মিতা খাতুন এবারের এসএসসি পরীক্ষায় মাগুরার মহম্মদপুর উপজেলা সদরের মাধ্যমিক বালিকা বিদ্যালয়ের বিজ্ঞান বিভাগ থেকে জিপিএ ৫ পেয়েছে।
মিতার বাবা ভ্যানচালক কুদ্দুস শেখ জানেন না তার মেয়ে কি রেজাল্ট করেছে। একজন পথে ডেকে বললেন, কুদ্দুস তোমার মেয়ে জিপিএ ৫ পেয়েছে। জিপিএ ৫ ভালো না মন্দ তা-ও জানেন না কুদ্দুস শেখ। পরে সবাই বলেছে তোমার মেয়ে এসএসসি ভালো ফল করেছে। তখন কুদ্দুসের চোখে অশ্রু। এ অশ্রু আনন্দের।
মিতাদের বাড়ি মহম্মদপুর উপজেলা সদরের গোপালনগর গ্রামে।
দরিদ্র ভ্যানচালক কুদ্দুস শেখ মেয়ের ভালো ফল নিয়ে খুশি হলেও এখন পড়ে গেছেন দুশ্চিন্তায়। তার আর কোনো আয় উপার্জন নাই। সারাদিন যা আয় করেন তা দিয়ে খাবারের টাকাই জোটে না। মেয়ের কলেজ ভর্তি ও পড়ালেখার খরচ নিয়েই এ দুশ্চিন্তা তার।
কুদ্দুস শেখ বলেন, দুই মেয়ে এক ছেলের মধ্যে মিতা দ্বিতীয়। বড় মেয়ে মুন্নী খাতুন এসএসসি পাস করার পর দারিদ্র্যতার কারণে বিয়ে দিয়ে দিয়েছেন। ছোটো ছেলে ইউসুফ শেখ স্থানীয় একটি স্কুলে সপ্তম শ্রেণিতে পড়ে। মিতাকে পড়ালেখা করাতে চান। দারিদ্রতাই এখন বড় বাধা। মেয়ের পড়ালেখা চালিয়ে নিতে সবার সহযোগিতা চান কুদ্দুস শেখ।
মিতা খাতুন জানায়, শত অভাব ও কষ্ট ডিঙিয়ে সে পড়তে চায়। ভবিষ্যতে সে ডাক্তার হতে চায়। স্কুল ও তার স্বপ্নপূরণ করতে যত প্রতিবন্ধকতাই থাকনা কেন - সে সামনের দিকে এগিয়ে যেতে চায়। এজন্য সে সবার কাছে সহযোগিতা চায়।
মিতা তার স্কুলের প্রধান শিক্ষক সমীর কুমার দাস, সহকারী প্রধান শিক্ষক ইকবাল আহম্মেদ কবি ও সহকারী শিক্ষক (ইংরেজি) পবিত্র কুমার সাহার প্রতি কৃতজ্ঞতা প্রকাশ করে।
মিতার মা আমেনা খাতুন বলেন, ওদের মুখে তিনবেলা খাবারই তুলে দিতে পারিনা। মেয়েটি রাতদিন পড়া লেখা করে। তার স্বপ্নপূরণ করতে সবাই একটু খেয়াল করবেন।
মহম্মদপুর মাধ্যমিক বালিকা বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক সমীর কুমার দাস বলেন, মিতা খাতুন অদম্য মেধাবী। তার শত সমস্যা কষ্ট পার করে এসএসসিতে ভালো ফল করায় আমরা দারুণ খুশি। সে অন্যদের জন্য দৃষ্টান্ত ও অনুপ্রেরণা হতে পারে।
মহম্মদপুর উপজেলা নির্বাহী অফিসার (ইউএনও) পলাশ মন্ডল বলেন, দারিদ্র জয়ী মিতা খাতুনের সাফল্যের খবর পেয়ে তাকে আমরা আর্থিক সহায়তা প্রদান করেছি। তার স্বপ্ন পূরণে সমাজের বিত্তবানরা এগিয়ে আসবেন বলে আশা করি।