কোরবানির ঈদে বিক্রির জন্য ১৩৩০ কেজি ওজনের মহিষ প্রস্তুত করেছে ঢাকার সাভারের কাইয়ুম এগ্রো নামে এক খামারি প্রতিষ্ঠান। উপজেলার শ্রীপুর গণকবাড়ি এলাকায় পালন করা এ মহিষটি এরইমধ্যে নজর কেড়েছে সবার। বিশ্বে বড় জাতের হিসেবে পরিচিত জাফরাবাদি জাতের অন্তত ৬০টি মহিষ রয়েছে এ খামারে।
খামার কর্তৃপক্ষ জানায়, আসন্ন ঈদকে কেন্দ্র করে বিক্রির জন্য ২০০টি মহিষ প্রস্তুত করা হয়েছিল। যার বেশির ভাগই এরইমধ্যে বিক্রি হয়ে গেছে।
সম্প্রতি খামারে গিয়ে দেখা মেলে একটি বিশালাকার মহিষের। খামারিরা এটির নাম দিয়েছেন, ‘পাঠান’। বর্তমানে এটির ওজন ১৩৩০ কেজি। তাদের ধারণা, উচ্চ মূল্যে বিক্রি হবে এই মহিষ।
জানা যায়, শখ থেকে নয় বছর আগে সাত বিঘা জমিতে কাইয়ুম এগ্রো খামার গড়ে তোলা হয়। শুরুতে এতে শুধু গরু ছাগল থাকলেও এখন পালন করা হচ্ছে মহিষ ও দুম্বা। তাদের দাবি, সবচেয়ে বেশি মহিষ রয়েছে তাদের খামারে।
প্রতিষ্ঠানের মালিক মো. আব্দুল কাইয়ুম জানান, দেশের অনেক জায়গায় মহিষ পালন করা হয়। তবে আমাদের এখানে সম্ভবত খামারি হিসেবে সবচেয়ে বেশি মহিষ রয়েছে। আমাদের খামারে ২০০-র মতো মহিষ বিক্রির জন্য প্রস্তুত ছিলো।
তিনি বলেন, মহিষের রোগ-ব্যাধি কম। এছাড়াও মাংসে গরুর চেয়ে ক্ষতিকর খাদ্য উপাদান কম আছে। আর তাই অনেকেই এখন মহিষের মাংসের দিকে ঝুকেছে। এছাড়া মহিষের খরচের তুলনায় বিক্রিতে লাভ থাকে বেশি।
তিনি আরো বলেন, খামারে ওজন স্কেল বসানো হয়েছে। ক্রেতারা এসে ওজন করে মহিষ কেনেন। ৩০০ থেকে ৬০০ কেজির মহিষগুলো বিক্রি হয় প্রতি কেজি ৪৩০-৫৫০ টাকায়। তবে এর চেয়ে বড় আকারের মহিষ ওজনে বিক্রি হয় না। সেগুলো দামাদামি করেই বিক্রি হয়।
বড় আকারের মহিষ পাঠানের বিষয়ে তিনি বলেন, তিন বেলা প্রায় ৩০-৪০ কেজি করে খাবার খায় এটি। দিনে ৫-৬ বার গোসল করানো হয়। শরীরে যাতে চামড়া না ফেটে যায় এজন্য একদিন পরপর সরিষার তেল মালিশ করা হয়। একই ভাবে প্রত্যেকটি পশুকেই এখানে যত্ন নিয়ে পালন করা হয়।
খামার সূত্র বলছে, এই খামারের পশু কেনা যায় অনলাইনেও। আর ঢাকার আশেপাশের এলাকায় দেওয়া হয় ফ্রি ডেলিভারি। গরু বা মহিষের দুধের পাশাপাশি ঘি ও সরিষার তেল বিক্রি করে প্রতিষ্ঠানটি। প্রতিদিন স্থানীয় ক্রেতারা এসে দুধ কিনে নিয়ে যান।
২০২৩ সালে বিবিএসের শুমারি অনুযায়ী, ২০১৩ সালে দেশে মহিষের সংখ্যা ছিল ১৪ লাখ ৫৭ হাজার। বর্তমানে এর সংখ্যা বেড়ে দাঁড়িয়েছে ১৫ লাখ ১৬ হাজার। গত দশ বছরে বেড়েছে ৫৯ হাজার। ২০১৭ সালে ১৪ লাখ ৭৯ হাজার মহিষ ছিল এদেশে। উন্নতি হয়েছে ২০২০ সালে। ২০১৯ সালে ১৪ লাখ ৯৩ হাজার মহিষ, ২০২০ সালে বেড়ে ১৫ লাখ হয়েছে মহিষের সংখ্যা।
খামারিরা বলছেন, ধীরে ধীরে মহিষের সংখ্যা বাড়ছে। মহিষের রোগ বধীও কম হয়, গরুর চেয়ে কম মানের খাবার খেয়েও তারা ভালো থাকে। তাই খামারিরাও ঝুঁকছে। গরুর পাশাপাশি আমিষের খুব ভালো একটি উৎস মহিষ।
বাংলাদেশ প্রাণিসম্পদ গবেষণা ইন্সটিটিউটের মহিষ উৎপাদন গবেষণা বিভাগের প্রধান বৈজ্ঞানিক কর্মকর্তা ও বিভাগীয় প্রধান ড. গৌতম কুমার দেব বলেন, দেশে মহিষের চাহিদা বেড়েছে। মহিষের মাংসের দাম কম। আবার এটি স্বাস্থ্যকরও। ফলে সবাই মহিষ চাষের দিকেই ঝুঁকছে।