ধার কীভাবে শোধ করব তা চিন্তা করে পারছি না। কিছু বুঝে ওঠার আগেই রেমালের তাণ্ডবে মাছের ঘের ভেসে যায়। এখন আমার ঘেরে ১০ হাজার টাকার মাছও পাওয়া যাবে না।’ 

অপর মাছ চাষি অমৃত গাইন ও খোকন গাইন বলেন, নিজেদের জমানো টাকা ও ব্যাংক থেকে লোন নিয়ে লাভের আশায় মাছ চাষ করেন। ঘূর্ণিঝড়ের তাণ্ডবে মাছের ঘের ভেসে যাওয়ায় যে লাভের আশা করেছিলেন, সেই স্বপ্ন শেষ। 

গোপালগঞ্জ জেলা মৎস্য কর্মকর্তা বিজন কুমার নন্দী বলেন, ঘূর্ণিঝড় রেমালের তাণ্ডবে গোপালগঞ্জের সদর, টুঙ্গিপাড়া ও কোটালীপাড়া উপজেলার ৩৪২টি পুকুর ও ১ হাজার ১৫৫টি ঘের ক্ষতিগ্রস্ত হয়। এতে চাষিদের অন্তত ১৭ কোটি ১৭ লাখ টাকার বেশি ক্ষতি হয়েছে। ক্ষতিগ্রস্ত মৎস্য চাষিদের তালিকা তৈরি করে মন্ত্রণালয়ে পাঠানো হবে। কোনো অনুদান পেলে তার বিতরণ করা হবে।